পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ শয্যার আন্তঃবিভাগ একযুগেও চালু হয়নি। এরই মাঝে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ প্রায় শেষের দিকে। সুপেয় পানির সরবরাহ না থাকার অজুহাতে চালু হয়নি আন্তঃবিভাগ।
অথচ প্রায় ১৫ কোটি টাকার বরাদ্দে এ উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এখানেও সুপেয় পানি সরবরাহের কোন ব্যবস্থা না করলেও ফুল বাগান স্থাপনের জন্য বরাদ্দ ঠিকই রেখেছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে যাচ্ছে উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য সেবার প্রাণ কেন্দ্র চালুর বিষয়টি। ১২ বছরে একজন রোগীও আবাসিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারেনি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। অথচ হাসপাতালটিতে বছরের পর বছর ধরে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন ৮৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যবহার না থাকায় হাপাতালের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, অ্যাম্বুলেন্স, যন্ত্রপাতিসহ অবকাঠামো অযতেœ পড়ে রয়েছে। লোকবলের তেমন কোন সঙ্কট নেই এখানে। ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। ২০০৮ সালে ভবন হস্তান্তর করা হয় স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় লোকবল, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতিসহ সবকিছু সরবরাহ করা হয়। ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে এখানে চালু করা হয় বহিঃবিভাগ। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হয়নি।
পূর্ণাঙ্গ চালু না হওয়া ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বরাদ্দ দেয়া হয় ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ৬ তলা ভিত দিয়ে ৫ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল দ্বিতল ভবনকে চার তলা করা হয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন উন্নীত করা হয়েছে ৩ থেকে ৪ তলা পর্যন্ত। নির্মাণ করা হয়েছে হাসপাতালের বর্জ্য শোধনাগার।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এম. মতিউর রহমান জানান, সুপেয় পানি সরবরাহের অভাবে চালু না হওয়া ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে। স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতায় ইন্দুরকানীর জনসাধারণ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখানে সমস্যার শেষ নেই। বার বার তাগিদ দিলেও স্বাস্থ্য বিভাগ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ জানান, সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এখানে সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা না করেই স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ প্রায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না করা হলে আবাসিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু অচিরেই পানির সমস্যা সমাধান করে হাসপাতালটি চালুর চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে পিরোজপুরের সিভিল সার্জন হাসনাত ইউসুফ জাকি বলেন, ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে যে সকল সমস্যা রয়েছে তা দ্রæত সমাধানের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করি খুব শিগগিরই এখান থেকে আবাসিক চিকিৎসা সেবা দেয়া যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন