শিক্ষার্থীর সারাজীবনের অর্জন তার সার্টিফিকেট। সেই সার্টিফিকেট ও মূল্যবান জিনিসপত্রসহ সবকিছু সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে তুলে দিয়েছে বাড়িওয়ালা ও হোস্টেল মালিক। যখন জানতে পারলাম সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় চলে আসি। এসে দেখি জিনিসপত্র কিছুই নেই। সার্টিফিকেট আর মূল্যবান সব জিনিসপত্র হারিয়ে এভাবেই অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্ণনা দিচ্ছিলেন ঢাকা কলেজের স্নাতক শেষবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ সজীব।
দীর্ঘ চারবছর ধরে রাজধানীর কলাবাগান এলাকার ৪/এ, ওয়েস্টার্ন স্ট্রিটের রুবী ভবনের নিচতলায় থাকতেন তিনি। শুধু সজীব নয়, মেসে থাকার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, ল্যাপটপসহ শিক্ষাজীবনে অর্জিত মূল্যবান সব সার্টিফিকেট হারিয়েছেন একই ফ্ল্যাটে থাকা আরও ৮ শিক্ষার্থী। আর অভিযুক্ত বাড়িওয়ালার নাম মুজিবুল হক ওরফে কাঞ্চন। অন্যদিকে আলিফ হোস্টেলে থাকা ১৩০ জন শিক্ষার্থী সার্টিফিকেট আর মূল্যবান সব জিনিসপত্রও ফেলে দেন হোস্টেল কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীতে এ ধরনের পৃথক দু’টি ঘটনায় কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় পূর্ব রাজাবাজার এলাকার আলিফ হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে রিমান্ড চেয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত বাড়িওয়ালা মুজিবুল হক ওরফে কাঞ্চনকে গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ।
কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ কুমার জানান, গতকাল খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করার পর এক ছাত্রের করা মামলায় রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের বেশি কিছু মালামাল খোরশেদের বাসা থেকে উদ্ধার হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খোরশেদসহ আরও কেউ শিক্ষার্থীদের মালামালগুলো চুরি করে নিয়ে যায় এবং কিছু মালামাল ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। একই অভিযোগে আরেক ছাত্রের মামলায় মুজিবুল হক নামে আরেক বাড়িওয়ালাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।
মামলার বরাত দিয়ে ওসি পরিতোষ জানান, আলিফ হোস্টেলে ১৩০ জন শিক্ষার্থী ও মুজিবুলের মালিকানাধীন কলাবাগানের ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ট্রিটের রুবি ভবনের আরও আট শিক্ষার্থী ভাড়া থাকেন। ওই শিক্ষার্থীরা করোনা মহামারীর ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন তাদের সার্টিফিকেট ও মালামাল ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় হোস্টেল কর্তৃপক্ষ ও বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে সজিব মিয়া ও সোয়ান মিয়া গত বৃহস্পতিবার রাতে পৃথক মামলা করেন।
ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের এসি আবুল হাসান বলেন, ঘটনার বিষয়ে মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত বাড়ির মালিককে ধরতে তার বাসায় অভিযান চালিয়েছি। আসামিকে পাওয়া যায়নি। তবে চেষ্টা চলছে। আসামি গ্রেফতারে একাধিক পুলিশের টিম কাজ করছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়েই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর জিনিসপত্রসহ ফ্ল্যাটে ব্যবহৃত সবকিছু বাসা থেকে বের করে তুলে দেয়া হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়িতে। আর কাজটি করেছেন বাড়িওয়ালা মুজিবুল হক ওরফে কাঞ্চন। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকা থেকে ফ্ল্যাটে চলে এলেও ঢুকতে পারেননি তারা। পাননি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও।
ভুক্তভোগী সজীব সাংবাদিকদের বলেন, গত মার্চের ৫ তারিখ পর্যন্ত রুবী ভবনের ভাড়া পরিশোধ করে আমরা বাড়ি চলে যাই। এরপর বাড়িওয়ালার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি বিল বাবদ আরও ১৫ হাজার টাকা মোবাইলে পাঠাই। বাকি টাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে ঢাকায় এসে পরিশোধ করার কথা ছিল। টাকা পাঠানোর পরেই বাড়িওয়ালা আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে জানতে পারি আমাদের মালামাল সব ফেলে দেয়া হয়েছে। ঢাকায় ফিরে কিছুই আর অবশিষ্ট পাইনি। আমাদের সার্টিফিকেটসহ জিনিসপত্রগুলো ফেরত চাই, আমরা এর বিচার চাই। বাড়িওয়ালার এমন অমানবিক আচরণে ভুক্তভোগীর তালিকায় রয়েছেন উচ্চমাধ্যমিকের চার পরীক্ষার্থীও। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সঙ্গে এই শিক্ষার্থীদের খোয়া গেছে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড। এখন পরীক্ষায় অংশ নেয়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন