লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির নামে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস-ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিরা পকেট ভারী করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে উপজেলার চরগাজী, চরপোড়াগাছা বড়খেরী, চরআব্দুল্লাহ, চররমিজ, চর আলেকজান্ডার, চরআলগী ও চরবাদাম ইউনিয়ন ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে রামগতি উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ১৬২২ জন শ্রমিকের বিপরীতে ১ কোটি ২৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এই টাকা লুটপাট করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তাদের অনুসারীদের শ্রমিক বানিয়ে অন্তত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে ইউএনও বলছেন, অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অতিউৎসাহী হয়ে চেয়ারম্যান ও পরিষদের সদস্যরা তাদের অনুসারীদের দিয়ে ইউনিয়ন ব্যাপী শ্রমিকদের তালিকা করান। পরে তা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। এতে গোটা উপজেলায় ১৬২২ জন শ্রমিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকায় থাকা শ্রমিকদের কোন কাজে ব্যবহার না করে ভেকু মেশিনে মাটি ভরাট করেন চেয়ারম্যানরা। এমনকি তালিকায় শ্রমিকের নাম থাকলেও তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানেনা এমন অভিযোগও রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের নামে কোটি টাকা বাণিজ্য করেছে ইউপি চেয়ারম্যান-পিআইও ও প্রকল্প কমিটি। ৮টি ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক শ্রমিক ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সরেজমিনে গিয়ে কোন প্রকল্পেই শ্রমিক পাওয়া যায়নি। সবখানে ভেকু মেশিনেই মাটি কাটা হচ্ছে। তাতেও নয়ছয় করে যেন সরকারি টাকা লুটপাটের এক মহা উৎসব চলছে। শ্রমিক নেই, কিন্ত ব্যাংক হিসাবে শ্রমিকের নাম ব্যবহার হচ্ছে ঠিকই। শ্রমিকের নামে একাউন্ট থাকলেও টাকা তুলছেন প্রকল্প সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যানরা। সরেজমিনে গেলে ইউপি সদস্য শেখ ফরিদের অভিযোগ, কাজ হউক বা না হউক শতকরা ২৫ টাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসকে দিতে হবে। না হলে অর্থ ছাড় হবেনা। এমন অভিযোগ প্রায় সবকটি প্রকল্প সভাপতি, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের।
ভুক্তভোগী চরবাদাম ইউনিয়নের রফিক, বালুচর এলাকার বাসিন্দা রায়হান ও চরগাজীর তেগাছীয়া এলাকার ইলিয়াস বলেন, শ্রমিক দেখি নাই। ভেকু মেশিনে মাটি কাটা হচ্ছে। নয় ছয় করে শ্রমিকের টাকা মারার অপর নাম এই ৪০ দিনের কর্মসূচি। কয়েকজন প্রকল্প সভাপতি জানান, পিআইও ও চেয়ারম্যানরা যেভাবে বলছে, তারা সেভাবেই কাজ করছেন। আর কমিশন বাণিজ্যের কারণে শতভাগ কাজ করতে হিমশিম খেতে হয় বলে অভিযোগ করেন তারা।
জানতে চাইলে চর আব্দুল্লাহ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন মন্জু ,আলেকজান্ডার ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পিআইও অফিসকে ২৫% কমিশন দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সরকারি বরাদ্দকৃত অল্প টাকায় রাস্তা নির্মাণ সম্ভব নয়। আর ২শ’ টাকা দিয়ে শ্রমিক পাওয়া যায় না, তাই ভেকু মেশিনে মাটি ভরাট করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে রামগতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রিয়াদ হোসেন কমিশন গ্রহণের বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করে বলেন, শ্রমিক দিয়েই কাজ করা হচ্ছে। অন্য অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মোমিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন আকন্দ বলেন, শ্রমিকের অধিকার নিয়ে নয় ছয় করার কোন সুযোগ নেই। কমিশন বাণিজ্যসহ সব ধরনের অনিয়ম খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন