বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

এক বছরে গড়ালো সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে নববধূ গণধর্ষণ ঘটনা

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:০৪ পিএম

এক বছরে গড়িয়েছে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে নববধূকে গণধর্ষণ ঘটনা। গত বছর আজকের দিনে (২৫ সেপ্টেম্বর) স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যেয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই হাতে মেহদি মাখা ওই নববধূ। এঘটনা ঝড় উঠে সারা দেশে। নানা ছড়াই উৎরাই পেরিয়ে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ। তবে মামলার বিচারকাজ এখন পড়েছে দীর্ঘসূত্রিতায়। ওই ঘটনায় মামলা হয় দুটি। এর একটি গণধর্ষণের, অপরটি ধর্ষিতার স্বামীর কাছে চাঁদা দাবি ও ছিনতাই এবং অস্ত্র আইনের। সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ধর্ষণ মামলাটি। অন্যটি চলছে সিলেট মহানগর হাকিম আদালতে। বাদীপক্ষ মামলা দুটি একই আদালতে পরিচালনা করতে চায়। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের আদেশও আছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী শহীদুজ্জামান বলেন, ‘একই ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা, তাও দুই আদালতে বিচারকাজ পরিচালিত হবে। তাই সাক্ষীদের দুই আদালতেই সাক্ষ্য দিতে হবে। এতে নানা অসঙ্গতি দেখা দিতে পারে। তাই দুটি মামলা একই আদালতে বিচারের জন্য আবেদন করা হয়। এ নিয়ে হাইকোর্টও আমাদের পক্ষে আদেশ দেন।’ তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলা দুটির বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর সিদ্ধান্তের পর অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি রাশিদা সাইদা খানম বলেন, এ দুটি মামলার বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্নের জন্য দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় এ-সংক্রান্ত জেলা কমিটি। এ জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হলেও এখন অবধি কোনো আসেনি নির্দেশনা। ফলে থমকে আছে চাঞ্চল্যকর মামলা দুটির বিচারকাজ। এতে হতাশা বাড়ছে বাদীপক্ষের মধ্যে। এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ মামলার বাদী বলেন, ‘মামলাটি দ্রুত শেষ না হওয়ায় নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। মাঝেমধ্যে হতাশাও ভর করে মনে। মামলার বিচার শেষ হবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এছাড়া ‘মামলা দায়ের ও আসামিদের পক্ষে বিভিন্ন ব্যক্তি ও মহল থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল আমার ওপর। শুধু চাপ সৃষ্টিই নয়, বড় অঙ্কের টাকাও অফার করা হয়েছিলো আমাকে। যাতে আপস-মীমাংসায় বিষয়টা শেষ করি। কিন্তু আমি আমার অবস্থান থেকে সরে যাইনি। ঘটনার দিন বিকালে স্ত্রীকে নিয়ে হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজারে যান তার স্বামী। সেখান থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যায় এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে যান তারা। সেখান থেকে প্রাইভেটকারসহ তাদেরকে জিম্মি করে কলেজের ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের ৫ম তলা বিল্ডিংয়ের সামনে প্রাইভেটকারের মধ্যেই ওই নববধূকে গণধর্ষণ করা হয় পালাক্রমে। ঘটনার পর দিশেহারা হয়ে পড়েন ওই দম্পতি। টিলাগড় পয়েন্টে এসে নির্যাতিতার স্বামী ফোন দেন পুলিশকে। কিন্তু ঘটনাস্থলে আসতে দেরি হয় পুলিশের। এ সুযোগে চম্পট দেয় ধর্ষকরা। ঘটনার রাতেই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে ৬ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩-৪ জনকে আসামি করে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয়, সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার পুত্র সাইফুর রহমান (২৮), হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গির মিয়ার পূত্র শাহ মো মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের পূত্র তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের পূত্র অর্জুন লস্কর (২৬), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের পূত্র রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের পূত্র মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), সিলেট নগরীর গোলাপবাগ আবাসিক এলাকার (বাসা নং-৭৬) মৃত সোনা মিয়ার পূত্র আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল (২৬) ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নটেশ্বর গ্রামের মৃত ফয়জুল ইসলামের পূত্র মিজবাউল ইসলাম রাজনকে (২৭)। এরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। মামলা হলেও আসামিদের গ্রেফতার করত ব্যর্থ হয় সিলেট মহানগর পুলিশ। পরে অভিযানে নামে র‌্যাব ও সিলেট রেঞ্জ পুলিশ। ঘটনার ৩ দিনের মধ্যে গ্রেফতার করা হয় ৮ আসামিকে। আসামীদের গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করে নেওয়া হয় ৫ দিনের রিমান্ডে। রিমান্ড শেষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয় আসামীরা।

জানা গেছে, গত বছরের ১ ও ৩ অক্টোবর গ্রেফতারকৃতদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ঢাকায় সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষায় সাইফুর, তারেক, অর্জুন ও রনির ডিএনএ ‘ম্যাচিং’ পাওয়া যায়। আইনুদ্দিন ও রাজনের ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আসে ‘ম্যাচিং’। এ দুজন ধর্ষণের সময় ‘কিছু ব্যবহার করায়’ পরীক্ষায় ‘মিক্সিং’ পাওয়া যায়। বাকি ৪ জন ‘কোনো কিছু’ ব্যবহার না করে সরাসরি ধর্ষণ করেছিল বলে প্রমাণিত হয়।। ধর্ষণ মামলায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর প্রধান অভিযুক্ত ছাত্রলীগের কর্মী সাইফুরসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে আট আসামির মধ্যে ছয়জনকে ধর্ষণে সরাসরি জড়িত আর দুজনকে উল্লেখ করা হয় তাঁদের সহযোগী হিসেবে। অভিযুক্তরা হলেন সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া। তাঁদের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয় রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমকে। এদিকে, অস্ত্র আইনের মামলায় ঘটনার ১ মাস ২৭ দিন পর গত বছরের ২২ নভেম্বর অভিযোগপত্রটি জমা দেয়া হয়। ছাত্রাবাস থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান ও শাহ মাহবুবুর রহমান রনিসহ ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে আসামি করে অভিযোগপত্রটি জমা দেয়া হয়। সূত্র জানায়, বাদীপক্ষ মামলা দুটি একই আদালতে পরিচালনার অনুমতি চেয়েছিল উচ্চ আদালতে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো.

মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ শুনানি করেন এ মামলার। বাদীপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ূম লিটন ও এডভোকেট সাব্রিনা জারিন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরওয়ার হোসেন বাপ্পি, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাওদুদা বেগম ও হাসিনা মমতাজ। শুনানি শেষে আদালত মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম একসাথে একই আদালতে সম্পন্নের আদেশ দেন। তবে এখন অবধি একই আদালতে শুরু হয়নি বিচারকাজ। একই আদালতে বিচারকাজের জন্য মামলা দুটির অভিযোগ নতুন করে গঠন করতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন