হোসেন মাহমুদ
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনকে গণবিরোধী আখ্যায়িত করে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ওপর দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন। গত ২৪ আগস্ট গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এ অভিযোগ করেন। তিনি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান।
আগেই বলা হয়েছিল যে বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠেয় এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করবেন। সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘জনমত উপেক্ষা করে দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর জবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দিচ্ছে স্বৈরাচারী সরকার। তিনি বলেন, সুন্দরবনের এত কাছে স্থাপিত কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনিবার্য অশুভ ও মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়ার সব প্রমাণ উপস্থাপনের পরেও সরকার তার অবস্থান পরিবর্তনে শুধু অস্বীকৃতি জানাচ্ছে না- বরং আরও দ্রুত এই গণবিরোধী-দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন ও জনজীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু সেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে যদি দেশ এবং দেশের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জনজীবন বিপর্যস্ত হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়- তাহলে সেই সিদ্ধান্ত হয় দেশ বিরোধী-গণবিরোধী। বাগেরহাট জেলার রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ঠিক তেমনি একটি দেশ বিরোধী-গণবিরোধী সিদ্ধান্ত।’
রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সপক্ষে সরকার যখন প্রবল অবস্থানে অন্যদিকে বিপক্ষে ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের সর্বনাশ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বিরোধীদের প্রতিবাদ-মিছিল অব্যাহত, সে অবস্থায় বেগম জিয়ার এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করল।
এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে যে রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে জণগণের মধ্যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের স্ফূরণ ঘটে ২০১২ সালে এ বিষয়ে ভারতের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের পরই। তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং আরো কিছু দল ও সংগঠন এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। কিন্তু সেসব উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর ভেড়ামারায় বসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন। তারপর থেকে রামপাল অভিমুখী কয়েকটি লংমার্চ হয়েছে। সরকার সেগুলোকে পুলিশের সাহায্যে ভেঙ্গে দেয় বা ব্যর্থ করে দেয়। কিন্তু দেশের অমূল্য সম্পদ সুন্দরবনকে রক্ষার আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। সরকার নানাভাবে বলার বা প্রমাণের চেষ্টা করে চলেছে যে রামপালের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের জন্য বা দেশের জন্য কোনোভাবে ক্ষতিকর হবে না। পরিবেশ দূষণ রোধে সকল ব্যবস্থাই নেওয়া হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরোধীরা তা মানতে পারছেন না। অতি সম্প্রতি সরকার কিছু বিশেষজ্ঞকে দিয়ে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে কথা বলায়। কিন্তু বিরোধীরা এসব বিশেষজ্ঞকে ভাড়াটে বলে আখ্যায়িত করে তাদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতায় তার দলের অবস্থান ব্যক্ত করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সুন্দরবনের এত কাছে পশুর নদীর তীরে রামপাল কয়লা-বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে এবং তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে সুদূর প্রসারী। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য বলে ঘোষিত সুন্দরবন, এই বনের বিরল প্রজাতির পশু-পাখি, বনের ভিতর ও পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী ও খালের মৎস্য সম্পদ এবং বিপুল বনজ সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার যে আশংকা বিজ্ঞানীরা করছেনÑ তার প্রমাণ অসংখ্য।’
বিএনপি প্রধান বলেন, ‘গোটা বিশ্ব যখন আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য বিপদ নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন- তখন জেনে শুনে এই দেশ এবং তার কোটি কোটি অধিবাসীকে নিশ্চিত বিপদের দিকে ঠেলে দেয়ার যে কোনো অপচেষ্টার প্রতিবাদ করার দায়িত্ব আমাদের সবার।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের স্থানেরও অনেক বিকল্প আছে- কিন্তু সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই।’ কাজেই সুন্দরবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়ার হঠকারী, অযৌক্তিক ও অলাভজনক রামপালের কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি তিনি জোর দাবি জানান। এই দাবির পক্ষে সোচ্চার হওয়ার জন্য ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বেগম খালেদা জিয়া।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ভারত বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ। সুন্দরবনের একটি অংশ ভারতের মধ্যেও রয়েছে। সেখানে এ ধরনের পরিবেশ বিধ্বংসী কোনো শিল্প উদ্যোগ কিন্তু গ্রহণ করা হয়নি। একটি অনলাইন বার্তা সংস্থা জানায়, বাংলাদেশে সুন্দরবনের এত কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্তে অনেক ভারতীয় বিশেষজ্ঞই রীতিমতো অবাক হয়েছেন। তারা সবাই প্রায় একবাক্যে বলেছেন, ভারতে হলে সংরক্ষিত অরণ্যের এত কাছে এমন একটি প্ল্যান্ট কিছুতেই অনুমতি পেত না এবং এতে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী, বনভূমি ও নদ-নদীর বিপন্ন হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থেকেই যেত। এ ব্যাপারে দু’দেশের সরকারের অবস্থান যাই হোক না কেন, এই বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত রায় হলোÑ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে সুন্দরবনের জন্য একটা বড়সড় ঝুঁকি কিন্তু রয়েই যাবে। এদেরই একজন হলেন পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রধান ড. কল্যাণ রুদ্র। বিশিষ্ট এই পরিবেশবিদ ও নদী বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতের কোথাও সংরক্ষিত অরণ্যের এত কাছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার কোনও নজির নেই। ভারতে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ীই এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘রেড ক্যাটাগরি ইন্ডাস্ট্রি’র গোত্রে পড়ে; অর্থাৎ এই শিল্প পরিবেশের জন্য অতি বিপজ্জনক, এটা ‘এফ্লুয়েন্ট’ ও ‘এমিশন’ দুটোই করে। সেখানে কোনও অভয়ারণ্যের খুব কাছে এ ধরনের প্ল্যান্ট স্থাপনের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।”
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে দেশের জনগণ ফের দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। লক্ষণীয় যে বিএনপি এতদিন এ বিষয়ে প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করেনি। করলে সরকার হয়তো রামপাল বিরোধী সার্বিক আন্দোলনের চেহারা পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করত। সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয় যে সরকার সমর্থকরা ছাড়া জনগণের বৃহত্তর অংশই জাতীয় সম্পদ ও প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ংকর ছোবল থেকে দেশকে রক্ষার প্রাকৃতিক প্রাচীর সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর সকল কর্মকান্ডের বিরোধী। সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন ইতোমধ্যে জাতীয় আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এখন তা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়ছে বলে পত্র-পত্রিকার খবরে আভাস পাওয়া যায়। কিন্তু এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না বলে ব্যাপক যুক্তি-বক্তব্য দিয়ে সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কয়েক বছর আগে আড়িয়াল বিল এলাকায় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণে জনগণের ঐক্যবদ্ধ বাধার মুখে সে পরিকল্পনা পরিত্যাগ করে সরকার। কেউ কেউ মনে করেন, কোনো অবস্থায়ই সুন্দরবনের ক্ষেত্রে একই অভিজ্ঞতা লাভ করতে সরকার রাজি নয়। ফলে সুন্দরবন ধ্বংস করে এ প্রকল্প নির্মাণ করে লাভ কার, সে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির মীমাংসা চাপা পড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় এতে বিএনপির মতো দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা আপাতদৃষ্টিতে দু’টি বিষয়কে তুলে ধরে। এক, বিএনপি এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর জনগণের কাছাকাছি আসতে চাইছে। আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের এক নেতা বুধবারই সে কথা বলেই ফেলেছেন। তিনি বলেন, রামপালের মাধ্যমে জনগণের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়া। দুই, বিএনপির মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সমর্থন এ আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে পারে। এ বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এ দাবিতে সোচ্চার হতে দেশবাসীর প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বান জানানো থেকে এ কথা মনে করা যায়। তবে আসলে পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় তা এখনি সুস্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।
দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি যে দুঃসময় পাড়ি দিচ্ছে তা দলের নেতা-কর্মীরা যেমন জানেন, সরকারও জানে, দেশের সর্বস্তরের জনগণও জানে। দলের সবাই বলে থাকেন, এমন হামলা-মামলার শিকার তারা এর আগে কখনোই হননি। তাদের কথার সাথে বাস্তবতার যে খুব একটা অমিল নেই তা পরিস্থিতি দৃষ্টেই বলে দেয়া যায়। সর্বশেষ ঘটনায় দেখা যায়, গত ১৮ আগস্ট পাঁচটি মামলায় আদালতে জামিন নিতে গেলে বিজ্ঞ আদালত আসামী বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। রিজভী শারীরিকভাবে অসুস্থ মানুষ। কয়েক মাস আগেই তিনি কারামুক্ত হন। বিগত কিছুদিন থেকেই তিনি গ্রেফতারের আশংকা করছিলেন। তার আইনজীবী সূত্রে বলা হয়, গত তিন বছরে তার নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮৩টি মামলা হয়েছে। এও কি হয়, হতে পারে? হ্যাঁ, বাংলাদেশে বুঝি সবই হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ মামলাই হয়েছে ঢাকায়।
এতো গেল রিজভীর কথা। সারাদেশের অধিকাংশ স্থানেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেউ ভালো নেই। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দাপট আর মামলার শিকার হয়ে অনেকেই, বিশেষ করে তরুণ-যুবক নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া বলে জানা যায়। আর সে কথাটি গত মঙ্গলবার নতুন করে তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৩৫টি নিউজ পোর্টাল বন্ধের প্রতিবাদে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) আয়োজিত সভায় বক্তৃতাকালে পরিস্থিতির বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেন তিনি। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের ‘নির্যাতন’র বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে কেঁদে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সারাদেশে প্রতিনিয়ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। চলাফেরার সময় যানজটে বসে থাকলে হকাররা এসে যখন চিনে ফেলে তখন বলে, স্যার! আমি লক্ষ্মীপুরে বিএনপি করতাম। মামলার কারণে পালিয়ে ঢাকা এসে হকারি করছি। রিকশা চালাচ্ছে আমাদের ছেলেরা। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমরা আছি। ধরে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। কোনো খবর পাওয়া যায় না। গুম হওয়া পরিবারের বাচ্চাগুলো সেদিন এখানে দাঁড়িয়ে বলল, বাবার সঙ্গে ঈদ করতে চাই। এই জন্য কী আমরা যুদ্ধ করেছিলাম?’ তার এই আবেগময় বর্ণনা ও কান্না উপস্থিত অনেকের চোখকেই অশ্রুসিক্ত করে তোলে। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ৩৫টি অনলাইন নিউজপোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছে। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চলছে। বিএনপির অনেক জেলার কার্যালয় তালাবদ্ধ। মাঝে মাঝে খুললেও সেখানে পুলিশ থাকে। কখনো ভেতরে বসে থাকে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও সব সময় পুলিশ বসে থাকে। আবার সাদা পোশাকে পুলিশের লোকজন সেখান থেকে ছোঁ মেরে নেতাকর্মীদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।’
বিএনপির এ সিনিয়র নেতার নিজের কান্না ও অন্যকে কাঁদানোর ঘটনাটি মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। দলীয় নির্যাতিত ও ঘর-বাড়ি ছাড়া নেতা-কর্মীদের প্রতি বিএনপি মহাসচিবের এ সহমর্মিতা দেখে অভিভূত হয়েছেন অনেকেই। দলের মহাসচিব স্বয়ং তাদের কথা ভাবেন এবং তার এ কান্নার মধ্যে গভীর আন্তরিকতার প্রকাশ তাদের মনে এ অনুভূতির সৃষ্টি করেছে যে এ দুঃসময়ে তারা একা নন, দল ও শীর্ষ নেতারাও তাদের সাথে আছেন। একটি দলের কর্মীদের জন্য এটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু এর বিপরীতে যেটা বলা হচ্ছে, একটি রাজনৈতিক দলে উত্থান-পতন আসতেই পারে, দুঃসময়ের মেঘ প্রচ- ঝড় তুলতেই পারে। অনেক সময় প্রতিপক্ষের পাল্টা আঘাতে দল ল-ভ- হয়ে যেতে পারে। সে সময় যোগ্য নেতার দায়িত্ব হচ্ছে প্রবল আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্যসহকারে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা। যেমন করেছেন ভারতে ইন্দিরা গান্ধী বা পাকিস্তানের বেনজীর ভুট্টো, নওয়াজ শরীফ প্রমুখ। হতে পারে যে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে যা করা হচ্ছে গোটা বিশ্বে তা নজিরবিহীন। কিন্তু এর বিপরীতে এটাও তো সত্যের খাতিরে স্বীকার করতে হবে যে বিএনপি তাদের সমর্থক এ দেশের বিপুল সংখ্যক জনগণের সাথে নিবিড়-গভীর যোগসূত্র বজায় রাখতে সক্ষম হয়নি, তাদের কর্মকা-ে জনগণের বিপুল সমর্থন ও শক্তিকে একাত্ম করতে পারেনি। সরকার তাদের স্বার্থে শক্তি ও কৌশলের সমন্বিত ও কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে বিএনপিকে একটি এতিম প্রায় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছে। এর দায় তো বিএনপি শীর্ষ নেতৃবৃন্দেরও কম নয়। বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সে দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন দৃঢ়তা, নতুন রাজনৈতিক কৌশল ও ত্যাগী ভূমিকার। নিজে বারবার জেলে গিয়ে কারাভোগের রেকর্ড সৃষ্টি করে কিছুই হবে না যদি না জনগণকে তারা জনস্বার্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে নামতে উদ্বুদ্ধ করতে না পারেন। কান্না মহত্ত্বের পরিচায়ক, কিন্তু তা কোনো সমাধান আনে না, বরং তা দুর্বলতাকেই প্রকটিত করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মনোবলের দৃঢ়তা, পরিস্থিতির সাথে সমন্বয় ও নতুন পথ নির্দেশনার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের সাথে নতুন পথ রচনায় বলিষ্ঠ ও ক্যারিশম্যাটিক নেতার ভূমিকা পালনের সময় এসেছে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের। দলে গতিশীলতা আনতে ও অস্তিÍত্ব রক্ষার সর্বোচ্চ স্বার্থেই এটা প্রয়োজন। বিএনপির প্রাজ্ঞ শীর্ষ নেতৃত্ব বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে আগামীর রাজনৈতিক সড়কে পা রাখবেন, দেশে দলটির অসংখ্য হতাশা কবলিত সমর্থকসহ শুভানুধ্যায়ী মহলের এটাই প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক
যথসধযসঁফনফ@ুধযড়ড়.পড়স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন