রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বাড়ছেই চালের দাম

২৯ টাকা কেজি চাল এখন ৬৫ টাকা

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

নরসিংদীসহ দেশের বাজারে চালের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে তিন থেকে চার টাকা। বর্তমান বাজারে ৬০ টাকা কেজির নিচে কোন চাল নেই। মোটা চাল প্রতি কেজি ৬০ টাকা। চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।
এই নিয়ে গত ১১ মাসে চালের মূল্য বেড়েছে ১৮ দফা। গত উৎপাদন মৌসুম থেকে বর্তমান উৎপাদন মৌসুম পর্যন্ত চালের মূল্য অব্যাহত গতিতে বেড়েই চলছে। ২৯ টাকা কেজির চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। অর্থাৎ গত ১১ মাসে কেজি প্রতি চালের মূল্য বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা। চালের এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা হচ্ছে উৎপাদন ঘাটতি এবং মুনাফাখোর চাল সিন্ডিকেটের কারসাজি। সরকার চালের উৎপাদন বৃদ্ধিতে যেমন কোন কার্যকরী ভ‚মিকা পালন করতে পারছে না ঠিক তেমনি মুনাফাখোর চাল সিন্ডিকেট দমনেও সরকার কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না।
গত উৎপাদন মৌসুমে থেকে এই আমন উৎপাদন মৌসুম পর্যন্ত চালের দাম ১৮ দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা। সরকার চালের দাম এক টাকাও কমাতে পারেনি। কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেননি চাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ব্রি সরকারকে যে হিসাব দিচ্ছে তারও কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্রির গবেষণা তথ্য বলেছে, দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। নভেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মিটিয়েও ৫.৫৫ মিলিয়ন টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। গত বোরো ও আমন মৌসুমে উদ্বৃত্ত উৎপাদন থেকে হিসেব করে জুন পর্যন্ত দেশে ২০.৩১ মিলিয়ন টন চাল মজুদ ছিল। কিন্তু বর্তমান বাজারে চালের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ব্রির এই গবেষণার তথ্য এখন অসাড় হয়ে পড়েছে। কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা চালের মূল্য বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে খাদ্য সংকটের ফলশ্রæতি। দেশের চালের সংকট না থাকলে মূল্য এতটা বৃদ্ধি পাবার কথা নয়। কৃষি গবেষকদের মতে, চালের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে উৎপাদন ঘাটতি। আসলে দেশের ধান উৎপাদন ব্যবস্থায় বহুবিধ ত্রুটির কারণে কখনোই কাঙ্খিত উৎপাদন হয় না।
ইরি-বোরো মৌসুমে চাষাবাদের প্রধান ভ্যারাইটি হলো ব্রি-২৮ ও ব্রি- ২৯। সারা বাংলাদেশ প্রধানত এই দুইটি ভ্যারাইটিই সবচেয়ে বেশির ভাগ চাষাবাদ হয়ে থাকে। লিটারেচার অনুযায়ী এই ভ্যারাইটি দুটির বিঘা প্রতি উৎপাদন হয় ৩০ মন। কিন্তু সঠিক সময়ে চারা রোপনে ব্যর্থতা, সেচ সঙ্কট, প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগে ব্যর্থতা এবং দীর্ঘদিনের চাষাবাদে ভ্যারাইটি দুটি পলিনেটেড হয়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন অর্ধেকের চেয়েও নীচে নেমে গেছে। ধানচাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের জমিতে ৮ থেকে ১০ মনের বেশি ফলন হয় না। আমন মৌসুমে ব্রি-৪৯ ভ্যারাইটি হচ্ছে প্রধান ভ্যারাইটি। সারাদেশে এই ভ্যারাইটিই বেশি চাষাবাদ হয়ে থাকে। এই ভ্যারাইটির ফলনও নানাবিধ কারণে বিঘা প্রতি ১০ মনের বেশি উৎপাদন হয় না। এভাবেই বোরো, আমন আউশ মৌসুমে ধানের ফলন অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। যার কারণে প্রতি মৌসুমী থেকে যাচ্ছে উৎপাদন ঘাটতি।
গত উৎপাদন মৌসুমে থেকে নবান্ন বা অগ্রানি ধান কাটার পূর্ব পর্যন্ত চালের মূল্য বেড়েছে ১৪ দফা। আর এই অগ্রানি ধান কাটার মৌসুমে চালের মূল্য বেড়েছে চার দফা। বাজারে যে মোটা চাল বিক্রি হতো ২৮/২৯ টাকা সেই মোটা চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। চালের এই অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে কারণে হতদরিদ্র দরিদ্র বিত্তহীন নিম্নবিত্তের মানুষদের দৈনন্দিন জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। এর উপর তেল মসলা শাকসবজি মাছ গোশত ইত্যাদির মূল্য পূর্ব থেকেই বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছে চ্যালেঞ্জার বা চালের দাম বাড়িয়েছে পাইকারি বিক্রেতারা পাইকারি বিক্রেতারা বলছে চালের দাম বাড়িয়েছে আড়তদাররা আর আর আড়তদাররা বলছে চালের দাম বাড়িয়েছে মিলাররা। সরকার বা সরকারি সংস্থাগুলো চালের মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারছেনা, আনতে পারছে না আইনের আওতায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন