ভুলে যাওয়ার কারণঃ
বার্ধক্যজনিত কারণে, আলজেইমার রোগে, মাথায় আঘাত পেলে, মৃগী, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ব্রেইন ইনফেকশান বা মস্তিষ্কে প্রদাহ হলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেয়ে প্রায়শঃ ভুলে যাওয়ার সমস্যায় বিভিন্নভাবে ভুগতে হতে পারে। তাছাড়া খাদ্যে প্রোটিন ও ভিটামিনের ( বিশেষতঃ ভিটামিন বি১ ও বি১২ এর অভাব হলে, ধূমপান, মদ্যপান বা অন্য কোন মাদকে আসক্ত হলে, অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, অবসাদ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ব্রেইন টিউমার হলে মনে না থাকার সমস্যা সৃষ্টি হয়। এমনকি সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায়ও অনেক সময় ব্যস্ততা বা অন্য কোন কারণে ভুল হতে পারে। ভুলে যাওয়া রোধ করার জন্য, নিয়মিতভাবে কিছু রুটিন মেনে চললে ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ’র মত ভুল করে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানোটা অনেকটা কমানো যায়। যেমন-
লিস্ট করে কাজ আগানোঃ অক্ষম বা অথর্ব না হলে, সারাদিনের কাজগুলো পকেট নোটবুক বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডায়রিতে লিস্ট করে নিয়ে সুবিধা অনুযায়ী করে গেলে, তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয় ও ভুলবশত কাজ পড়ে থাকে না। স্মার্টফোনের অ্যাপস এর মেনুতে নোট করে রাখলে, ওটা সময়মত অনেক কিছুই স্মরণ করিয়ে দিতে পারে ।
সবকিছু জায়গামত গুছিয়ে রাখাঃ সেলফ, ড্রয়ার বা ঘরের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে, কেবলমাত্র দরকারি জিনিসগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে জায়গামত রাখা উচিৎ। যেন প্রয়োজনের জিনিসটা তার স্থান থেকে খুব সহজেই তূলে নেওয়া যায়। মোবাইলফোন, চশমা, চাবি ও মানিব্যাগের ব্যাপারে অধিকতর সচেতন হওয়া দরকার। বাইরে কোথাও গেলে, এগুলো সাথে আছে কিনা গুণে দেখে নেওয়া ভাল। এসময়ে বাসার ফ্যান, লাইট, চুলা ও বেসিনের কল বন্ধ কিনা তা চেক করা উচিৎ।
জরুরি কন্ট্যাক্ট নাম্বার ও ঠিকানাঃ জরুরি কন্ট্যাক্ট নামবারগুলো একাধিক মোবাইলে সেভ করে রাখার পাশাপাশি আপনজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়াপড়শি ও অন্যান্য হিতৈষীদের নাম-ঠিকানাসহ ডায়রিতে লিখে রাখা দরকার। প্রয়োজন ছাড়াও তাদের সাথে গল্পগুজব ও সৃজনশীল কাজে মত বিনিময় করা যেতে পারে। দূরে হলেও, কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলতে পারলে মনে রেখে কথা বুঝাতে খুব সুবিধা হয় ।
ঔষধের বাক্সের পরিচর্যাঃ নিয়মিত ব্যবহৃত ঔষুধগুলো একটা সুদৃশ্য ঔষধের বাক্সে, শোবার ঘরে চোখে পরার মত একটা সুবিধাজনক জায়গায় রাখা উচিত। চোখের সামনে পিল বক্স থাকলে ওটার দর্শনই ঔষধ খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। ডাক্তারের নাম, ঠিকানা ও কন্ট্যাক্ট নাম্বারসহ প্রেসক্রিপশনের ঔষধগুলোর নাম, ডোজ ও খাওয়ার সময়সহ কাগজে টাইপ করে বাক্সের গায়ে সেটে রাখা যায়। রোগীর বিশেষ কোন সমস্যা থাকলেও ( পেনিসিলিন বা অন্য কোন অ্যালার্জি, হার্টে স্ট্যাণ্ট, পেসমেকার বা রিং পড়া থাকলে ইত্যাদি ) সেখানে উল্লেখ থাকতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুমঃ রাতের নির্ঝঞ্ঝাট, আরামদায়ক ও পর্যাপ্ত ঘুম (অন্ততঃ ৮ ঘণ্টা) ভুলোমনের মানুষদের ভালো থাকার একটা চমৎকার উপায়। রাতে বেশি খাদ্য গ্রহণ বা খাওয়ার সাথে সাথে শুয়ে পরা ঠিক না। ঘুমানোর কাছাকাছি সময়ে চা-কফি পান করা নিষেধ। ঘুমানোর স্থান যথাসম্ভব আওয়াজমুক্ত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়া উচিত। রাতে দুধ, দই, কলা, আম, কাঁঠাল খেলে ভালো ঘুম হয়। ভালো ঘুম স্মরণশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
শরীরচর্চা বা হাঁটাঃ প্রত্যহ একই সময়ে আধঘণ্টা করে দ্রুত হাঁটা শরীর ও মনের জন্য খুবই উপকারী। এটা ভুলে যাওয়ার সমস্যা অনেকটা কমিয়ে দেয়। নিয়মিত হাঁটাহাঁটির অভ্যাস স্মৃতিশক্তি ও মনমানসিকতা ভাল রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো জিনিস। নিয়মিত ব্যায়াম-উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের সুগার, কোলেস্টারোল ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করে। যত বেশী হাঁটা যায়, ততই উপকার হয়।
ভুলে যাওয়া রোধে, সাথে কাছের কেউ থাকলে নিয়মিত ওষুধ খাওয়াসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো সারতে খুব সুবিধা হয়। প্রয়োজনে কিছু স্বার্থের বিনিময়ে হলেও সেরকম একজন সাথে থাকা ভালো। ভবিষ্যতের প্রয়োজনের কথা ভেবে, প্রিয়জনসহ সবার সাথে সুসম্পর্ক রাখা ও প্রয়োজনে তাদের সাহায্য সহযোগীতা করা, টাকা পয়সা সঞ্চয়, মূল্যবান কাগজপত্রসহ অন্যান্য জিনিস প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী বা বিশেষ কোন আপনজনের মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা উচিৎ।
ডাঃ নাসির উদ্দিন মাহমুদ
মোবাইল: ০১৯৮০৪৮৫০০৭
E-mail: nasiruddin1544@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন