চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামীকাল বুধবার। রাত পোহালেই ভোট। অথচ উৎসবের আমেজ নেই। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকেরা মুখোমুখি অবস্থানে। গতকাল সোমবার রাতে টানা ১৮ দিনের প্রচার শেষ করেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোট সামনে রেখে সন্ত্রাসী ও ক্যাডার মাস্তান জড়ো করার পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ করছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রধান দুই দলের এমন অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটার ও নগরবাসীর মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে।
বিএনপির মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন গায়েবি মামলায় নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতারের অভিযোগ করেছেন। গণগ্রেফতার বন্ধ না হলে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে অবস্থান কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। ভোটকেন্দ্র দখল করতে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নগরীতে বহিরাগত ক্যাডার মাস্তানদের জড়ো করার অভিযোগও করেন তিনি। নৌকার প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের জড়ো করছে। জনগণ তাদের পক্ষে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনেই তারা এমন আজগবি অভিযোগ করছে।
গতকাল দলীয় কার্যালয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী, মাস্তান, চাঁদাবাজ, ইয়াবা ব্যবসায়ী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতি উৎসাহী কিছু সদস্যের কারণে নির্বাচনের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। সাত দিন ধরে পুলিশ নেতা-কর্মীদের ঘরে থাকতে দিচ্ছে না। ঘরে ঘরে তল্লাশি করে যাদের পাচ্ছে না, তাদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছে, যাতে এলাকা ছেড়ে চলে যান। ইতিমধ্যে ৪০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা করেছে সাতটি। নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিমকে মধ্যরাতে চকবাজার থানা পুলিশ তার ছেলেকেসহ ধরে নিয়ে যায়। বাকলিয়ায় মুন্নী নামের এক কর্মীকে ছোট শিশুসহ গ্রেফতার করেছে।
ভোটের দিন জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া যেন কেউ ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না পারে সেটা নিশ্চিত করার সাথে সাথে এজেন্টদের সুরক্ষা দেয়ার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, বহিরাগতরা যাতে ভোটকেন্দ্রে আসতে না পারে। আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে শাহাদাত বলেন, তারা নোয়াখালী, বান্দরবান, ফেনী, সাতকানিয়াবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে। ওই সময় তারা কেন্দ্র পাহারা দেবেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর জানতে পারি।
এক সময়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অপর সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিএনপি চক্রান্ত করছে। জনগণ তাদের এ চক্রান্ত ভন্ডুল করে দেবে। বীর চট্টলার মানুষ কোনো কাপুরুষকে নয়, একজন বীরকে ভোট দেবে। সেই বীরের নাম রেজাউল করিম চৌধুরী। আহমদ হোসেন বলেন, আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগ মনে করে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস, বন্দুকের নল নয়। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটেই বারবার ক্ষমতায় এসেছে, বন্দুকের নল বা মধ্যরাতের ভোটে আসেনি। চসিক নির্বাচনেও ভোটাররা ভোট দিলে জিতব, না হলে জিতব না। কিন্তু আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করছে-বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি ষড়যন্ত্রের পার্টি। তাদের চোখ আলো দেখে না, জনগণ দেখে না।
এদিকে ভোট সামনে রেখে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের মারমুখি অবস্থান পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলছে। নগরীর ফিরিঙ্গীবাজারে রোববার মধ্যরাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বাসায় গুলি চালানো হয়েছে। পুলিশ সেখান থেকে শর্ট গান ও বন্দুকের সাত রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করে। ওই ওয়ার্ডে এবার দলীয় মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন। আগের কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা হাসান মুরাদ বিপ্লব বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ওই ওয়ার্ডের মতো নগরীর ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডের ৩৪টিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মুখোমুখি বিদ্রোহীরা। ভোটের দিনে এসব এলাকায় সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশাসন ১৭টি ওয়ার্ডকে অতিঝুঁকি প্রবণ হিসাবে চিহ্নিত করছে।
ভোটের প্রচার শুরু হওয়ার পর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের দলীয় বিরোধে খুন হয়েছেন তিন জন। প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি হলেও পুলিশ অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। প্রতিবার ভোটের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হলেও এবার তেমন কিছুই হয়নি। তবে গতকাল সকাল থেকে ২৯ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান, নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ অহেতুক কাউকে হয়রানি করছে না। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে দলমত-নির্বিশেষে যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাদের ধরছে। চকবাজার থানায় বিএনপির এক নেতাকে ধরতে গিয়ে আরেকজনকে ধরেছে। পরে তাকে সসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান দাবি করেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন