শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

করোনা : সিরিয়দের কাছে হাসপাতালে যাওয়ার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:৩৩ পিএম

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় স্বাস্থ্য অবকাঠামোর কিছুই যেন আর অবশিষ্ট নেই। এর মধ্যে ভয়াল করোনাভাইরাস মরণআঘাত। এই ভাইরাসের উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে নারাজ সিরিয়রা। স্বাস্থ্য অবকাঠামোর বেহাল দশা ও অর্থনৈতিক দীনতার কারণে হাসপাতালে যাওয়ার চেয়ে বরং বাড়িতে বসে মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করছেন তারা। করোনা মহামারিতে সিরিয়দের দুর্ভোগ নিয়ে আল-জাজিরার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন দৃশ্যই উঠে এসেছে।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের একটি হার্ডওয়্যার দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন আহমেদ। অবসন্নতা, তীব্র জ্বর, স্বাদহীনতাসহ করোনার প্রায় সব উপসর্গই আছে তার শরীরে। কিন্তু এরপরও হাসপাতালে গিয়ে নমুনা টেস্ট করানোর ব্যাপারটি ভাবেননি বলে জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে আহমেদের প্রথম সমস্যাটি ছিল টেস্টের অত্যধিক ব্যয়, দ্বিতীয়ত তার ধারণা ছিল বিষয়টি ভয়াবহ।

সিরিয়ার স্বাস্থ্য কাঠামোর পরিস্থিতি তুলে ধরে কুড়ি বছর বয়সী এই তরুণ বলেন, “কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে বলে এবং যথাযথ চিকিৎসা পাবে না বলে আমি খুব ভীত ছিলাম।”

ফলে হাসপাতালে না গিয়ে আহমেদ নিজেকে নিজ রুমের মধ্যেই আবদ্ধ করে রাখে। ফেসবুকের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন তিনি। মোবাইল ফোনের স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। আহমেদ বা তার সংস্পর্শে আসা কেউই করোনা টেস্ট করাননি। ফোনে আল-জাজিরাকে আহমেদ বলেন- “আমি এই খরচ বহন করতে পারব না।”

আহমেদ জানান, সিরিয়ায় করোনার পরীক্ষা করানো অনেক ব্যয়বহুল। এতে তার খরচ হতো ১ লাখ ২৬ হাজার সিরিয়ান পাউন্ড (২৪৬ ডলার), যা আহমেদের এক মাসের বেতনের চেয়ে বেশি।

আহমেদের ধারণা তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন জুলাইয়ের শেষ দিকে। দেশটির সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এমন লক্ষণ বহন করা হাজার হাজার মানুষের কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি বলে ধারণা করা হয়।

সিরিয়া সরকারের অফিশিয়াল তথ্যানুযায়ী, সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬৬ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২০৫ জনের।
তবে অনেক চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিতে আক্রান্তের এই সংখ্যা সেখানকার করোনা মহামারির প্রকৃত চিত্র নয়।
দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধের কারণে নাজুক স্বাস্থ্য অবকাঠামো, অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, ডাক্তার ও নার্সদের প্রবল সংকটে ভুগছে সিরিয়া। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি যারা সরবরাহ করতে যুদ্ধের মধ্যে তারা দেশ ছেড়েছেন। ফলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন সিরিয়া কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদির সরবরাহ সংকটের সঙ্গে আক্রান্ত বা করোনা উপসর্গবাহীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখারও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই নেই সিরিয়ায়। দীর্ঘ ৯ বছরের যুদ্ধের ফলে রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ঠেকেছে তলানিতে। ফলে করোনা উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও রোগীরা নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছেন না।
চিকিৎসা সহায়তার জন্য ফেসবুকের গ্রুপগুলো থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন সিরিয়ার মানুষজন। এসব গ্রুপে করোনাসংক্রান্ত অনেক পরামর্শ রয়েছে চিকিৎসকদের। অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন হলে অনলাইনেই তা বাড়িতে ভাড়া আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে দামাকাসে একটি হাসপাতালে মোস্তফা ছদ্মনামে একজন চিকিৎসক বলেন, “মানুষজন হাসপাতালে আসার চেয়ে মৃত্যুকে বেছে নিচ্ছে।”
ওই চিকিৎসক জানান, অনেক মানুষ তার কাছে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য আসে। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করা রোগীদের অধিকাংশেরই কোনো প্রতিরোধী পোশাক কেনারও সক্ষমতা নেই। সিরিয়ায় ভালো মানের একটি মাস্কের দামই পড়ে ৫ হাজার সিরিয়ান পাউন্ড (১০ ডলার)।

মোস্তফা বলেন, “দামটা আমার জন্য অনেক বেশি। আপনি এটা কল্পনা করতে পারেন? একজন ডাক্তার ভালো মানের একটা মাস্ক কিনতে পারেন না।”
যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ায় ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে মাস করে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের দাম এত বেশি যে, অধিকাংশ মানুষেরই অভুক্ত থেকেই দিনাতিপাত করতে হয়। সূত্র : আলজাজিরা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন