শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ভোলায় নদী ভাঙনের মুখে গৃহহীন ও নিঃস্ব হয়ে পরছে শতশত পরিবার, স্থাপনা

উন্নয়নের সুফল বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে

ভোলা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০২০, ৪:০৭ পিএম

নদীমাতৃক জেলা ভোলা। ভোলার চার দিকে নদী হওয়ায় এ জেলার মানুষের আতঙ্কের মধ্যেই দিন কাটে। নদী ভাঙ্গনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে অসহায় হয়ে পরছে শতশত পরিবার। সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া কম হয়নি এ জেলায়। নদী বেশ্টিত এ জেলায় নদীনালা ভাঙ্গনের কারনে উন্নয়নের সুফলগুলো বেশিরভাগই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এমনটাই দেখা যায় ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া,বোরহানউদ্দিন, মনপুরা, লালমোহন,সহ ভোলা জেলার বিভিন্ন স্থানে। ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে পাশ দিয়েই বহমান তেতুলিয়া নদীর ভাঙ্গনের কারনে। এই তেতুলিয়া নদীর তীরবর্তী ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট হইতে চর চটকিমারা খেয়ার ঘাট পর্যন্ত প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ নদী ভাঙনের তান্ডব চলতে থাকে। দীর্ঘ ১৫ বছরের ও বেশি সময় ধরে তেতুলিয়ার ভাঙ্গন তান্ডব অব্যাহত রয়েছে। সংস্কার না হওয়ায়, বড় হচ্ছে তেতুলিয়া নদী। দিন দিন ছোট হয়ে আসছে ভেদুরিয়া এলাকা।ইতিমধ্যে এখানকার অসহায় মানুষগুলো হারিয়েছে তাদের বসতভিটাসহ আবাদি জমি।বর্তমানে নদীর তীরবর্তী যে সব পরিবার বসবাস করছে তাদের দিন কাটাচ্ছে চরম আতংকের মধ্যে। তেতুলিয়া নদীর ভাঙ্গনের ফলে, নদী সংলগ্ন রাস্তা, মসজিদ, বসতবিটা ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন এর পথে। অনেক পরিবার নদীগর্ভে সহায় সম্পত্তি হারিয়ে অসহায়ত্বের জীবন যাপন করছে। কান্নাজড়িত কন্ঠে স্থানীয় এক মুরুব্বী বলেন নদীগর্ভে বিলিন হয়ে আমারা আজ পথের ভিখারী।
৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ তেঁতুলিয়ার ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।স্থায়ীভাবে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়ায় বর্তমানে ভেদুরিয়া ইউনিয়ন হুমকির মুখে। তিনি বলেন আমাদের ভোলা জেলার অভিভাবক সাবেক বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপির মাধ্যমে এ জেলার উন্নয়ন করেছেন। এখানে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ব্যাংকের হাটে টেক্সটাইল কলেজ সহ রয়েছে একটি গ্যাস কূপ।যা এখন নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে। কিন্তু এ উন্নয়নের সুফল আস্তে আস্তে কেড়ে নিচ্ছে রাক্ষসী তেতুলিয়া নদী। বর্তমানে তেঁতুলিয়ার ভাঙ্গন আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অসহায় মানুষগুলো সহায় সম্পত্তি হারিয়ে অসহায়ত্বের জীবন যাপন করছে। এলাকাবাসীর জোড় দাবী তেতুলিয়া নদীর ভাঙ্গনকে স্থায়ীভাবে বাধেন মাধ্যমে বন্ধ করে ভেদুরিয়া বাসিকে রাক্ষসী তেতুলিয়ার হাত থেকে রক্ষা করার।এদিকে মনপুরার চর জতিন অংশেও ভাঙ্গনের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাছাড়া তুলাতুলিতে পূর্বে ভাঙ্গন প্রকোপ বেশী থাকলেও এখন অনেকটা কম।তবে চর জতিন এলাকায় ভাঙ্গনের ফলে স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে চলতি বর্ষায় মেঘনার ভাঙনের মুখে পড়েছে ভোলার বোরহানউদ্দিনের ঐতিহ্যবাহি হাকিমুদ্দিন বাজারসহ গুরুপ্তপূর্ণ স্থাপনা। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকেই অসহায় হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ আবার অন্যত্র চলে গেছেন আবার ভাঙনের মুখেও রয়েছে শত শত পরিবার। এতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েছে পড়েছে অসহায় পরিবারগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শত বছরের পুরনো হাকিমুদ্দিন বাজারটি কিছুদিন আগেও জাকজমকপূর্ণ ছিল। কিন্তু বর্তমানে সর্বনাশা মেঘনার ভাঙনের মুখে অনেকটাই চারদিকের পরিবেশ যেন নিস্তব্ধ হয়ে পরেছে। মেঘনার ভয়াল ছোবলে বিলীন হওয়ার পথে এর গুরুপ্তপূর্ণ স্থাপনা। ইতোমধ্যে বহু পরিবার গৃহহারা হয়ে নিঃস্ব হয়েছে, কেউ আবার ভাঙনের শিকার হয়ে অসহায় হয়ে পরেছে।ঘড় তোলার মত অবস্থাও তাদের নেই।
স্থানীয় জনগন বলেন, বর্ষা মৌসুমে অনেক বেশি পরিবারের মানুষ নদী ভাঙনের হুমকিতে পড়েছেন। এদের মধ্যে অনেকের ৩-৪বার ভাঙনের মুখে পড়েছেন। নতুন করে ঘর তোলার সামর্থ্য নেই তাদের।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অসহায় অবস্থা নদীর কূলে বসবাস করে আসছে অনেকেই। তারা জানান, আমরা ভয়ের মধ্যে থাকি কখন নদী এসে সব ভেঙে নিয়ে যায়, রাতেও ঠিকমত ঘুমাতে পারিনা। আজ এখানে আছি তো কাল থাকতো পারবো কি না জানিনা।
এদিকে, ইতোমধ্যে বহু পরিবার গৃহহারা হয়ে নিঃস্ব হয়েছে, কেউ আবার ভাঙনের শিকার হয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। আর তাই ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।
দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে হাকিমুদ্দিন লঞ্চঘাট, বেশ কয়েকটি স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মাছঘাটসহ গুরুপ্তপূর্ণ স্থপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
হাকিমুদ্দিন বাজারের বাবুল মাজি জানান, এখানে বর্ষার সময় হাজার হাজার মানুষের কোলাহল ছিল।কিন্তু এখন তা নেই। হাকিমুদ্দিন বাজারটি এখন মেঘনায় বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।তাই এলাকাবাসীর জোর দাবী অতিদ্রুত ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের।
এ বাপারে বাপাউবো ডিভিশন ১ নির্বাহী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান ও ডিভিশন ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, ভাঙন রোধকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প প্রস্তাবনা সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ দ্বারা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে কার্যক্রম কিছুটা স্থবির হয়ে আছে আশা করি প্রকল্পগুলো পাস হলেই খুব শিগগিরই কাজ শুরু করা যাবে এবং তাহলেই ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার ভাঙন রোধ করা যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন