জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। সৃজনশীল অর্থনীতিতে উদ্যোগের জন্য তরুণদের উৎসাহিত করতে দু’বছর পর পর ‘ইউনেস্কো বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক পুরস্কার দেয়া হবে। ইউনেস্কোর নির্বাহী পরিষদের শীতকালীন অধিবেশনে গত শুক্রবার বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। ইউনেস্কোর এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের কোনো সংস্থা এই প্রথম বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার চালু করলো। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে এ পুরস্কারের বিষয়ে জানান, ২০১৯ সালের আগস্টে ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়, যা নির্বাহী পরিষদের ২১০তম সভায় পাস হয়েছে। পুরস্কারের আর্থিক পরিমাণ ৫০ হাজার ডলার (৪২ লাখ টাকা)। এই টাকা বাংলাদেশ সরকার দেবে। পাঁচজন বিচারক বিজয়ী নির্বাচিত করবেন। ২০২১ সাল থেকে প্রথম পুরস্কার চালু হবে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনেস্কোর নিয়ম অনুসারে প্রথম দফায় ৬ বছরে তিনবার এ পুরস্কার দেয়া হবে, এরপর আলোচনার ভিত্তিতে নবায়ন করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার, চলতি বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে। এ বছরই বঙ্গবন্ধুর নামে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত তার প্রতি এক অনন্য সম্মাননা, জাতির জন্য এক বিরাট সুখবর। দৈশিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি একটি তাৎপর্যমন্ডিত ঘটনা। এ জন্য ইউনেস্কো ও তার নির্বাহী পরিষদ অভিনন্দনযোগ্য।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা। শুধু তাই নয়, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি তিনি। বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসে তার সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে, এমন কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্ব নেই। তিনিই সেই স্বাপ্নিক, যিনি বাঙালি জাতির মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বপ্ন দেখাই কেবল নয়, স্বপ্ন বাস্তবায়নের মিশনও শুরু করেছিলেন নিজে। বাঙালি জাতি বা জনগোষ্ঠীর জাতীয় চেতনায় প্রণিত ও উদ্বুদ্ধ করা, সংগটিত করা এবং জনযুদ্ধে নিয়োজিত করার পুরো কাজটিই তিনি একক হাতে করেছিলেন। ১৯৭১ সালে গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এর প্রস্তুতি চলেছিল দীর্ঘদিন ধরে। বঙ্গবন্ধুর একান্ত চিন্তা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। এ জন্যই যুদ্ধ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মাত্র ন’মাসেই কাক্সিক্ষত মহাবিজয় অর্জিত হয়েছিল। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ ছিল বঙ্গবন্ধুর ধ্যান-জ্ঞান। তিনি জীবনে যা কিছু করেছেন, তার যা কিছু অর্জন সবই এই দেশ ও মানুষকে ঘিরে। এজন্য কেউ যখন বলেন, বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন, তখন তিনি যথার্থই বলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম এ ভূখন্ডে না হলে হয়তো কখনই এ ভূন্ডি স্বাধীন হতো না। বাঙালি জাতি বিশ্বের দরবারে গর্বিত জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতো না। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণার আশ্রয়স্থল নয়, বিশ্বের দেশসমূহ এবং জাতিমন্ডলীর জন্যও তিনি অনিঃশেষ অনুপ্রেরণা। ইউনেস্কোর পুরস্কার বিশ্বময় বঙ্গবন্ধুকে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সেই উক্তির কথা স্মরণ করা যায়, যেখানে তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শনের আন্তর্জাতিকীকরণ এবং বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম হিসাবে কাজ করবে।
ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পুরস্কার প্রবর্তন করে। যতদূর জানা যায়, এখন পর্যন্ত এরকম ২৩টি পুরস্কার প্রবর্তিত আছে। এই তালিকায় বঙ্গবন্ধুর নাম সংযুক্ত হলো। এর আগে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভাষণটি ‘মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের ইতিহাসে এক অসাধারণ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। ভাষণটি ছিল অলিখিত। এই ভাষণ বাঙালি জন ও জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছে এবং জাতীয় আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে অনুপ্রাণিত করেছে। এটি এখন আমাদেরই নয়, বিশ্ববাসীর ঐতিহ্য ও সম্পদে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করার ঘটনা বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গর্ব ও আত্মশ্লাঘার বিষয়। আমরা এজন্য ইউনেস্কোকে সাধুবাদ জানাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন