পানিবদ্ধতামুক্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও ব্যবসাবান্ধব বিশ্বমানের উন্নত নান্দনিক নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে বন্দরনগরীকে পর্যটন রাজধানী হিসাবে গড়ে তোলাসহ ৩৭ দফা অঙ্গীকার করে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, নগরীর বিপুল জনগোষ্ঠীর ন্যুনতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সুযোগ পেলে নগরবাসীর জন্য নিজের মেধা-মনন উৎসর্গ করাই আমার আসল অঙ্গীকার।
এরপর নগরীর জামাল খানের একটি রেস্টুরেন্টে নয় দফা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহার তুলে ধরেন ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, নগর পিতা নয়-নগর সেবক হতে চাই। তিনি পরিচ্ছন্ন ও তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ নগরী গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন। বড় দুই দলের এই দুই মেয়রপ্রার্থী তাদের ইশতেহারে পানিবদ্ধতা ও যানজটকে প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পাহাড় ও পরিবেশ সুরক্ষা করে খাল-নালা দখলমুক্ত করারও অঙ্গীকার করেন তারা। দুজনেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক ও কিশোর গ্যাংমুক্ত শান্তির নগরী গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। দুই ইশতেহারে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতকে সমৃদ্ধ করতে নানা পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। গৃহকর সহনীয় রাখারও ওয়াদা করেন দুই প্রার্থী।
‘রূপসী চট্টগ্রাম আমার আপনার অহঙ্কার, অঙ্গীকার সবার যোগে সাজবে নগর’ স্লোগানে দেওয়া ইশতেহারে রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচিত হলে ১০০ দিনের অগ্রাধিকার হিসাবে দুর্ভোগ লাঘবে সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত তা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১২ বছরে চট্টগ্রাম অনেক দূর এগিয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের সেভেন সিস্টার, চীনের কুনমিং শহর, নেপাল ও ভূটানের আমদানি-রফতানির ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার হবে চট্টগ্রাম। সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় অতীতের সকল ভুল পরিহার করে চট্টগ্রামকে সর্বাধুনিক বাসোপযোগী বিশ্বমানের উন্নত ও নান্দনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কর্পোরেশনকে সেবামূলক ও কল্যাণ-জনমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাব। আমার পূর্বসুরী সাবেক সিটি মেয়র মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যে উচ্চতায় নগরীকে উন্নীত করেছিলেন তা পুনরুদ্ধার করে চলমান রাখবো এবং আয়বর্ধক প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু করে কর্পোরেশনকে স্বনির্ভর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো। এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. অনুপম সেন, চবির সাবেক ভিসি প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রমুখ।
এদিকে ডা. শাহাদাত হোসেন স্বাস্থ্যকর, শিক্ষাবান্ধব, পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ, নান্দনিক পর্যটন নগরী গড়ে তেলার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, নাগরিক অধিকার দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যদি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনই পারে বিদ্যমান উন্নয়ন অংশীদার প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে নগরবাসীর দোরগোড়ায় উন্নয়ন পৌঁছে দিতে। নির্বাচিত হলে আমি আপনাদের সাথে নিয়ে এ প্রচেষ্টায় সফল হবো ইনশাআল্লাহ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে মাদকাসক্তির ঝুঁকি কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নগরবাসীর সুবিধা নিশ্চিত করে পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন আকর্ষণে দেশি-বিদেশি সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে।
যাতায়াত সুবিধার জন্য পরিকল্পিত স্মার্ট নগরীর সৌন্দর্য রক্ষা করে আয়বর্ধক প্রকল্প বৃদ্ধিসহ বাস স্টপ নির্মাণ করা হবে। বন্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহ চালু ও লাভজনক করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বায়ু দূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চালু করা হবে। নগরীর দীঘি ও লেক সমূহকে পর্যটন স্পটে পরিণত করা হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় এনে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়ন, স্কুলে প্রবেশ, প্রস্থান, ক্লাস কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও পরীক্ষার ফলাফল সবকিছু যাতে অভিভাবকরা ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে মনিটরিং করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপি নেতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।
অপরদিকে নগরীতে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার অব্যাহত আছে। শেষ সময়ে পথসভা, মতবিনিময়, গণসংযোগে ব্যস্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। প্রচারে অপ্রীতিকর ঘটনাও থেমে নেই। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের অভিযোগ করছেন দলের নেতারা। নগরীর ৩২টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। দলীয় প্রার্থীর মুখোমুখি তারা। এতে ভোটের মাঠে উত্তাপ বাড়ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা আজ রোববার চট্টগ্রাম আসছেন। সার্কিট হাউসে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন। আগামী ২৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতিও এগিয়ে চলছে।
ব্যবসায়ীদের সাথে রেজাউলের মতবিনিময়
নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিমকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। গতকাল নগরীর আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে তার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের এক মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্যে ‘সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ চট্টগ্রাম’র আহ্বায়ক চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সরকারের সফলতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়যুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চেম্বারের সাবেক সভাপতি এসএম আবুল কালাম। এতে বিভিন্ন চেম্বার, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, নগরীর বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, মার্কেট সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন