টেনিসে ‘নক্ষত্র পতন’ চলছেই
রিও অলিম্পিকে টেনিস আসরটা যেন হাটছে একটু হেয়ালি ভঙ্গিমায়। আগের দিন প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিশ্চিত হয় নারী ডাবলসে বিশ্বের এক নম্বরধারী ভারতের টেনিসকন্যা সানিয়া মির্জার। একই দিনে প্রথম রাউন্ডে নারী একক থেকে বিদায় নেন ছয় নম্বর বাছাই ভেনাস উইলয়ামস। গতকালের চমক রিতিমত পিলে চমকে দেওয়ার মত। প্রথম রাউন্ড থেকেই চোখের জলে বিদায় নিয়েছেন বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ।
উইম্বলডনে ব্যর্থ হলেও রজার্স কাপ জিতেই রিও ডি জেনিরোয় পা রেখেছিলেন জোকোভিচ। প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের। কিন্তু আর্জেন্টিনার হুয়ান মার্টিনো দেল পোর্তোর কাছে ৭-৬ ও ৭-৬ গেমে হারেন সার্বিয়ান তারকা। অলিম্পিকের টেনিস এককে স্বর্ণ জয়ের অভিযান প্রথম রাউন্ডেই শেষ হয়ে গেল ১২টি গ্রান্ড¯ø্যাম জয়ী তারকার। এমন হারকে ‘জীবন এবং ক্যারিয়ারের কঠিনতম হারগুলোর একটি’ বলে উল্লেখ করেছেন জোকোভিচ। এখন পুরুষ দ্বৈতে সোনা জিতলে হয়তো কিছু সান্ত¦না পেতে পারেন তিনি।
দ্বৈত লড়াই থেকে ছিটকে গেছেন অ্যান্ডি মারেও। অ্যান্ডি ও জেমি মারে জুটি ৭-৬ (৮-৬) ৭-৬ (১৬-১৪) গেমের চোয়ালবদ্ধ লড়াইয়ের পরও হেরে গেছেন ব্রাজিলিয়ান জুটি থমাস বেলুচ্চি ও আন্দ্রে সা’য়ের কাছে। তবে এককে ঠিক পথেই আছেন মারে। সার্বিয়ান ভিক্টোর ট্রয়িচকিকে ৬-৩ ৬-২ গেমে সহজেই হারিয়েছেন অলিম্পিকের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। পুরুষ এককে কক্ষপথে আছেন রাফায়েল নাদাল ও। আর্জেন্টিনার ফেদেরিকো দেলবোনিসকে ৬-২, ৬-১ গেমে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছেন স্প্যানিশ তারকা।
ওদিকে নারী বিভাগেও অব্যহত আছে নক্ষত্র পতন। প্রথম রাউন্ড থেকেই থেকে বিদায় নিয়েছেন উইলয়ামস বোন। নারী দ্বৈতের প্রথম রাউন্ড থেকে ভেনাস ও সেরেনা জুটিকে ছিটকে দিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের লুসি সাফারোভা ও বারবোরা স্ত্রাইকোভা জুটি।
কোরিয়ার মেয়েদের টানা আট!
দলগত আর্চারি ইভেন্টে আগেই স্বর্ণ দখলে নিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার ছেলেরা। তাদের দেখানো পথে এবার হাঁটল সেদেশের মেয়েরাও। দলগত নারী আর্চারিতে স্বর্ণ জিতেছে তারা। ফাইনালে তারা রাশিয়াকে হারায় ৫-১ পয়েন্টে। এ নিয়ে এই ইভেন্টে টানা আট অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতলো কোরিয়ার মেয়েরা। আসরের দ্বিতীয় দিনে প্রথম দুই সেট জিতে জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে যায় তারা। তৃতীয় সেট হয় ড্র। ফলে স্বর্ণ নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের। এই দলে ছিলেন গত আসলের ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণ জয়ী কি বো-বায়ে ও তার দুই সতীর্থ চাং হাই-জিন ও চই মি-সুনের। একই ইেিভন্টে রাশিয়া রৌপ্য ও চীনা তাইপে জেতে ব্রোঞ্জ পদক। প্রথম দিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে আর্চারির পুরুষ দলগত বিভাগের সোনা জিতেছিল কোরিয়া।
সোস্ট্রোমের নতুন রেকর্ড
আগের রেকর্ডটিও তারই গড়া, তবে রেকর্ডটি অলিম্পিকের মত আসরে না হলে কি হয়। এবার তাই সুইমিংপুলে ঝড় তুললেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসরে। নিজে তো জিতলেনই সাঁতারে সুইডেনকেও অলিম্পিক ইতিহাসে প্রথম সোনা এনে দিয়েছেন তিন বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সারা সুস্ট্রোম। রাশিয়ায় এক বছর আগে ৫৫.৬৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন ২২ বছর বয়সী। এবার ৫৫.৪৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে মেয়েদের ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে গড়লেন নতুন রেকর্ড। প্রতিযোগিতায় রুপা জেতেন কানাডার পেনি ওলেকসিয়াক। য্ক্তুরাষ্ট্রের ড্যানা ভলমার পেয়েছেন ব্রোঞ্জ পদক।
মিনশিয়ার অনন্য ৫
২০০৪ এথেন্স, ২০০৮ বেইজিং, ২০১২ লন্ডন ও ২০১৬ রিও চার আসরে মোট স্বর্ণ ৫টি। প্রথম ডাইভার হিসেবে অলিম্পিকে পাঁচটি সোনা জয়ের রেকর্ড গড়েছেন চীনের উ মিনশিয়া। লন্ডনে ৩ মিটার ব্যক্তিগত স্প্রিংবোর্ডেও সোনা জিতেছিলেন তিনি। এবার মেয়েদের ৩ মিটার সিনক্রোনাইজড স্প্রিংবোর্ড ইভেন্টে শি তিংমাওয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে স্বর্ণ জিতে নতুন ইতিহাস লেখেন ৩০ বছর বয়সী মিনশিয়া। পাঁচ রাউন্ডের প্রতিযোগিতায় ৩৪৫.৬০ স্কোর গড়েন তারা। ইতালির প্রতিপক্ষ তানিয়া কান্নোত্তো ও ফ্রান্সেসকা দাল্লাপেকে সহজেই ৩১.৭৭ পয়েন্ট ব্যবধানে পেছনে ফেলেন তারা। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাডিসন কিনি ও অ্যানাবেলে স্মিথ জুটি জেতেন ব্রোঞ্জ।
পিটির বিশ্ব রেকর্ড
বিশ্বরেকর্ড গড়ে যুক্তরাজ্যকে এবারের অলিম্পিকের প্রথম স্বর্ণ এনে দিয়েছেন অ্যাডাম পিটি। ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে নিজের গড়া আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন করে গড়েছেন ২১ বছর বয়সী এই সাঁতারু। গেমসের দ্বিতীয় দিনে ৫৭.১৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ মিটার পথ পাড়ি দেন পিটি। হিটেই ৫৭.৫৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে আগের রেকর্ড গড়েছিলেন এই তিনি। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে সোনা জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকান ক্যামেরন ভ্যান ডার বুর্গ ৫৮.৬৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে জেতেন রৌপ্য। যুক্তরাষ্ট্রের কডি মিলার পেয়েছেন ব্রোঞ্জ পদক।
৮ বছর পর ফিরেই রেকর্ড
বেইজিংয়ে পেয়েছিলেন অলিম্পিকের প্রথম স্বর্ণ। দ্বিতীয় স্বর্ণের জন্য অপেক্ষা করতে হল আট বছর। লং কুইংকুয়ানের এই স্বর্ণের মহত্ত¡ একটু বেশিই। বিশ্ব রেকর্ড গড়েই যে পুরুষদের ৫৬ কেজি ওজনশ্রেণির ভারোত্তোলনে জয়ী হয়েছেন চীনের এই অ্যাথলেট।
স্ন্যাচ এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে মোট ৩০৭ কেজি তোলেন তিনি। ইভেন্টে আগের বিশ্ব রেকর্ডটি ছিল তুরস্কের হালিল মুতলুর দখলে। সিডনিতে ২০০০ সালের অলিম্পিকে সব মিলিয়ে ৩০৫ কেজি ওজন তুলেছিলেন তিনি। ৩০৩ কেজি ওজন তুলে এই ইভেন্টের রুপা জেতেন ২০১২ সালের অলিম্পিকের স্বর্ণজয়ী ওম ইয়ুন চোল।
তাইওয়ানের প্রথম
নারীদের ৫৩ কেজি ওজনশ্রেণির ভারোত্তলোকে স্বর্ণ জিতেছেন তাইওয়ানের সু শু-চিং। াাসরে তাইওয়ানের এইট প্রথম স্বর্ণ। স্ন্যাচ এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ২১২ কেজি ওজন তুলেছেন সু। ২০০ কেজি ওজন তুলে রৌপ্য জেতেন ফিলিপিন্সের দিয়াস হিদিলিন।
ফেন্সিংয়ের ব্যক্তিগত সেরা ইতালির
প্রথম দিন মেয়েদের ব্যক্তিগত ফেন্সিংয়ে রৌপ্য জিতেছিল ইতালি। দ্বিতীয় দিন ছেলেদের হাত ধরে এলো ফেন্সিংয়ের ব্যক্তিগত ফয়েলে স্বর্ণ। ফাইনালে শীর্ষ বাছাই যুক্তরাষ্ট্রের আলেকজ্যান্ডার ম্যাসিয়ালাসকে ১৫-১১ পয়েন্টে হারান ইতালির দানিয়েলে গারোস্সো। রিও অলিম্পিকের প্রথম দিন মেয়েদের ব্যক্তিগত এপে ইভেন্টের ফাইনালে ইতালির রোস্সেল্লা ফিয়ামিনগোকে ১৫-১৩ স্কোরে হারান এমেসে সাস।
বাঙালি মেয়ে দীপার কৃর্তী
চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছাতে ৯৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে সেরা আটে জায়গা করে নেয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ। কঠিন এই কাজটিই করে দেখালেন ত্রিপুরার বাঙালি মেয়ে দীপা কর্মকার। প্রথম ভারতীয় হিসেবে অলিম্পিক জিমন্যাস্টিকসের ভল্ট ইভেন্টের ফাইনালে উঠলেন তিনি। বাঙালি হিসেবেও দীপা জায়গা করে নিলেন মর্জাদার আসনে। তবে সামনে হবে আসল লড়াই। সন্দেহ নেই আগামী ১৪ আগস্টের সেই চূড়ান্ত লড়াইয়ে উপমহাদেশ থেকে বিশেষ নজর থাকবে ২৩ বছর বয়সী এই নারীর ওপর।
রিও’র সর্বকনিষ্ঠ নেপালের গৌরিকা
হিটে নামার আগেই বিপত্তিÑ পোশাক ছিঁড়ে গেছে। লন্ডন কোচের পরামর্শে নতুন পোশাক পরেই নামলেন পুলে। শেষ পর্যন্ত নতুন পোশাক কোন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারিনি ছোট্ট সাঁতারুর। ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে হিটে হলেন প্রথম। এই ১৩ বছর ২৫৫ দিন বয়সী এই কিশোরী হলেন নেপালের গৌরিকা সিং। এবারের অলিম্পিকের সবচেয়ে কম বয়সী আলিম্পিয়ান তিনি।
গৌরিকা রিওতে এসেই পড়েন বিপত্তির মুখে। নিরাপত্তাকর্মীরা নাকি তাকে ঢুকতেই দিতে চাইছিল না! এত ছোট বয়সে যে কেউ অলিম্পিকে অংশ নিতে পারে তা তাদের ধারণাতেই ছিল না। পরে পরিচয়পত্র দেখিয়ে সে বাধা পেরুতে হয় তাকে। হিটে প্রথম হওয়ার অনুভূতিকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে উল্লেখ করেন গৌরিকা। এরপর তিনি ফিরে যান নেপালের সেই ভয়াবহ ভূমিকম্পের দিনটিতে। সেদিন এই বালিকা আশ্রয় নিয়েছিল একটা টেবিলের নীচে। বাকিটা তার মুখেই শুনি, ‘সেটি খুব ভয়ের ব্যাপার ছিল। ওই ভূমিকম্প থেকে আমি বেঁচে ফিরেছি এতেই আমি কৃতজ্ঞ। সেখান থেকে এখানে (রিও অলিম্পিক) আসতে পারা ও দেশকে গর্বিত করা অসাধারণ এক অনুভূতি।’
তবে গৌরিকার এই স্বপ্নযাত্রা থেমেছে এখানেই। হিটে প্রথম হলেও ৮.৪৫ সেকেন্ড সময়টা পরের রাউন্ডের জন্য যথেষ্ঠ ছিল না। গৌরিকা অবশ্য হার মানছেন না। হার মানবেন কেন তিনি; স্বপ্নযাত্রার সবে তো শুরু।
রিও পদক তালিকা (শীর্ষ ১০)
দেশ স্বর্ণ রৌপ্য ব্রোঞ্জ মোট
যুক্তরাষ্ট্র ৩ ৫ ৪ ১২
চীন ৩ ২ ৩ ৮
অস্ট্রেলিয়া ৩ ০ ৩ ৬
ইতালি ২ ৩ ২ ৭
দক্ষিণ কোরিয়া ২ ২ ১ ৫
হাঙ্গেরি ২ ০ ০ ২
রাশিয়া ১ ২ ২ ৫
যুক্তরাজ্য ১ ১ ০ ২
সুইডেন ১ ১ ০ ২
জাপান ১ ০ ৬ ৭
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন