চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়ক। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় চাটগাঁবাসী নৌকাকেই বিজয়ী করবে। গতকাল রোববার নির্বাচনী প্রচারে তিনি এসব কথা বলেন। অন্যদিকে জনগণ গণতন্ত্র এবং ধানের শীষের পক্ষে উল্লেখ করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ভোটারেরা বিএনপিকেই বিজয়ী করবে। ভোটের দিন সাধারণ ছুটি না দেয়া চক্রান্তের অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোটারদের ঠেকাতেই ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সকল চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে তিনি চাটগাঁবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
২৭ জানুয়ারি ভোটের দিন সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আজ সোমবার প্রচার শেষ হচ্ছে। তাই প্রতিটি ক্ষণ কাজে লাগাতে মরিয়া প্রার্থীরা। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারে সরগরম গোটা নগরী। উৎসবমুখর পরিবেশে অলিগলিতে চলছে ভোটের প্রচার, মিছিল, স্লোগান, গণসংযোগ।
গতকাল সারাদিন বিভিন্ন সংগঠন ও নির্বাচনী কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সাথে মতবিনিময় পথসভা করে ব্যস্ত সময় পার করেন নৌকার প্রার্থী। সকালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শিক্ষকদের প্যানেল হলুদ দলের উদ্যোগে নৌকার সমর্থনে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। এরপর তিনি আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ভোট কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সাথে মতবিনিময় করেন।
বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন শিল্পীবৃন্দের ব্যানারে নৌকার সমর্থনে গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারের উদ্বোধন করেন তিনি। পথসভায় তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে স্বাধীনতার নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। চট্টগ্রামের মানুষ নৌকাকে বিজয়ী করবে। নির্বাচিত হলে বাসযোগ্য রূপসী চট্টগ্রাম গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন তিনি।
গণসংযোগে নায়ক রিয়াজ আহমেদ, নায়িকা তানভীন সুইটি, অরুনা বিশ্বাস, মীর সাব্বির, তারিন, বিজরী বরকতউল্লাহ, মাহিয়া মাহি, অপু বিশ্বাস, সায়মন সাদিকসহ তারকারা উপস্থিত ছিলেন। পরে নৌকার প্রার্থী বন্দর রিপাবলিকান ক্লাবে মতবিনিময় সভা করেন এবং দক্ষিণ হালিশহর, পতেঙ্গা ও সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। নৌকার সমর্থনে গতকালও নগরীতে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে পথসভা ও গণসংযোগ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে নগরীর উত্তর পতেঙ্গা, দেওয়ান বাজার, বক্সিরহাট ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি ভোটের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে যেতে না পারে সেজন্য পরিকল্পিতভাবে সরকারী ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে কল-কারখানায় লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। ভোটের দিন ভোটাররা তাদের কর্মস্থলে না গিয়ে ভোট কেন্দ্রে কিভাবে যাবে? এতে করে ভোটার উপস্থিতি কমে যাবে। এ সুযোগে সরকারি দল তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নগরীতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালাবে।
নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্ট হাউসগুলোতে চট্টগ্রামের আশপাশের এলাকার বহিরাগতরা অবস্থান করছে। এমনিতে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধিনে যে কোন নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা নেই। ভোটাররা কেন্দ্র বিমুখ হয়ে পড়ছে। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন। সেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করে সরকার ভোটারদের কেন্দ্র বিমুখ করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তিনি ভোট কেন্দ্র দখল করার পাঁয়তারা প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বিএনপি নেতা এ এম নাজিম উদ্দিন, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
নৌকার মিছিলে যুবলীগ নেতাকে ছুরিকাঘাত
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে যুবলীগের প্রচার মিছিলে এক কেন্দ্রীয় নেতা ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছে। গতকাল ষোলশহর দুই নম্বর গেইটে এ ঘটনা ঘটে। ছুরিকাঘাতে আহত আদিত্য নন্দী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক। ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তিনিও চট্টগ্রামে আসেন প্রচার চালাতে। সিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, মিছিলের মধ্যে অতর্কিতভাবে একজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা দেখছি। মিছিলে থাকা কয়েকজন জানান, মিছিলে ব্যানার ধরা নিয়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় আদিত্য নন্দীর পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তাকে জিইসি মোড়ে বেসরকারি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে। তবে ছুরিকাঘাতের বিষয়টি অস্বীকার করে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে প্রচার মিছিলে অনেক লোক ছিল। সেখানে নালার পাশে আদিত্য হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছেন। ওই মিছিলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক শেখ ফজলে নাঈম, বদিউল আলমসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানান মহিউদ্দিন বাচ্চু। জানা গেছে, দলীয় বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন