শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চাল আমদানি করা হচ্ছে

ঝুঁকিতে খাদ্য মজুদ

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

সরকারি খাদ্যগুদামে ধান-চালের মজুদ গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে দেশে খাদ্য মজুদের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি গুদামে খাদ্য মজুদের পরিমাণ ছিল আট লাখ ৮০ হাজার টন। বাংলাদেশের হিসাবে ১৪-১৫ লাখ টন মজুদ থাকাকে সন্তোষজনক বিবেচনা করা হয়। খাদ্য মজুদ কম থাকায় এবার ৫০ হাজার টন চাল আমদানির দরপত্র দিয়েছে সরকার।
একাধিক ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার বিপুল খাদ্য সহায়তা দেওয়ায় এবার মজুদের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে গেছে। গত বোরো মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক ধান-চালও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য মন্ত্রণালয়। চলতি আমন মৌসুমে সংগ্রহের চিত্র আরো খারাপ হবে বলে মাঠপর্যায় থেকে আসা তথ্যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৬ নভেম্বর সরকার ৫০ হাজার টন চাল আমদানির টেন্ডার আহŸান করেছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরকার নিজেই চাল আমদানি করবে। খাদ্যের মজুদ বড় করতে বোরো মৌসুমে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ২০ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তবে বিদ্যমান বাজারদরের তুলনায় সরকার নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ায় বোরো মৌসুমে অর্ধেকেরও কম ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
চলতি আমন মৌসুমেও সরকারের ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকও পূরণ হবে না বিশ্লেষকরা এমনটাই ধারণা করছেন। ৭ নভেম্বর থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কেনার কথা থাকলেও কোথাও এ কার্যক্রম শুরু হয়নি। চলতি আমন মৌসুমে সরকারকে চাল দেওয়ার চুক্তি করতেও মিল মালিকরা রাজি হচ্ছে না। সরকার ৩৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ টন সিদ্ধ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে বাজারে মোটা চালের সর্বনিম্ন মূল্য ৪৪ টাকা থেকে ৪৫ টাকা কেজি। এ অবস্থায় কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা লোকসান দিয়ে মিল মালিকরা সরকারকে চাল দিতে পারবে না। ফলে আমন মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনেকটাই অনিশ্চত। এ অবস্থায় সরকারের খাদ্য সংগ্রহ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খাদ্য সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হলেও এ নিয়ে সরকার খুব একটা বিচলিত নয়। খাদ্য মজুদ ঝুঁকিতে আছে বলেও তারা মনে করে না। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মত হচ্ছে, এমনিতেই বাজারে চালের দাম বেশি। তার ওপর সরকার যদি সেই দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজার থেকে চাল কিনতে যায় সে ক্ষেত্রে বাজারে চালের দাম আরো বেড়ে যাবে। তাই নিজেদের নির্ধারিত দাম দিয়ে যতটুকু চাল কেনা যায় তাতেই সরকার সন্তুষ্ট থাকতে চায়। টানা কয়েকটি মৌসুমে ভালো ফলন হওয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত ধান চাল মজুদ আছে। তা ছাড়া চলতি শীত মৌসুমে তেমন কোনো দুর্যোগের আশঙ্কা নেই। তাই খাদ্য মজুদ কম থাকলেও দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। দেশে খাদ্য সঙ্কটের কোন ঝুঁকি নেই।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বলেন, সামনে দুর্যোগের কোনো আশঙ্কা নেই। তাই খাদ্য মজুদ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণে নেই।
তারপরও মার্কেটে বড় ধরনের সংকট তৈরি হলে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই সিগন্যাল বুঝে যদি বাজার ঠিক হয় তাহলে সরকার আর আমদানিতে যাবে না। না হয় পরবর্তী কিস্তিতে আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে টেন্ডার দেবে সরকার।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের মতে, ধান ও চালের দাম নিয়ে বরাবরই সরকারকে উভয় সংকটে থাকতে হয়। একদিকে কৃষকের লাভের কথা চিন্তা করলে গ্রাহক পর্যায়ে চালের দাম বেড়ে যায়। শহুরে মধ্যবিত্ত অখুশি হন। অন্যদিকে চালের দাম কম রাখলে ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রান্তিক কৃষক। এই দুইদিক বিবেচনা করেই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এবার বেশি বৃষ্টিপাত ও দীর্ঘ সময় আকাশ মেঘলা থাকার কারণে প্রত্যাশিত ফলন আসছে না। তবে বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। তার পরও সরকারিভাবে চাল আমদানির টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। হয়তো পর্যায়ক্রমে পাঁচ-ছয় লাখ টনের মতো আমদানি হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মাসুদ আলম ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৩৬ এএম says : 0
গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। তাই কৃষকদের যেন সুবিধা হয় সেটা করতে হবে।
Total Reply(0)
মাসুদ আলম ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৩৬ এএম says : 0
গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। তাই কৃষকদের যেন সুবিধা হয় সেটা করতে হবে।
Total Reply(0)
মাসুদ আলম ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৩৬ এএম says : 0
গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। তাই কৃষকদের যেন সুবিধা হয় সেটা করতে হবে।
Total Reply(0)
আশিক ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৫ পিএম says : 0
সরকার ১২০০ টাকা মন ধান না হলে ধান না কিনতে পারা সম্ভব না বেশি
Total Reply(0)
Sushanta sarkar ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১০:২৭ পিএম says : 0
Dhaner dam akhon 14 taka kg 20 taka/kh jodi Pay tobei khusi kiosk,26 taka hoile to aro khusi hbe
Total Reply(0)
মোঃ আশরাফুল হক ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১০:২৭ পিএম says : 0
আমদানি নাম করে নিজেদের পকেট ভারী এবং দেশের কৃষকদের মারা জাল বুনছেন না তো?
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ২২ নভেম্বর, ২০২০, ১০:০৫ পিএম says : 0
বর্তমানে কৃষকদের দৈনিক মজুরি, সার ও কীটনাশক, বীজের খরচ হিসাবে ১২০০.০০ টাকা ধানের দাম করা উচিত ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন