ড. ইশা মোহাম্মদ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। অনেক দিন ধরেই কসরত চলছে। শেষমেশ বৃহৎ দুই দল তাদের প্রার্থীর প্রাথমিক মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পেরেছেন। একজন হিলারি ক্লিনটন অন্যজন ট্রাম্প। এই দুজনই অনেক প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়েও যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। প্রশ্ন হতে পারে, অসংখ্য বিতর্কের মধ্যেও দুজন বিতর্কিতই কেন বা যোগ্য বিবেচিত হলো? কম বিতর্কিত বা একদম বদনাম নেই, এমন অনেকেই প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন। তারা বেশ কিছু সমর্থকও পেয়েছিলেন। কিন্তু বিশেষ কোনো কারণে তারা সবাই কুপোকাত হয়েছেন। প্রথম থেকেই প্রচারণার শীর্ষে ছিলেন এরা দুজন। এরাই শেষতক টিকে গেছেন। উত্থাপিত প্রশ্নের মীমাংসা সহজে হবে না। তবে একটা ‘ক্লু’ পাওয়া গেছে। কী সেই ‘ক্লু’?
হিলারির ব্যাপারে সন্দেহটা আজকের নয়। বহু বছর ধরে হিলারিকে এবং বিল ক্লিনটনকে ইহুদি বৎসল মনে করা হয়ে আসছে। ক্লিনটন তার সময়ে এক ইহুদি সুন্দরীর কারণে আলোচিত হয়েছিলেন। তিনি ইমপিসমেন্টের শিকার হতে হতে বেঁচে গেছেন। দেশের মানুষ যথেষ্ট ক্ষিপ্ত হয়েও শেষতক ক্লিনটনকে নিয়ে মিটিং-মিছিল না করে, শান্তিমতো তার সময়টা পার করে দেয়ার সুযোগ দিয়েছে। হিলারির ব্যাপারে বিতর্কের সৃষ্টি সেখান থেকেই। কিন্তু এ প্রশ্নের মীমাংসা আজো হয়নি। তা হচ্ছে কে বা কারা ওই ইহুদি সুন্দরীকে হোয়াইট হাউসে পাঠিয়েছিল এবং কেনই-বা সেই ভদ্রমহিলা মহেন্দ্রক্ষণে সব কিছু ফাঁস করে দিয়েছিলেন?
বিতর্ক আছে এই মর্মে যে, ক্লিনটনকে ইহুদিবাদীরা কব্জা করার জন্যই এই ‘নিদান’ প্রয়োগ করেছিলেন। যিনি বেশি বাড়াবাড়ি করতে পারতেন তিনি প্রেসিডেন্টের পতœী হিলারি। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তখন তিনি খুব একটা উচ্চবাচ্য করেননি। প্রশ্ন এলো, হিলারি নিজেও কি ইহুদিবাদীদের দ্বারা কব্জাকৃত ছিলেন? হিলারির ইহুদি কানেকশন ভালমতো জানা যায় না। তবে কিছু কিছু তথ্য আছে, যা সন্দেহ বাড়ায়। যেমন টুইন টাওয়ার ধ্বংস। টুইন টাওয়ারে কোনো ইহুদি মারা না গেলেও ওই টাওয়ার ধ্বংসের জন্য মুসলিম জঙ্গিদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তার জন্য সাদ্দামকে দায়ী করে ইরাক আক্রমণ করা হয়। সে সময়েই বারবার বলা হয়েছিল, ইরাক এর সাথে জড়িত নয়। এখন যেমন প্রমাণিত হয়েছে যে, ইরাক নির্দোষ। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়েই গেছে। অনেকেই মনে করে যে, আফগানিস্তান, ইরাক আক্রমণ করার জন্য একটা ছুঁতো দরকার ছিল। টুইন টাওয়ার ধ্বংস ছিল সেই ছুঁতো। এর সাথে একটা তথ্য যোগ করা যায়, টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সময় হিলারি সেখানকার সিনেটর ছিলেন। বিষয়টি কি কাকতালীয়?
হিলারির বিপরীতে আছেন ট্রাম্প। বাদশাহী নাম একটা। তিনি দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনীর রাজনীতিক নন। হঠাৎ বড়লোক এবং হঠাৎ রাজনীতিক। তিনি তার প্রচার কাজে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছেন। কিন্তু এত টাকা পেলেন কোথায়? তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছেন, মুসলমান খেদাও। ধর্মকে ব্যবহার করছেন তিনি মৌলবাদী কায়দায়। কিন্তু মুসলিম বিদ্বেষ তাকে প্রেসিডেন্ট করবে তা মনে হয় না। হয়তো, তাকে দিয়ে এটি বলানো হয়েছে এ কারণে, যাতে হিলারিকে মুসলমানসহ অন্যান্য বহিরাগতরা ভোট দেয়। স্পষ্টতই মনে হয়, ট্রাম্পকে সবাই বর্ণবাদী ভেবে হিলারিকেই ভোট দেবে। ট্রাম্প নিজে থেকে যেন কিছুই করছেন না। কে বা কারা যেন তাকে দিয়ে এসব করাচ্ছে। ট্রাম্পকে প্রথম থেকেই স্বাভাবিক মনে হয়নি। কিন্তু হিলারিও কি স্বাভাবিক?
এবারকার দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীই যথেষ্ট অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। তাছাড়া তাদের দুজনই প্রেসিডেন্ট পদের যোগ্য কিনা সে কথা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হিলারি বলেছেন, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তুতিই নেই। যোগ্যতাও নেই। উল্টো প্রশ্ন করেছেন অনেকেই। হিলারির কি সে যোগ্যতা আছে? পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তিনি যেসব কাজকারবার করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তার সরকারি দায়িত্ব পালনে যোগ্যতার। তার ব্যক্তিগত ইমেল ফাঁস করার ঘটনায় তিনি মোটেই বিচলিত বোধ করছেন না। একজন প্রেসিডেন্টের যে আত্মমর্যাদাবোধ থাকে তার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলেই মনে হয়।
হিলারির আত্মমর্যাদাবোধের অভাব প্রথম থেকেই পরিলক্ষিত হয়েছে। যখন ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালনকালে মনিকা লিওনস্কির ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছুই বলছিলেন না, তখন দেখা গেছে কেবলমাত্র আর্থিক স্বার্থের কারণে এবং একটি রহস্যময় সূতার টানে তিনি তার স্বামীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ যে কোনো আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ভদ্রমহিলাই এ ব্যাপারে কোনো আপস করতেন না। তিনি সে সময় যে আচরণ করেছিলেন, তাতে মনে হয়েছে, তিনি নিতান্তই একজন আটপৌরে মানুষ। এমনকি তিনি স্বামীর কাছ থেকে বড় পদে নিয়োগও নিয়েছিলেন। ফার্স্টলেডি হিসেবে এমন বড় পদে নিয়োগ নেয়া ‘স্বজনপ্রীতি’। হিলারির প্রচারে নামার বহু আগে থেকেই কথাবার্তা চলছে। কেন এত আগে থাকতেই কথা উঠেছিল? বারাক ওবামার সময়ে তিনি মনোনয়ন পেতে পেতে পাননি। সে সময়ে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছিল? এখন আবার বারাক ওবামাই সমর্থন দিচ্ছেন। ওবামা বলেছেন, হিলারি তার স্বামীর চেয়েও এমনকি ওবামার চেয়েও যোগ্য। কী অর্থ হয় এ কথার? তাহলে সে সময়ে হিলারি কেন মনোনয়ন পাননি, ওবামা কেন পেয়েছিলেন?
ওবামার কাজকারবার কথাবার্তা নিয়েও কথা আছে। ওবামা প্রেসিডেন্ট হয়েই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। মনে হয়, সব কিছুই প্রস্তুত ছিল। তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন এবং নোবেল পাবেন। কত বছর যাবৎ কাজ করে শান্তির জন্য নোবেল পাওয়া যায়? কোনো লিখিত কেতাব নেই। তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েই-বা কী শান্তির কাজ করেছেন? তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পায়রা উড়াবেন বলেছিলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, তার কৌশলেই অসংখ্য প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটেছে। আইএস অসংখ্য মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে এবং সিরিয়ার শরণার্থীরা রাস্তাঘাটে পড়ে, জলে ডুবে মারা যাচ্ছে।
আইএসকে দমন করার ওবামার পরিকল্পনা ব্যর্থ। প্রশ্ন উঠেছে, তিনি আন্তরিক কিনা? অনেকেই সন্দেহ করেছেন, ওবামা মূলত একজন শিখন্ডি প্রেসিডেন্ট। তিনি অদৃশ্য অঙ্গুলি সংকেতে নাচানাচি করেন। তার নিজের সিদ্ধান্ত বলে কিছুই নেই। ঠিক এরকম প্রেসিডেন্টই চায় সেই বিশেষ অদৃশ্য শক্তি। যার কারণে হিলারিকে অপছন্দ করা সত্ত্বেও ওবামা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। ভবিষ্যতে হয়তো হিলারির হয়ে নির্বাচনী প্রচারণাও চালাবেন।
ওবামা, ট্রাম্প, হিলারিÑ সবাই যেন একই গ্রন্থিতে বর্তমান। এক সুতার টানেই নড়েন চড়েন। এদের আগে ছিলেন বুশ। তিনি যে লাইনে কাজকারবার করেছেন, আশ্চর্যের বিষয় সবাই যেন সেই একই লাইনে কাজকারবার করছেন। ওবামাকে কে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিল, সে প্রশ্ন এখন যেমন সবার মুখে, ঠিক তেমনি এবারকার প্রেসিডেন্ট কে বানাবে, সে প্রশ্নও সবার মুখে মুখে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসাধারণ মহান, পৃথিবীব্যাপী প্রচলিত আছে কথাটা। কিন্তু বহুদিন যাবৎ তারা মহান কোনো ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট করছে না। কারণ কী? তাদের দেশে প্রচারণা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা নিজেরা কোনো মহান ব্যক্তিকে পছন্দ করতে পারে না। প্রচারণা তাদেরকে পছন্দ করতে বাধ্য করে। হিলারি সম্পর্কে বাজারে গুজব আছে যে, তাকে প্রার্থী হওয়ার বহু পূর্ব থেকেই বিশেষ অদৃশ্য শক্তি প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি কী কী করবেন তাও নির্ধারণ করা আছে। স্যান্ডার্সকে বিচলিত ও দৌড় থেকে দূর করার জন্য বহু পূর্ব থেকেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তার কিছু কিছু ফাঁস হয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরো অনেক কিছুই ফাঁস করা হবে। এসব ফাঁস কর্মের সাথেও অদৃশ্য শক্তি সরাসরি জড়িত। প্রশ্ন হতে পারে, কেন তারা তাদের মনোনীতকে ফাঁস কর্মের মাধ্যমে দ্বিধাগ্রস্ত করবে? উত্তর হলো একটাই। ব্ল্যাকমেল করা। তারা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সকলকেই হাতের মুঠোয় রাখে। সকলেরই দুর্বল কাজকারবারের গোপন প্রমাণাদি তারা সংরক্ষিত রাখে। যখন যেমন প্রয়োজন হয়, তখন তেমনভাবে কাজে লাগায়। এখন হিলারি প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। যেই পক্ষে কথা বলছে, তাকেই গ্রহণ করছে। তার টাকা সংগ্রহের মধ্যে অনেকের কালো টাকাও আছে। অদৃশ্যরা সেসব কালো টাকার খতিয়ানও তৈরি করেছে। হিলারি যখন ক্ষমতায় ছিলেন এবং ওবামার দ্বিতীয় টার্মে ক্ষমতায় না থাকা সত্ত্বেও যেসব প্রশ্নবিদ্ধ অর্থ সংগ্রহ করেছেন, তার সব খতিয়ানই তাদের কাছে আছে। এগুলোই তাদের তুরুপের তাস। একে তো মার্কিন জনসাধারণ পুরুষতন্ত্রে বিশ্বাসী তার ওপর হিলারির প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিত্বÑ এ দুটোকে হাতে রেখেই তারা অনেক অর্থব্যয় করে হিলারিকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করেছে, যাতে প্রেসিডেন্ট হয়েই তাদের কথামতো নড়েচড়ে।
প্রশ্নবিদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে ট্রাম্পও কম যান না। তিনি রাজনৈতিক শূন্য অতীত থেকে ধনকুবের হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যতায় সবার উপরে। কেন মার্কিন জনগণের এ ধরনের অভাবনীয় পরিবর্তন হলো মনমানসিকতার? অদৃশ্য শক্তিই এই প্রশ্নবিদ্ধ মানুষটিকে মানসিকভাবে তৈরি করেছিল প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য। তিনিই যে প্রেসিডেন্ট হবেন, এমন কোনো কথা নেই। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তেলখড় পোড়াবেন এটাই আসল কথা। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে আরো ধনী হওয়ার এবং তিনি প্রথম থেকেই শেখানো বুলিই বলে চলেছেন। তাকে সুস্থিরভাবে বক্তব্যই দিতে দেওয়া হচ্ছে না। অথবা এমনও হতে পারে যে, তিনি সুস্থির বক্তব্যই দিতে পারেন না। তিনি একজন মনস্তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞের সাবজেক্ট। তার কথা বলাবলি, হাত-পা ছোড়াছুড়ি দেখে যে কেউ সন্দেহ করবে যে, তিনি অপ্রকৃতস্থ। যারা স্বাভাবিক রাজনীতি করেন দীর্ঘদিন ধরে, রাজনৈতিক পারিবারিক পরিবেশে বড় হন, তারা এক ধরনের রাজনৈতিক নৈতিকতায় বিশ্বাসী হন। ধর্মীয় বিশ্বাসের মতো এদের রাজনৈতিক বিশ্বাসও দৃঢ় হয়। কিন্তু যাদের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নেই, তারা যে কোনো সময় পাশ পরিবর্তন করতে পারেন। তাদের অন্যের অনুকরণ করাও যেমন রুচিতে বাধে না, তেমনি অন্যের কথায় চলাফেরাতেও কারো নিন্দার সম্মুখীন হতে হয় না। যারা বিশ্ব সভ্যতাকে নিজেদের মতো করে সাজাতে চায় এবং তাবৎ বিশ্বাসীকে তাদের ‘দাস’ বানাতে চায়, তারা এমনই প্রেসিডেন্ট চায়। এবারকার নির্বাচনে তাদের ‘আহ্লাদের’ প্রেসিডেন্টই আসবে, যদি কোনো বড় ধরনের ঘটনা না ঘটে।
প্রশ্ন হতে পারে, কেন তারা পুতুল নির্বাচনে সাজানো নাটক করছে? এরকমটা তো আগে কখনই করেনি। তাদের অভিজ্ঞতায় তারা দেখেছে যে, রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে দেয়া হলে পরবর্তী পর্যায়ে তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেক তেলখড় পোড়াতে হয়। তার চেয়েও নিজেদের লোক প্রেসিডেন্ট হলে যে খরচ হবে, তা সুদে আসলে তো উঠে আসবেই, উপরন্তু পরবর্তী পর্যায়ে নির্দেশিত কাজে কোনো খরচ হবে না। আর তাদের লোক প্রেসিডেন্ট হলে তারা অনেকটা নিরাপদ বোধ করে। পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণ অবশ্য দুই মেরুর বিশ্বের অবলুপ্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ সোভিয়েতের পতনের পর হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। তারা মনে করে তাদের মূল ভূ-খ-ে পারমাণবিক হামলা করার আর কেউ নেই। তাই প্রেসিডেন্ট কে হলো না হলো, তাতে কিছুই যায় আসে না। কেননা, ভাইটাল সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যে মেধা, দক্ষতা, প্রজ্ঞা দরকার তার আর প্রয়োজন নেই। বিশাল ব্যক্তিত্বের ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কোনো একজনকে প্রেসিডেন্ট হতেই হবে এমন অবস্থা আর নেই। দেশটা যেমন চলছে তেমন চললেই হবে।
এসবের জন্য যদি কেউ ইহুদিবাদকে সন্দেহই করে, তবে প্রশ্ন হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের রাগ কেন? কেন পুতুল বসাচ্ছে তারা দেশের ক্ষতি করার জন্য? তাদের রাগ তো মুসলিম জাহান এবং ইউরোপের প্রতি। ইউরোপ তাদেরকে ইচ্ছামতো হত্যা করেছিল। তারাও বেশ বড় সংখ্যক ইহুদি হত্যা করেছিল, শূন্য হাতে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তারা রুশদেরকেও ছাড়বে না। ইউরোপে আবার আগুন জ্বালাবে এবং সেই আগুনে জার্মানরাসহ অনেকেই পুড়ে মরবে। তারা রুশদেরকেও পুড়িয়ে মারবে। কেবলমাত্র ভারতেই তারা তাড়া খায়নি। ভারত ছাড়া অন্য সব দেশেই তাড়া খেয়েছে এবং শূন্য হাতে জান নিয়ে পালিয়েছে। ইতিহাসে মাত্র একবার তারা মাল সামাল নিয়ে দেশান্তর হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। খলিফা ওমর ফারুক (রা.)-এর সময়, তিনিই তাদেরকে সম্পদ নিয়ে জেরুজালেম ত্যাগ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। আর কেউই তাদেরকে সম্পদসহ কেটে পড়তে দেয়নি। সে হিসাবে মনে হয়, তারা তাদের সম্পদের পাহাড় ভারতে স্থানান্তর করবে। ভারত কিংবা ভারতের ছায়াতলের কোনো অঞ্চলকে নিজেদের ভূ-খ- করবে। কিন্তু তার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও একটা শিক্ষা দেবে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ইউরোপের ইহুদিদেরকে রক্ষা করার জন্য তারা বিভিন্ন দেশে দূতিয়ালি করেছিল। সে সময় একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই তাদেরকে রক্ষা করা সম্ভব ছিল। কিন্তু যুদ্ধের সে পর্যায়ে মার্কিনিরা তাদেরকে রক্ষা করতে আসেনি। মার্কিনিরা যুদ্ধক্ষেত্রে এসেছে অনেক পরে। ততক্ষণে ইহুদিরা মরে সাফ। তাদের ধারণা ছিল, টাকা-পয়সার কারণে হয়তোবা মার্কিনিরা তাদেরকে রক্ষা করতে আসবে। টাকা-পয়সার ব্যাপারটা তারা বড় করে দেখে। কিন্তু মার্কিনিরা টাকা-পয়সার বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে কলোনির বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। মার্কিন দেশে তখন ইহুদি ব্যবসায়ীরা বেশ দাপটের সাথে পুঁজি নিয়ন্ত্রণ করছিল। ইহুদিভীতি তাদের মধ্যে অল্প বিস্তর কাজ করত। এখনো যেমন করে। হিটলার যে বিশাল সংখ্যক ইহুদি হত্যা করেছিল তা প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল। হয়নি একমাত্র আন্তর্জাতিক মহল গুরুত্ব না দেয়ার কারণে। ইহুদিরা কখনই তাদের খুনিদের ক্ষমা করবে না। তারা তক্কে তক্কে আছে। কী করে প্রতিশোধ নেয়া যায়। যেমন মুসলমানদের দিয়ে মুসলমান হত্যা করার জন্য আইএস জঙ্গি তৈরি করেছে। তেমনি খ্রিস্টানদের দিয়ে খ্রিস্টান হত্যা করার জন্যও তাদের পরিকল্পনা আছে। ইউরোপে যুদ্ধ হলে মরবে কারা?
কদিন আগে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, হিলারি আইএস জঙ্গি তৈরি করেছেন। এটি নিছক হিলারিকে অপদস্ত করার জন্যই বলা হয়নি, হিলারির ইহুদি কানেকশন বোঝানোর জন্যই বলা হয়েছে। হিলারি-ট্রাম্প দুজনেই দুজনকে অযোগ্য এবং ইহুদিদের পুতুল বলছেন হয়তো এ কারণে যে, মার্কিন জনগণ যেন বুঝতে পারে যে-ই প্রেসিডেন্ট হোক না কেন, সেই প্রেসিডেন্ট ইহুদিদের ক্রীড়নক।
বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিনিদের প্রভাবের কারণেই বিশ্বাবাসী তাদের রাজনৈতিক মতামতকেই মূল্য দেয়, ভোটাভুটির দিকে চেয়ে থাকে। বিশ্ববাসী এ কারণে শংকাগ্রস্ত যে, তাদের প্রেসিডেন্ট কোনো পাগলা কিংবা আধপাগলা লোক হলে বিশ্বময় ধুন্ধুমার কা-কারখানা হবে- এটাই স্বাভাবিক। এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধও সংঘটিত হবে। আশঙ্কা করা যায় যে, মার্কিনিদের আবাসভূমিতেও বোমা পড়বে। যেটি হয়তো ইহুদিদের দীর্ঘকালের অন্তরের গোপন বাসনা। বিশ্বময় ইহুদি হত্যায় যারা জড়িত এবং সম্পর্কিত তাদের কাউকেই ছাড়বে না তারা। আজ হোক কাল হোক প্রতিশোধ নেবেই। এখন দূর আকাশে কুজঝটিকার কালো মেঘ দেখা দিয়েছে। যারা সাবধানী তারা এখনই একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেবে। যারা গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসবে, তারা নিজেদের ধ্বংস নিজেরাই ডেকে আনবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন