শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

দ্বীনি শিক্ষা ও ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন

প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন দুই পর্যায়ের মানববন্ধনের প্রথম পর্যায় গত ৪ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত শেষ করেছে। প্রথম পর্যায়ের মানববন্ধনের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে, বিজ্ঞ পাঠকবর্গের তা অজানা নয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের জেলাভিত্তিক মানববন্ধনও অনুরূপভাবে পালনে ব্যত্যয় ঘটবে না বলে আশা করা যায়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কল্পে জমিয়াত কর্তৃপক্ষ জনগণকে সচেতন করার যে ব্যবস্থা করেছে তাতে একটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করার মতো। দেশের সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত শাখাগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জমিয়াতের নীতি-আদর্শের প্রতি ফলন ঘটাচ্ছে। শাখা প্রধানগণের নেতৃত্বে পরিচালিত সব মানববন্ধনই সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব মানববন্ধন চলতি মাস পর্যন্ত চলবে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, জমিয়াতের শাখাগুলোর উদ্যোগ-আয়োজনে অনুষ্ঠিত সব মানববন্ধনে জমিয়াতভুক্ত সকল প্রকারের এবং সকল স্তরের মাদরাসার শিক্ষক, ছাত্র এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর জমিয়াত অনুসারী আলেম-ওলামা ও নেতৃস্থানীয় মুরব্বিগণের অনেকেই অংশগ্রহণ করছেন এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ইসলামবিরোধী ঘৃণ্য অপরাধ ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ বলে আখ্যায়িত করছেন। তারা এসব মারাত্মক তৎপরতার তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এসব অপতৎপরতা ও মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের সাথে বিপথগামী যেসব ছাত্রছাত্রী ও বিভ্রান্তকারীরা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন এবং দোষীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছেন। এসব মানববন্ধনে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত বিপথগামীদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও আত্মহননের মানসিকতা ত্যাগ করে সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আহূত এসব মানববন্ধন সমাবেশে বিজ্ঞজনেরা এ কথাও ব্যক্ত করেছেন যে, বাবা-মা-অভিভাবকদের অবহেলা, উদাসীনতা ও দায়িত্বসচেতনতার অভাবে সমাজের একশ্রেণীর তরুণ-তরুণী ও ছাত্রছাত্রী বিপথগামী হচ্ছে, কিছু স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল ওদের অজ্ঞতা-সরলতার সুযোগে ওদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে এবং ওরা নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছে। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, এদেশের মুসলিম পরিবারগুলো আগে তাদের সন্তানদের শৈশবেই স্থানীয় মসজিদ-মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার জন্য প্রেরণ করত এবং ভোরে দেড়-দুই ঘণ্টা মক্তবে শিক্ষা লাভ করার পর তারা সকাল ১০টায় প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়া করত। কিন্তু সেই মক্তব ব্যবস্থা প্রায় লোপ পেয়ে গেছে। সেই স্থান দখল করেছে কিন্ডারগার্টেন ও কোচিং ব্যবস্থা। পর্যায়ক্রমে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছার পর অনেকের মনমানসিকতা ভিন্নরূপ ধারণ করে এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ যেমন লোপ পায় তেমনি নৈতিকতারও অভাব ঘটে এবং দুষ্ট চক্রের খপ্পরে পড়ে বিপথগামী হয়।
সমাজে সর্বত্র বিরাজমান অপরাধ প্রবণতা, অর্থাৎ সকল অনাচারের মূল ‘উম্মুল খাবায়েস’ ও ‘উম্মুল ফাওয়াহেশ’ তথা সকল প্রকারের ঘৃণিত, অপবিত্র এবং অশ্লীলতার জননী শরাব-মদ। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী ঘোষিত কর্মসূচিতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মাদকাসক্তি রোধের কার্যক্রমকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। জমিয়াতের এটি প্রেরণাদায়ক ও উৎসাহব্যাঞ্জক পদক্ষেপ। জমিয়াতের জন্য এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। সমাজে প্রচলিত সকল অপকর্ম এবং পাপাচার-অনাচার ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে জমিয়াত সর্বদা সোচ্চার। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, ইসলামী শিক্ষা ঐতিহ্যের ধারক ইসলামী নীতি নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের সংরক্ষক জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সাধারণ শিক্ষিত লোকদের সংগঠন নয়, দেশের বিশিষ্ট শিক্ষক, ওলামা এবং পীর-মাশায়েখ ও ইসলামী চিন্তাবিদদের বৃহত্তর অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। সব শ্রেণীর ইসলাম বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, মোহাদ্দেস, মুফতি, মোফাসসের তথা মাশায়েখ ওলামার ঐক্য প্রতিষ্ঠান। তাদের সংখ্যা হবে লাখ লাখ, যাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ তদারকি ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে এবতেদায়ী হতে কামিল পর্যন্ত সকল স্তরের হাজার হাজার মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে প্রায় হাজারখানেক স্বতন্ত্র মহিলা মাদরাসাও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী এবং ভালো ফলাফলসহ প্রতিবছর বেরও হচ্ছে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকম-লীর ঐক্যের জীবন্ত প্রতীক বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। দৈনিক ইনকিলাবের সুযোগ্য সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি। তার নেতৃত্বে পরিচিালিত জমিয়াতের ডাকে দেশের এই কঠিন মুহূর্তে আহূত হয়েছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ কর্মসূচি, যার প্রাথমিক অংশ দুই পর্যায়ের মানববন্ধন এবং বাকি কর্মসূচিগুলোর মধ্যে মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি অন্যতম।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সম্মানিত বিজ্ঞ আলেম ও পীর-মাশায়েখগণ জমিয়াতের আহ্বানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের বিভিন্ন পর্যায়ে যে দীর্ঘ কর্মসূচি আরম্ভ করেছেন তার গভীরতা উপলব্ধি করেই ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং কোরআন ও হাদিসের আলোকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের উৎপত্তির মূলে প্রবেশ করেছেন। কেননা তারা সংগঠনের পক্ষ হতে বারবার সামাজিক অনাচার-পাপাচারগুলো চিহ্নিত করতে গিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে এসেছেন যে, এসবের মূলে রয়েছে হাদিসে রাসূল (সা.)-এর ঘোষণা অনুযায়ী, ‘উম্মুল খাবায়েস’ (সকল ঘৃণিত গর্হিত কাজের) ‘উম্মুল ফাওয়াহেশ’ (সকল অশ্লীলতার) ‘শরাব’ বা মাদকাসক্তি। তাই জমিয়াতের ঘোষিত কর্মসূচিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের পাশাপাশি মাদকাসক্তি রোধের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা অন্য কোনো কর্মসূচিতে স্বতন্ত্রভাবে পরিলক্ষিত হয় না। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১ অক্টোবর হতে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালিত হওয়ার কথা। অতঃপর জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের অনুসৃত রীতি -প্রথা অনুযায়ী ঢাকায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এবং তাতে উপস্থিত থাকবেন দেশের সকল মাদরাসা শিক্ষক, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখগণ। অনুষ্ঠিতব্য এ মহাসম্মেলনে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্তবলী গৃহীত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। এ কথা সত্য যে, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন প্রসারে, নেসাব সংস্কার আধুনিকায়নে এবং আরো নানা ক্ষেত্রে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জমিয়াত তার সাংগঠনিক তৎপরতায় বৈপ্লবিক ভূমিকার মাধ্যমে দেশের সর্বত্র তার শাখা প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষক সমাজকে বৃহত্তর ঐক্যে সমবেত করেছে। দুর্গত-আর্তমানবতার সেবায় জমিয়াতের ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। এসব কর্মযজ্ঞ ছাড়াও দেশে প্রচলিত ও বিদ্যমান নৈতিক অবক্ষয়, নানা পাপাচার, মাদকাসক্তি, জুয়া এবং জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধে কর্মসূচি গ্রহণ করে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। (সমাপ্ত)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন