মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

হলুদে দুলছে কৃষক

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঋতু বৈচিত্রের এ বাংলায় বছরের বিভিন্ন সময় বর্ণিল রঙ আর অনাবিল সৌন্দর্যে সজ্জিত হয় দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। মাঘের মাঝামাঝি শীতের শেষে দিগন্ত জুড়ে হৃদয় ছুঁয়েছে সরিষা ফুল। দু’চোখ যতোদূর যায় শুধু দেখা মিলছে হলুদ রংয়ের। এ যেনো হলুদের সমাহার। পৌষের শুরুতে শীতের তীব্রতা বাড়ার পাশাপাশি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মাঠ ছেয়ে যায় হলুদ সরিষায়।

পূর্বে কৃষকরা শুধু ইরি-বোরো এক ফসলি আবাদ করে হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত রাখত। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে এ অঞ্চলের কৃষকদেরও কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটেছে। তারা বিগত দুই যুগ ধরে ইরি-বোরো, আমন, টমেটো করোলা. লাউ, পটল, শীম, ভূট্টা, তরমুজ আবাদের পাশাপাশি বছরের এ সময়টায় সরিষার আবাদের কারণেই কৃষি ক্ষেতগুলোতে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে গোদাগাড়ীর বাসুদেবপুরের বিলে। যে দিকেই তাকাই হলুদ ফুলে চোখ ঝলসে উঠে। ফুলের সাথে লাখ লাখ মৌমাছি গুঞ্জন কৃষককে মহিত করে তুলেছে। মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত। মধু আরোহনকারীরা মধু আরহণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীতের শিশির ভেজা সকালে সরিষার ফুল ফল দুলছে তো দুলছে সে সাথে দুলছে কৃষকের মন।
কৃষি কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম জানান, গোদাগাড়ী উপজেলায় এবছর ৭ হাজর ২শ’ ১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। বারি সরিষা-১৪ জাত ২ হাজার ৮শ’ ৪৫ হেক্টর, বারি সরিষা-১৫ জাত ২ হাজার ৬শ’ ৯০হেক্টর, বারি সরিষা-১৭ জাত ২শ’ ৩৫ হেক্টর, এছাড়া বিনা সরিষাসহ স্থানীয় কিছু জাত চাষ হয়েছে। এছাড়া প্রতি সরিষা জমি থেকে বাড়তি আয় করতে অনেক বেকার যুবক এবং কৃষকগণ মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর গোদাগাড়ী সকল ধরনের কারিগরী সহযোগিতা করছে।

গোদাগাড়ী এলাকার কৃষকরা জানান, গত কয়েক বছর বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় এ বিলের মাঠে মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে পুরোদমে। বর্তমানে সরিষার গাছে গাছে হলুদ ফুলের সমাহার। প্রায় ফুলেই মৌমাছি বসে মধূ আহরণ করছে। কৃষক আশা করছে কোন রোগ বালাই না হলে এবার গোদাগাড়ীতে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কৃষক আব্দুল মাতিন জানান, এ বছর আমি ৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে প্রতি বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৭ মণ হারে সরিষার ফলন হবে।

একই গ্রামের শামসুল আলম জানান, সরিষার আবাদের পরই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা যায়। এতে জমিতে সার কম লাগে। সরিষার পাতা ও শিকড় সবুজ সারের কাজ করে এবং বোরো ধানের ফলনও বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। অল্পসময়ের মধ্যে ২টি ফসল ঘরে তুলতে পারছে কৃষক। ভাজনপুর এলাকার কৃষক দুলুদেব বলেন, বর্তমানে মাঠে সরিষার, ভুট্টা, বিনাচাষে রসুন, ধনিয়া, গমের আবাদ হয়েছে। সরিষার চাষে লাভ বেশি খরচ কম। তাছাড়া সহজেই বিক্রয় করা যায়। সরিষার আবাদ ঘরে তোলার পর ওই জমিতেই সার ছাড়াই বোরো ধানের চাষ করা যায়। সরিষার আবাদ এ অঞ্চলের কৃষককে লাভের মুখ দেখাতে পেরেছে। সরিষার পাশাপাশি এবার ভুট্টার আবাদও হয়েছে ব্যাপক। মাত্র ২ থেকে আড়াই মাসের মধ্যে সরিষা জমি থেকে ঘরে তোলা যায়। সরিষার পাতা ও শিকড় জমিতে জৈব সারের কাজ করে। গাছগুলি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়

এবারও বাম্পার সরিষার ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মতিয়র রহমান জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষককে একের অধিক ফসল ফলানোর জন্য নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ সার্বক্ষণিক মাঠে কৃষকের সাথে কাজ করছেন। যাতে কৃষকের কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন