সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

চিঠিপত্র

হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের ঐতিহ্য

| প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ এএম

খেজুরগাছ আর খেজুরের রসের সাথে শীতের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। শীতকালে খেজুরগাছ থেকে পাওয়া যায় সুমিষ্ট রস, গুড়। ফল হিসেবেও খেজুরের জুড়ি নেই। শীতের মিষ্টিরোদে খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ি খেতে কে না ভালোবাসে? কিন্তু কালের আবর্তে দুঃখজনকভাবে চিরচেনা এ ঐতিহ্য আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। অতি উপকারী এবং শীতের প্রতীক এ খেজুরগাছের যত্ন এখন আর কেউ নিতে চায় না, ফলে অনেক স্থানে ঝোপঝাড়ে আচ্ছন্ন হয়ে বুনোগাছের মতো পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কোথাও বা ইটভাটার উৎকৃষ্ট জ্বালানির স্বীকৃতি পাচ্ছে মূল্যবান এ গাছ। শীতকালে গাছিরা আর যায় না তার কাছে। দা-কাচি, একগাছি রশি, একদন্ড বাঁশ ও কোমড়ে ঝুলানো লম্বা-গোল আকৃতির বিশেষ পাত্র (ঠুঙ্গি) নিয়ে গাছে উঠতেও দেখা যায় না কাউকে। কিছুদিন পূর্বেও হেমন্তের আগমনের সাথেসাথে গাছ কাটার প্রাথমিক কাজ সারার হিরিক পড়ত। গায়ের পথে-ঘাটে, নদী বা পুকুরপাড়ে, বড় রাস্তার দু’ধারে বা ক্ষেতের আলঘেঁষে শতশত গাছের শীর্ষভাগ বিশেষভাবে কাটত গাছিরা। ১৫/১৬টি পাতা রেখে গাছের উপরিভাগের বাকলসহ অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিষ্কার করত। আড়াআড়িভাবে বাঁধা বাঁশের দন্ডে দাঁড়িয়ে কোমড়ে ও গাছে রশি পেঁচিয়ে দাঁড়ালো দা দিয়ে গাছিদের গাছ চাঁছা বা কাটার দারুণ দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। দক্ষিণবঙ্গের যশোহর জেলা খেজুরগাছের জন্য সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরেও উল্লেখযোগ্য খেজুরগাছ জন্মে। দেশের অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক খেজুরগাছ। বর্তমানে যশোহরসহ দেশের সব জায়গা থেকেই খেজুরগাছ বিলীন হতে চলেছে। হারানো এ ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। গাছিদের গাছ কাটার সরঞ্জাম, পোশাক, প্রণোদনা ইত্যাদি প্রদান করার মাধ্যমে তাদের এ কাজে উৎসাহিত করতে হবে, ব্যবস্থা করতে হবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে কৃষকদেরও। তাদের উচিত হবে, গাছিদের মজুরি বা প্রাপ্তি বাড়িয়ে দেয়া। খেজুরগাছ থেকে উৎপাদিত রস ও গুড়ের উপযুক্ত মূল্য দিতে হবে। বনবিভাগ স্বল্প ব্যয়ে রাস্তার পাশে বা ডিভাইডারে বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে হাজার-হাজার খেজুরগাছ রোপণ করতে পারে। রক্ষণাবেক্ষণ এবং রস আহরণের জন্য স্থায়ীভাবে গাছি নিয়োগ দিতে পারে তারা। এতে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে এবং সুযোগ সৃষ্টি হবে অনেক দরিদ্র গাছির কর্মসংস্থানেরও।

মাহতাব উদ্দিন
প্রধান শিক্ষক, প্রাইম স্টার একাডেমি শ্রীপুর, গাজীপুর।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন