সোহবতে আত্মার বিল্পব
ফিরোজ আহমাদ
সোহবত হলো সঙ্গ লাভ করা। সাথী হওয়া। প্রবাদে আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। সৎ সঙ্গের সোহবতের মাধ্যমে স্বর্গ তথা জান্নাত লাভ হয়। মানুষের সামাজিকিকরণ হয়। মানুষ মহামানব হয়ে যায়। অসৎ সঙ্গের স্পর্শে সোনালী সম্ভাবনাময় জীবন অংকুরে বিনাশ হয়ে যায়। ফুল ফোটার পূর্বে ঝড়ে যায়। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. নাজমুল করিম তাঁর ‘সমাজ সমীক্ষণ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘অমলা ও কমলা দুই বোনকে কিছু দিন বাঘের বাচ্চার সাথে থাকতে দেয়া হয়েছিল। কিছুদিন পর দেখা যায় অমলা ও কমলা এ দু’জন শিশুর আচরণ বাঘের বাচ্চার ন্যায় হয়ে গিয়েছিল’। একটি শিশু যে পরিবেশ ও সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে বেড়ে উঠে। তার আচার-আচরণের উপর সে পরিবেশ ও সমাজ ব্যবস্থার একটি প্রভাব থাকে। শিশু তার আশপাশের পরিবেশের সাথে অভ্যস্থ বেড়ে উঠাকে সামাজিকিকরণ বলে। কবি সুন্দরভাবে বলেছেন, ‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলেছে তা বহুদূর মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষের মাঝে সুরাসুর’। সৎ মানুষের সোহবতে থাকলে স্বর্গের সন্ধান পাওয়া যায়। ভালো মানুষের নিকট স্বর্গের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।
সোহবত সর্ম্পকে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওয়া কুনু মাআ’স সাদিক্বীন’। (সূরা তাওবা, আয়াত : ১১৯)। অর্থ : সত্যবাদীদের সাথী হও। ইসলাম সত্য ও সুন্দর। কোরআন মানুষকে সৎ ও সুন্দর মনের মানুষের সাথে উঠা বসা, চলা ফেরা করার জন্য তাগিদ দিয়েছে। নবী রাসূল, অলি আউলিয়া, আলেম ওলামাদের পথ হলো সত্য ও সুন্দর। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওয়া কুম্ মিনাস সাজিদীন’। (সূরা হিজর, আয়াত : ৯৮)। অর্থ : এবং সেজদাকারীর অন্তর্ভুক্ত হও। অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ওয়ারকাউ মাআ’র রা-কিয়ীন’। (সূরা বাকারা, আয়াত : ৪৩)। অর্থ : রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।
নবী রাসূল, অলি আউলিয়াদের মজলিস বেহেস্তের বাগান স্বরূপ। পরশ পাথরের স্পর্শে লোহা যেমন স্বর্ণে পরিণত হয়। তেমনি সৎ মানুষের সোহবতে মানুষ জান্নাতী হয়ে যায়। বিপদগামী মানুষ হেদায়াত পেয়ে যায়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কল্যাণমূলক ও খোদাভীরুতার কাজে পরস্পর সহযোগী হও, মন্দ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে পরস্পর সহযোগী করো না’। (সূরা মায়েদা, আয়াত : ২)। হযরত মাওলনা জালাল উদ্দিন রূমী (রহ.) বলেছেন, ‘এক যামানা সোহবতে বা আউলিয়া বেহ্তের আযসাদ সালাহ তায়াতে বেরীয়াঁ’। অর্থাৎ একটু সময় কামেল অলি আউলিয়াদের মজলিসে বসলে হাজার বছরের ইবাদতের চেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়।
সোহবতের মাধ্যমে মানুষের আত্মার বিল্পব ঘটে। মানুষের হৃদয়ের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পায়। মানুষ আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যায়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইয়া আইয়্যুহাল লাযীনা আমানুত্তাকুলা-হা ওয়াবতাগূ ইলাইহিল ওয়াসীলাতা ওয়া জাহিদু ফী সাবীলিহী লা‘আল্লাকুম তুফলিহুন’। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ৩৫)। অর্থ : হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের জন্য তোমরা মাধ্যম (উছিলা) অনুসন্ধান (তালাস) কর এবং তাঁর পথে সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। সুতরাং তারাই সফলকাম হবে। যারা ভালো লোকের সোহবতে থাকবে। কোরআনের সূরা ক্বাহাফের উল্লেখ করা হয়েছে ‘একদল যুবক আল্লাহর নৈকট্য লাভের তালাসে বেড়িয়ে ছিলো। তারা দীর্ঘদিন একটি গুহার মধ্যে লুকিয়ে আল্লাহর জিকির ধ্যান মোরাকাবায় মশগুল ছিলো। এ অবস্থায় তাদের দীর্ঘদিন কেটে যায়। যুবকদের সঙ্গী ছিলো একটি কুকুর। যুবকদের সঙ্গী কুকুরটি গুহার সম্মুখে বসে ছিলো। যুবকদের জিকিরের ধ্বনি শুনতে শুনতে কুকুরের জবান খুলে গিয়েছিলো’। সোহবতের ফলে কুকুরের পর্যন্ত জবান খুলে গিয়েছিলো। যারা অলি আউলিয়া হয়েছেন কিম্বা জগত বিখ্যাত আলেমের স্বীকৃতি পেয়েছেন। দেখা যায় তারা তাদের জীবনের একটি সময় পীর মুর্শিদ কিম্বা আলেম ওলামাদের খেদমতে কাটিয়েছেন। হযরত খাজা মঈন উদ্দীন চিশতী (রহ.) তিনি তাঁর মুর্শিদ হযরত ওসমান হারুনী (রহ.)-এর খেদমতে ২০ বছর কাটিয়ে ছিলেন। সুতরাং আত্মার উন্নয়ন, আত্মার দর্শন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সোহবত একটি উত্তম ‘উছিলা’। আমাদের ইহকাল ও পরকাল সুন্দর করতে হলে অবশ্যই ভালো মানুষের সোহবতে যেতে হবে। অন্যকে ভালো মানুষের সোহবতে যেতে উৎসাহিত করতে হবে। ইহার কোনো বিকল্প নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন