শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ধর্ষণের মহামারি কঠোর হাতে রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারি এখনো তার মৃত্যুর থাবা গুটিয়ে নেয়নি। পশ্চিমা বিশ্বে দীর্ঘ লকডাউন শেষে জীবনযাত্রায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার আগেই আবারো দ্বিতীয় ধাপে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী শীতকালে একই আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশেও। এখনো প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে। এহেন বাস্তবতা সামনে রেখে দেশে আরেক মহামারি ভয়াবহরূপে আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের মতো সমাজে এ যেন মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাহীনতার আগ্রাসন। ধর্ষণ-ব্যাভিচারের মতো সামাজিক ব্যাধি সব সমাজেই কমবেশি আছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব একশ্রেণির মানুষকে এমন পাশবিক করে তুলতে পারে তার নজির সাম্প্রতিক ইতিহাসে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সিলেটের এমসি কলেজে বেড়াতে যাওয়া নবদম্পতির স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ৯ জন মিলে ধর্ষণ করা তথাকথিত ছাত্রদের প্রায় সবাই স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় এমন সব অপকর্মে জড়িত রয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। একেকটি খুন-ধর্ষণের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার পর সরকার ও প্রশাসনের তরফ থেকে কিছুদিন সরব-সক্রিয় ভূমিকা দেখা গেলেও অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটে না। গত বছর বরগুনায় রিফাত শরিফ হত্যার ঘটনায় এ সপ্তাহে ৬ জনের ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়েছে। স্বল্প সময়ে বিচারিক কাজ সম্পন্ন করে রায় প্রকাশিত হওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কিন্তু এমন রায়ের পরও যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভৎস্য সব ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে, তখন এর পেছনের কার্যকারণগুলোর দিকে নজর দেয়ার বিকল্প নেই।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে মানুষ হত্যা করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অথবা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নিরীহ নববধুকে গ্যাংরেপ করার মতো ঘটনাগুলোর সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির নামে গড়ে ওঠা বাহিনীর নাম উঠে আসতে দেখা যায়। এসব বাহিনী আবার ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতা বা জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থানীয় কর্মকর্তা বা সদস্যদের কতর্ব্যে অবহেলা অথবা আশ্রয় প্রশ্রয় ছাড়া এসব বাহিনী দীর্ঘদিন সমাজে অপরাধ করে দাপিয়ে বেড়াতে পারে না। সামগ্রিক বিবেচনায় অপরাধীদের পেছনে একটি দুষ্টচক্রের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। গত কয়েকদিন ধরে সংবাদপত্রগুলোতে ধর্ষণের ঘটনার শিরোনাম প্রতিদিন যেন আগেরদিনের রেকর্ড ভেঙ্গে চলেছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধুকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছিল এক মাসের বেশি আগে। ২ সেপ্টেম্বরে সংঘটিত ঘটনাটির ভিডিও দৃশ্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে না পড়লে এ ঘটনা হয়তো কেউ জানতেও পারত না। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দেশে প্রতিদিন এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলেছে যার খবর গণমাধ্যমে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসে না।

বেগমগঞ্জের ধর্ষক দেলোয়ার ও তার গ্রæপের সদস্যরা স্থানীয় যুবলীগের সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত এ ধরনের বেশিরভাগ ঘটনার সাথেই সরকারি দলের স্থানীয় সদস্যদের নাম পরিচয় বেরিয়ে এসেছে। একশ্রেণির অপরাধীর রাজনৈতিক ছত্রছায়া গ্রহণ এবং অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কোনো সামাজিক প্রতিরোধ না থাকা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শৈথিল্য এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। কিশোর গ্যাং এবং খুন-ধর্ষণের ঘটনার সাথে মাদক ও পর্নগ্রাফির মতো বিষয়গুলোর প্রভাবের কথা বলছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। গত কিছুদিন ধরে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার ঘটার পর এখন সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক জনমত গড়ে উঠার পাশাপাশি মানুষ প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসতে শুরু করেছে। জনগণের এই সংক্ষোভ এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা, মা-বোন-সন্তানের সম্ভ্রমহানির আশঙ্কার এই আর্তি সরকার এবং প্রশাসনকে বুঝতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়ের বাছবিচারের কোনো সুযোগ নেই। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার আগে ভিকটিম পরিবারের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়েও কোনো পদক্ষেপ বা বিচার পাচ্ছে না। ফলে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে অপকর্ম চালিয়ে যায়। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতির চিরঅবসান ঘটাতে হবে। আইনের শাসন ও নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা এবং অপরাজনীতি ও সন্ত্রাস মুক্ত করার বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। পারিবারিক বন্ধন ও পিতা-মাতার মানবিক পরিচর্যা ছাড়া সন্তানকে মাদক, পর্নগ্রাফি ও কিশোর গ্যাং কালচারের মতো সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে দ্রæতবিচার আইনে দ্রæততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষত সরকারিদলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের বেপরোয়া অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের নির্দেশ দিতে হবে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack Ali ১০ অক্টোবর, ২০২০, ১১:৫৪ এএম says : 0
Only answer is Islam.. you people just writing against these crime.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন