দেশে ফিরে একদিনও বিশ্রাম নেননি বঙ্গবন্ধু। শুরু হলো তাঁর স্বাধীন দেশের বিধ্বস্ত ভূমিতে পথচলা। প্রায়-ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন। ধ্বংসস্তুপ চারদিকে। নেই রাস্তাঘাট, নেই চলাচলের বাহন, নেই খাবার সাড়ে সাত কোটি মানুষের, তীব্র শীতে নেই গায়ে দেয়ার বস্ত্র, ব্যবসা নেই, বাণিজ্য নেই, চাষের গরু নেই, বীজ নেই, সার নেই। চারদিকে শুধু নেই নেই। এই নেই নেই-এর মধ্যেই বীরের মতো হাতে তুলে নিলেন দেশ চালানোর দায়িত্ব। অমিত বিক্রমে নেমে পড়লেন কাজে। জানতেন, সামনে শুধু কাজ আর কাজ। করতে হবে সব দ্রুত। বাঁচাতে হবে মানুষকে। থেমে থাকার কোনো জো নেই। চলতে হবে অনবরত, অবিরত। চোখ রাখতে হবে শুধু সামনের দিকে। গড়ে তুলতে হবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটাকে। সাহস যোগাতে হবে দিশেহারা মানুষগুলোর মনে। একই সাথে স্বাধীন দেশটির জন্য আদায় করতে হবে বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি, যা ছিল তখন অতি জরুরি।
শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর আরেকটা যুদ্ধ, সবকিছু পুনর্গঠনের যুদ্ধ, দেশ গড়ার যুদ্ধ, বেঁচে থাকা মানুষদের নিয়ে টিকে থাকার যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধ; স্বাধীনতা-বিরোধী রাজাকার-আলবদরদের স্যাবোটাজ আর আন্তর্জাতিক কুচক্রীমহলের বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বানানোর অপকৌশলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। দেশাত্মবোধে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশসেবা করার মানসিকতা যিনি পোষণ করেছেন সারাজীবন, সেই তিনিই স্বদেশে ফিরে এসে দেশ্রপ্রেমিকের দৃষ্টিটি বিস্তৃত করে দিলেন ভবিষ্যতের দিকে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বহুমুখী ষড়যন্ত্রের মধ্যে ডুবে থেকেও তিনি এক এক করে হাত দিলেন বিভিন্ন সেক্টরের সংস্কারের কাজে। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু পুরোপুরি বিপর্যস্ত দেশকে অভাবনীয় দক্ষতার সাথে পুনর্গঠন করেন। ধ্বংসস্তুপের উপর উন্নয়নের পরশ লাগিয়ে তিনি সজীব করতে থাকেন দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের বদ্বীপ অঞ্চলটিকে।
প্রথম সংস্কারমূলক প্রয়াস কৃষিখাতে। বিপুল জনগোষ্ঠী জড়িত যে কৃষিখাত, সেটিতে সংস্কারের লক্ষ্যে কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত জামির খাজনা মাফসহ ব্যক্তি মালিকানায় পরিবার-প্রতি ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেন। এ ছাড়াও, তাঁর স্বল্পকালীন প্রশাসনিক আমলে তিরিশ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ, কৃষকদের মধ্যে এক লক্ষ আশি হাজার গাভী বিতরণ এবং চল্লিশ হাজার পাম্পের ব্যবস্থাকরণ, ভারতের সাথে আলোচনাক্রমে শুকনো মৌসুমে পদ্মা নদীতে চুয়ান্ন হাজার কিউসেক পানির নিশ্চয়তা লাভসহ গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প চালু করার মতো অভাবনীয় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়। অবিশ্বাস্য কম সময়ের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান তৈরি করেছেন তিনি, পার্লামেন্টে পাস করিয়ে নিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করেছেন এবং সংবিধানের ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে জবাবদিহির বোধ তৈরি করেছেন। এমনকি, আইনের শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে এক বছর সময়ের মধ্যে প্রায় দেড় শত আইন প্রণয়ন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
কালো টাকার মালিকরা ক্ষিপ্ত হবে আর মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা অভিশাপ দেবে, এটা জানা সত্বেও বঙ্গবন্ধু একশত টাকার নোট অচল ঘোষনা করেছিলেন মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমিয়ে জনমানুষকে স্বস্তি দেয়ার লক্ষ্যে। তিনি ফিরে আসতে না পারলে হয়তো এতো কম সময়ের মধ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) তৈরি হতো না। এ পরিকল্পনাতেই তিনি পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান হিসেবে দেশের ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা এবং উন্নয়নে প্রাধিকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্নের বিষয়গুলো তিনি কালির আঁখরে লিখে দিয়েছিলেন সদ্য-স্বাধীন দেশের এ মূল্যবান দলিলটিতে: দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জাতীয় আয় বৃদ্ধি, সমতাভিত্তিক বণ্টন নিশ্চিতকরণ, কৃষি-শিল্পের পুনর্গঠন, উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নয়নমুখী স্থানীয় সরকার-কাঠামো শক্তিশালীকরণ, অভ্যন্তরীণ সম্পদের সর্বোচ্চ সমাবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাসে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট বৃদ্ধি আর সামাজিক চেতনা বিকাশ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করাসহ বহুবিধ জনকল্যাণমূখী পদক্ষেপ। এমনিভাবে তিনি স্বাধীনতার চেতনার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ উন্নয়নলক্ষ্য আর কৌশল নির্ধারণ করে দেন। ফিরে আসার দেড় বছরের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু সরকারি কর্মচারিদের জন্য বেতন কমিশন গঠনসহ দশ-স্তর বিশিষ্ট বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করেন, শ্রমিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেন, চারটি সেক্টর কর্পোরেশন আর তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক গঠন করেন, সারা দেশে ধ্বংসপ্রাপ্ত সব ব্রিজ আর সেতুর নির্মাণ সমাপ্ত করাসহ ৯৭টি নতুন সড়ক-সেতু নির্মাণ করেন। আর এভাবে অর্থনেতিক পুনর্গঠন নিশ্চিত করার ফলে তাঁর শাসনামলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার শতকরা সাত ভাগের বেশি অর্জিত হয়।
তিনি ফিরে না এলে প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা হতো না; ৩৭ হাজার প্রাথমিক স্কুলও সরকারিকরণের আওতাভুক্ত হতো না; ১১ হাজার প্রাথমিক স্কুল নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হতো না; এক লক্ষ পঁয়ষট্টি হাজার প্রাথমিক শিক্ষকও সরকারি হতে পারতেন না; রাষ্ট্রীয় কোষাগার প্রায় শূন্য থাকা সত্বেও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক পেতো না কিংবা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ঘোষিত হতো না; দেশের সকল শিক্ষক নয় মাসের বকেয়া বেতন পেতেন না; নয়শত কলেজ ভবন আর চারশত মাধ্যমিক স্কুলভবন পুনঃনির্মিত হতো না; এমনকি মাত্র পাঁচ মাস সময়ের মধ্যে যুগান্তকারি ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনও গঠিত হতো না। সকল শ্রেণির মানুষের সন্তান-সন্ততিদের প্রাইমারি শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার মতো গণমুখী উদ্যোগ আমরা দেখতে পেতাম না। এমনকি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন কী তা দেশবাসী বুঝতেই পারতো না। বঙ্গবন্ধুই তখনকার ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে কালাকানুনের রাহুগ্রাস থেকে বের করে এনে তিয়াত্তর সালের প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন এবং শিক্ষকতা পেশার একজনকে শিক্ষা-সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার মতো নজিরবিহীন কাজ করেছেন। এর আগে শিক্ষার টেকসই উন্নয়নের ব্যাপারে কেউ মাথা ঘামায়নি। বাহাত্তরের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ‘রাষ্ট্র (ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য, (খ) সমাজের প্রয়োজনের সাহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য, (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’ ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে এমন রূপকল্প অন্তর্ভুক্ত করা একমাত্র তার মতো মহামানব উপস্থিত থাকার কারণেই সম্ভব হয়েছে। স্বাধীকার আন্দোলন আর স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে তিনি অনেক ভাষণে শিক্ষার উপর বিভিন্নভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন এবং তার শিক্ষাভাবনাকে তুলে ধরেছেন, আর স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর দেশে ফিরে এসেই ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপায়িত করার কাজে দ্রুত হাত দিয়েছেন। সদ্য-স্বাধীন দেশের প্রথমাবস্থায় এমন বাস্তবমুখী ভিশনারি নেতা বিশ্বে খুঁজে পাওয়া কঠিন।
তিনি যদি নেতৃত্বে না থাকতেন তাহলে কি ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী প্রায় এক কোটি শরণার্থী দেশে এসে এতো অল্প সময়ে পুনর্বাসিত হতে পারতেন? আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হানাদার বাহিনী আর রাজাকার-দালালদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত তেতাল্লিশ লক্ষ বাসগৃহ নির্মাণের ব্যবস্থা কেউ করতে পারতো কি? তিনি না থাকলে মাত্র আড়াই বছরের মাথায় চুয়াত্তর সালের জুনে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে প্রথম আদমশুমারি সম্পন্ন করার মতো দুরুহ কাজটি কে সম্পন্ন করে দিতো? কে দুই মাস সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতের সোয়া লক্ষ সেনাকে ভারতে ফেরত পাঠাতে পারতো কিংবা কিংবা কয়েক মাস যাবত ভারতীয় সেনাসহ আত্মসমর্পণকৃত নব্বই হাজার হানাদার সেনা আর গ্রেপ্তারকৃত সাইত্রিশ হাজার রাজাকার-দালালের খাদ্য সরবরাহ করতে পারতো? বঙ্গবন্ধুর মতো পরম ধৈর্য আর স্থৈর্যের অধিকারী কৌশলী নেতার পক্ষেই এমনটি করা সম্ভব। তিনি ফিরে না আসলে কেউ কী করতে পারতো এসব?
আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে তো বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল এক কথায় অসাধারণ। মুক্তিযুদ্ধের সময় কট্টর বিরোধী পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি তিনি আদায় করেছিলেন মাত্র তিন মাসের মধ্যে, ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল। একই বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে একশত একুশটি দেশের স্বীকৃতি আদায়সহ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করা ছিল বঙ্গবন্ধুর একটি অনন্য অর্জন, যা পৃথিবীর কোনো নব্য-স্বাধীন দেশের পক্ষে সম্ভব হয়েছে বলে ইতিহাস সাক্ষী দেয় না। এছাড়াও, অবাক করা বিষয় হলো, যে-দেশটির শাসকরা ছিল আমাদের ভুখন্ডটিকে শ্মশান বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত, যারা তিরিশ লক্ষ বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করে এবং মুসলিম নামধারী হয়েও এদেশের লাখো নারীর সম্মান কেড়ে নিয়ে দেশটাকে তাদের পদানত করে রাখতে চেয়েছিল, বঙ্গবন্ধু সে দেশের সরকারের কাছ থেকেও শর্তহীন স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিলেন স্বল্পতম সময়ে।
মাত্র সাড়ে তিন বছর। স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু এ সময়টুকুই পেয়েছিলেন। যদি তিনি না আসতেন তাহলে বাংলাদেশের তখন কী অবস্থা হতো, তা সহজেই অনুমান করা যায় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশকে দেখলে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে সপরিবার নিহত হওয়ার পর প্রায় বিশটি বছর ধরে বাংলার মাটিতে ছিল শুধু ক্রুরতা, হঠকারিতা, ষড়যন্ত্র আর লোভ-লালসার বহিঃপ্রকাশ। উন্নয়নের কাঁটা ঘুরিয়ে দিয়ে পেছনে ঠেলে ফেলে দেয়ার প্রয়াস ছিল সর্বত্র সুস্পষ্ট। তিনি এসেছিলেন বলেই নব্য-স্বাধীন বাংলাদেশ বেঁচে গিয়েছিল বিপর্যয়ের হাত থেকে, ধ্বংসের করাল গ্রাস থেকে। অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার হাত থেকে বঙ্গবন্ধুই রক্ষা করেছেন মুক্ত বাংলাদেশকে। বিশ্বের দরবারে নব্য-স্বাধীন দেশের জন্য একটি মর্যাদার আসন তৈরিসহ তিনি ‘এগার হাজার কোটি টাকার ধ্বংসস্তুপের উপর আরো তের হাজার কোটি টাকার উন্ন্য়নস্তম্ভ দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন’। এমনটি শুধু বঙ্গবন্ধুর মতো মানুষের পক্ষেই সম্ভব। বাংলাদেশের যাত্রা শুরু বঙ্গবন্ধুর যেসব দিকনির্দেশনায়, সেসব নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশ করোনা-মহামারিতেও তাঁরই সুযোগ্যকন্যার পরিশীলিত দূরদর্শী নেতৃত্বে। আরো এগিয়ে যাবে অনেক দূর, বহু দূর।
লেখক: কলামিস্ট; উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন