আগামী বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে চলেছি। স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৯ বছরে বাঙালি জাতি বিশ্বের কাছে আত্মমর্যাদাশীল, আত্মপ্রত্যয়ী এবং উন্নয়ন যাত্রাপথে সাফল্য অর্জনের কঠোর সংগ্রামে অবিচল জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিশ্বকে জানান দিয়ে চলেছে যে বাংলাদেশ এখন একটি আত্মনির্ভরশীল এবং দ্রুত-বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এজন্য ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতির ৪৯তম বিজয় স্মরণী উৎসব পালনের দিবসটি ঘিরে জাতি হিসেবে গর্ববোধ করলেও আত্মতৃপ্তিতে নিমগ্ন না হয়ে আমরা আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে অর্জনের মূল চ্যালেঞ্জগুলোকে স্মরণ করব।
তাই জাতির এ সাফল্যের ধারায় নেতৃত্বদানকারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জ স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই কলামটি লিখছি: শক্তিশালী পদক্ষেপের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য হ্রাস, দুর্নীতির প্রতি ঘোষিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি সত্যিকারভাবে কার্যকর করা, এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে লাইনচ্যুত নির্বাচনী গণতন্ত্রকে লাইনে পুনঃস্থাপন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়লগ্নে এ নব্য-স্বাধীন দেশটি অর্থনৈতিকভাবে আদৌ টিকবে কিনা তা নিয়ে বিশ্বের উন্নয়ন-অর্থনীতিবিদদের গভীর হতাশা ছিল। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে জনসন নামের যুক্তরাষ্ট্রের একজন কূটনীতিক যখন স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ‘ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস’ হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনের তদানীন্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ১৯৭৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট ড. হেনরী কিসিঞ্জার তাতে সায় দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের ওপর ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত ফালান্ড ও পারকিনসনের বিশ্বখ্যাত গবেষণা-পুস্তকটির নামই ছিল বাংলাদেশ- এ টেস্ট কেস অব ডেভেলপমেন্ট। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার অনেক সাধ্য-সাধনা করে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের ‘স্বল্পোন্নত দেশের’ ক্যাটেগরিতে অন্তর্ভুক্ত করাতে সক্ষম হয়েছিল, যাতে বাংলাদেশ এর ফলে বৈদেশিক অনুদান, খাদ্য সহায়তা এবং ‘সফট লোন’ পাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ বিবেচনা পায়।
একইসাথে বঙ্গবন্ধু স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদাহীন ইমেজের ব্যাপারেও সজাগ ছিলেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশকে ওই অপমানজনক অবস্থান থেকে বের করে আনবেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের পর বাংলাদেশের সমরপ্রভুদের অবৈধ সরকারগুলো বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বর্ধিত বৈদেশিক সহায়তার লোভে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণকে সযতনে এড়িয়ে চলেছে। ফলে এক দশকের স্থলে বাংলাদেশের ৪৩ বছর লেগে গেছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সোপানে পৌঁছানোর জন্য।
২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল নির্ধারিত ‘উন্নয়নশীল দেশের’ ক্যাটেগরিতে উত্তরণের ছয় বছরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং ওই প্রক্রিয়ার সফল পরিসমাপ্তির পর ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে। (করোনাভাইরাস মহামারির বিপর্যয়ের কারণে স্বল্পোন্নত দেশের প্রাপ্য সুবিধাগুলো ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেছে।)
এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংকের ‘নিম্ন আয়ের দেশ’ ক্যাটেগরি থেকে বাংলাদেশ ‘নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ’ ক্যাটেগরিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। গত দু’দশক ধরে বাংলাদেশের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৫.৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে ৮.২ শতাংশে পৌঁছে গেছে। করোনাভাইরাস মহামারির আঘাতে ২০১৯-২০ অর্থ-বছরে প্রবৃদ্ধির হার ৫.২৪ শতাংশে নেমে গেলেও বাংলাদেশের মাথাপিছু জিএনআই ২০১৯ অর্থ-বছরের ১৯০৯ ডলার থেকে বেড়ে ২০২০ সালের ৩০ জুন ২০৬৪ ডলারে পৌঁছেছে।
আইএমএফ এর প্রাক্কলন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলনের চাইতে কম হলেও তারা বলছে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি মাইলফলকে পৌঁছাবে। গত ১৪ অক্টোবর ২০২০ তারিখে আইএমএফ ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষের জন্য বিশ্বের অনেকগুলো দেশের প্রাক্কলিত জিডিপি’র পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে, যেখানে চলমান করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে তার হিসাব অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আইএমএফ দাবি করছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মহামারির আঘাতে ভারতীয় অর্থনীতি ১০.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়ে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২০১৯ সালের ২১০০ ডলার থেকে ২০২০ সালে ১৮৭৭ ডলারে নেমে যাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি মহামারির ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ ৩.৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করার ফলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মাথাপিছু প্রাক্কলিত জিডিপি দাঁড়াবে ১৮৮৮ ডলারে। এর মানে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু নমিনাল জিডিপি ভারতের মাথাপিছু জিডিপিকে ছাড়িয়ে যাবে।
এ পূর্বাভাস সারা বিশ্বে প্রবল ঝড় তুলেছে। বিশেষত, ভারতীয়দের মিথ্যা অহমিকা-প্রসূত ‘ইগো’ এ পূর্বাভাসে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু এটা তো শুধু এক বছরের করোনা মহামারির অভিঘাত নয়। পাঁচ বছর আগেও ভারতের মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশের চাইতে ৪০ শতাংশ বেশি ছিল। এরপর গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে ভারতের চাইতে অনেক বেশি হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ভারতের জিডিপি’র ১০.৩ শতাংশ নিগেটিভ প্রবৃদ্ধির হার যখন ২০২০ সালে ভারতের নমিনাল জিডিপিকে ২১০০ ডলার থেকে ১৮৭৭ ডলারে নামিয়ে ফেলছে তখন বাংলাদেশ যে ভারতকে টপকে যাচ্ছে তাতে অবাক হবার কিছু নেই! পাকিস্তানীরা জানে, স্বাধীনতা-উত্তর ৪৯ বছরে উন্নয়নের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। এবার যখন আইএমএফ-এর পূর্বাভাসে মাথাপিছু জিডিপি’তে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তখন এই সংবাদ অনেক পাকিস্তানীর কাছে নাকি ‘ঈদের খুশি’র মতো আনন্দদায়ক মনে হচ্ছে।
কিন্তু মাথাপিছু জিডিপি যেহেতু একটি গড় সূচক তাই মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে যদি দেশে আয়বণ্টনে বৈষম্যও বাড়তে থাকে তাহলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর কাছে পুঞ্জীভ‚ত হওয়ার প্রবণতা শক্তিশালী হতে থাকে।
ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ প্রবৃদ্ধির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। আয়বৈষম্য বৃদ্ধির এ বিপদ এদেশের ১৯৭৫-পরবর্তী শাসকমহল তাদের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক দর্শন ও উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে ডেকে এনেছে। অর্থনীতিতে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি বা হ্রাস পরিমাপ করার জন্য জিনি সহগ সবচেয়ে বহুলব্যবহৃত পরিমাপক। কোনো অর্থনীতির জিনি সহগ যখন বেড়ে ০.৫ এর কাছাকাছি পৌঁছে যায় বা ০.৫ অতিক্রম করে তখন ওই দেশকে উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ অভিহিত করা হয়।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের জিনি সহগ ছিল মাত্র ০.৩৩, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ মোতাবেক সেটা বেড়ে ০.৪৮৩ এ পৌঁছে গেছে। আরেকটি পরিমাপকের গতি-প্রকৃতির মাধ্যমে ২০১০ ও ২০১৬ সালের মধ্যে আয়বৈষম্য বিপজ্জনকভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপক্ষে এবং ৫-১০ শতাংশ ধনাঢ্য গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি ফুটে উঠেছে: ২০১০ সালে দরিদ্রতম ৫ শতাংশ জনসংখ্যার মোট আয় ছিল মোট জিডিপি’র ০.৭৮ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে মাত্র ০.২৩ শতাংশে নেমে গেছে।
২০১০ সালে দরিদ্রতম ১০ শতাংশ জনসংখ্যার মোট আয় ছিল মোট জিডিপি’র ২ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা মাত্র ১.০১ শতাংশে নেমে গেছে। সমস্যার আরেক পিঠে দেখা যাচ্ছে, দেশের ধনাঢ্য ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর দখলে ২০১০ সালে ছিল মোট জিডিপি’র ৩৫.৮৫ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে বেড়ে ৩৮.১৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে। আরো দুঃখজনক হলো, জনগণের সবচেয়ে ধনাঢ্য ৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর দখলে ২০১৬ সালে চলে গেছে মোট জিডিপি’র ২৭.৮৯ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ছিল ২৪.৬১ শতাংশ।
ধনাঢ্য গোষ্ঠীগুলোর দখলে জিডিপি’র ক্রমবর্ধমান অংশ পুঞ্জীভবনের ফল কী হতে পারে তা নাটকীয়ভাবে ধরা পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েলথ এক্স’ এর প্রতিবেদনে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ এ পাঁচ বছরে অতিধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে এক নম্বর স্থানটি দখল করেছে। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক অতিধনীর সংখ্যা বেড়েছে বার্ষিক ১৭.৩ শতাংশ হারে। দেশের আয় এবং সম্পদের এহেন পুঞ্জীভবন বাংলাদেশের রাজনীতিকে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের’ নিকৃষ্ট নজির হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চারটি মূল নীতির মধ্যে ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র পুনঃস্থাপিত হয়েছে।
২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন মহাজোট সে রায়কে সংবিধানে ফিরিয়ে আনলেও শেখ হাসিনার সরকার এখনো ‘মুক্ত বাজার অর্থনীতির’ অহিফেনের মৌতাতে মেতে রয়েছে। ক্রোনি ক্যাপিটালিজম আজও নীতি-প্রণেতাদের কাছে ‘হলি রীটের’ মর্যাদায় বহাল রয়ে গেছে। ২০০১-২০০৫ ওই পাঁচ বছরে পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব-চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করেছিল, এবার বিশ্ব-চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করল ধনকুবেরের সংখ্যাবৃদ্ধির দৌড়ে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এসব ‘রবার ব্যারন’ সুষ্টির জন্য কি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম আমরা? ধিক্ এহেন রাজনীতিকে! আপনি হয়তো ভুলে গেছেন ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে আবারো ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র’! একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আয়বৈষম্য এভাবে বাড়তেই পারে না, যদি শাসকরা সমাজতন্ত্রকে ‘বাত্ কা বাত’্ বানিয়ে না ফেলে!! (২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির জাতীয় সেমিনারের মূল প্রবন্ধে আমি আয়বৈষম্য সমস্যার সমাধানের পথনির্দেশ করেছি।)
এসব ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছেই দেশের খেলাপি ব্যাংকঋণের ৮০ শতাংশেরও বেশি আটকে রয়েছে, এবং খেলাপিঋণের সিংহভাগ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এ ‘রবার ব্যারন’ ব্যাংকঋণ পাচারকারীরা জাতির শত্রু। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইনেন্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির হিসাব মোতাবেক গত এক দশক ধরে প্রতি বছর দেশ থেকে বিদেশে পুঁজিপাচার হয়ে চলেছে গড়ে ৭-৯ বিলিয়ন ডলার।
সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এশিয়ার দেশগুলোর এ বছরের দুর্নীতির র্যাংকিং প্রকাশ করেছে, যেখানে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তকমা জুটেছে ভারতের কপালে আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কম্বোডিয়া। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কিভাবে চ্যাম্পিয়নশীপ এড়ালো জানি না, তবে এখনো এদেশের জনগণের জীবনের সবচেয়ে বেশি দুর্দশা, যাতনা ও হয়রানি ঘটিয়ে চলেছে সর্বব্যাপ্ত দুর্নীতি।
২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করেছিল; কিন্তু গত দু’বছরে শেখ হাসিনা এই অঙ্গীকার পূরণকে সত্যিকার অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মনে হয়নি। তাই আবারো তাকে প্রতিজ্ঞাটি স্মরণ করিয়ে দিলাম।
সবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মিনতি করছি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে লাইনচ্যুত গণতন্ত্রকে আবারো লাইনে পুনঃস্থাপন করুন। আপনারা জনগণের নাড়িস্পন্দন ধরতে পারেননি, ওই নির্বাচনে ব্যালট জবরদখলের মোটেও প্রয়োজন ছিল না। অন্যদিকে, বিএনপিও বিলেত থেকে আমদানি করা চাণক্য-চাল চালছে প্রতিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। বিরোধী দলগুলোকে মনে রাখতে হবে যে এদেশে অদূর ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরত আসবে না।
অতএব, বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি সংশোধনে তাদেরকেও মনোনিবেশ করতেই হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র আবার যে জালিয়াতির দুষ্টচক্রে বন্দি হয়ে গেল তা থেকে আমাদের নিষ্কৃতি মিলবে না সহজে।
দেশে অদূর ভবিষ্যতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে কিনা সে সম্পর্কে জনমনে সর্বনাশা আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গত বারো বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জনগুলো বিশ্বের কাছে দেশটির অতীতের নেতিবাচক ইমেজকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমার মতে, ভবিষ্যতে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে শেখ হাসিনার পুনর্নিবাচিত হওয়ার চাবিকাঠি ধারণ করছে দুর্নীতি, পুঁজি লুণ্ঠন ও পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে তিনি যে সত্যিই আপসহীন সেটা জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। নির্বাচনে জেতার জন্য তাহলে ব্যালট জবরদখলের প্রয়োজন হবে না।
*লেখক : ড. মইনুল ইসলাম, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ, সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন