সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে দেশ কাঁপানো গণধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে অভাবনীয় প্রশংসায় ভাসছিল র্যাব-পুলিশ। কিন্ত দিনে দিনে বেশিদিন হয়নি মাত্র ১৬ দিন। গ্রহণযোগ্য ইমেজে পেরেক ঢুুকিয়ে দিল বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ি।
রায়হান নামে এক যুবকের মৃত্যু কাহিনী এখন গোটা পুলিশে গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। ছিনতাইকারী ও গনপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে বলে, প্রচার ও প্রকাশ করলেও সেই বক্তব্য এখন অন্তঃসার শূন্য। সেকারণে লজ্জিত ও বিব্রত দায়িত্বশীল পুলিশ সংশ্লিষ্টরাও। মিডিয়া কর্মীরা পুলিশের বক্তব্য বিশ্বাস করে প্রচার করেছিল ‘নগরীতে এক ছিনতাইকারী গণপিটুনিতে মৃত্যু’। কিন্তু সেই সংবাদ প্রচার করে রায়হান হত্যা ঘটনায় প্রতিবাদী বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে নাজেহালও হয়েছেন অনেক সংবাদকর্মী। প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির অবিশ্বাস্য এ হত্যা ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার মধ্যে দিয়ে। কিন্ত রাত শেষে সূর্যের হাতছানিতে বেরিয়ে এলো পুলিশী নির্যাতনেই মৃত্যু হয়েছে এক কন্যা সন্তানের জনক রায়হানের। তার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে আড়াই মাস বয়সি শিশু রুহানামা আক্তার আলফা হয়েছে এতিম, তাহমিনা আক্তার তান্নি হলেন বিধবা। সেই সাথে পুত্র হারিয়ে অঝোরে চোখের পানি ফেলছেন রায়হানের জননী সালমা বেগম।
এ ঘটনায় নায়ক থেকে খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুইয়া। চলনে বলনে স্মার্ট এক অফিসার ছিলেন আকবর। বিনয়ী আকবর ছিলেন একজন চৌকস অফিসার। নিজস্ব ডির্পাটমেন্টে ভালো কানেকশন ছিল তার। যেকোন পরিস্থিতি সামলে নেয়ার ক্যারিশম্যাটিক শক্তি ছিল আকবরের। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাংষ্কৃতিক চর্চায় জড়িত রাখতেন নিজেকে। সিলেটের জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল গ্রীণ বাংলার বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। সামাজিক নানা অসঙ্গতি নিয়ে নির্মিত এসব নাটকে বিভিন্ন সময় পুলিশ, বিভিন্ন সময় সমাজ সংষ্কারক চরিত্রে ছিলেন তিনি। কিন্তু রায়হান হত্যাকান্ডে অবিশ্বাস্য ঘটনায় তলানীতে ঠেকে গেছে তার সব অর্জন। ফলাফলে এসআই আকবর এখন হিরো থেকে জিরো। আসছে নভেম্বরের ফাঁড়ি ইনচার্জ দায়িত্ব্রে শেষ ছিল তার। যদিও আরো ৬ মাস সময় বৃদ্ধির জন্য জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছিলেন আকবর। হয়তো সফলও হতেন। কিন্তু ‘শেষ ভাল যার, সব ভালো তার’ সেই হিসেবে গুড়েবালি তার স্বপ্ন। রায়হানের হত্যা ঘটনায় এখন নিজেই পলাতক এসআই আকবর।
রায়হান মৃত্যু ঘটনার পর এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া বলেছিলেন, গত শনিবার দিবাগত রাতে নগরীর কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে স্থানীয়রা রায়হানকে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে রায়হানকে উদ্ধার করে এবং ভোর ৬টার দিকে তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর রায়হান মুত্যুরবণ করেন। তিনি আরো বলেছিলেন, রায়হানকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসাই হয়নি। ফাঁড়িতে নিয়ে আসার বিষয়টি সত্যি নয়। রায়হানের মায়ের কাছে ফোনের বিষয়টি সম্পর্কে আকবর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এ বিষয়টি তার পরিবার ভুল বুঝেছে। এই ফোন থেকে রায়হান ফোন করে তাকে গণপিটুনি ও হাপসাতালে নিয়ে যাওয়ার খবরটি দিতে চেয়েছিলো পরিবারের কাছে। কিন্তু পরিবারের মানুষ এখন ভুল বুঝে পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করছে।
কিন্ত রায়হানের পরিবারের নিকট এসআই আকবরের প্রদত্ত তথ্যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে, ঘটনা নিয়ে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের তদন্তে। যদি রায়হান মৃত্যু ঘটনার পর তার পরিবারের প্রতিবাদী ভাষা জোরালো না হতো, তাহলে সারাজীবন সত্য হয়ে থাকতো রায়হান ছিল ছিনতাইকারী, সে মারা গেছে গণপিটুনিতে। রায়হান মৃত্যু ঘটনায় বরখাস্ত হয়েছেন এসআই আকবরসহ পুলিশের ৪ সদস্য, একই সাথে প্রত্যাহার হয়েছেন আরো ৩পুলিশ সদস্য। হত্যা ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন, রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। সেই মামলায় এখন তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পিবিআই। এখন লাপাত্তা হয়ে আছেন বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। তবে তাকে খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অপরাধী বা অভিযোগযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের নিকট আত্মসমর্পনের আহবান জানানো পুলিশের অন্যতম দায়িত্ব। সেই দায়িত্বের বাইরে নন এসআই আকবর। প্রাথমিকভাবে মৃত্যু ঘটনার অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি। তিনি বলেন, আকবর আত্মসমর্পন না করলে তাকে দ্রæত গ্রেফতার করা অবশ্যই দরকার। এছাড়া তিনি বলেন, আকবর কেবল ধোঁকা দেননি রায়হানের পরিবারকে একই ভাবে বিভ্রান্ত করেছেন পুলিশ বিভাগকে। সেকারণে এঘটনার দায় এড়াতে পারে না সিলেট মেট্রোপুলিশ পুলিশ কর্তৃপক্ষও।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন