মাঘ মাসের শুরু থেকে সৈয়দপুরসহ নীলফামারী অঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে মানুষ ও প্রাণিকূল। শীত আর কনকনে হিমেল হাওয়ার কারণে কষ্ট ভোগ করছে শ্রমজীবীসহ প্রান্তিক জনপদের শীতার্ত মানুষ। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা ১১ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসছে। কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে গোটা জনপদ। যানবাহনগুলোকে দিনে লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উড়োজাহাজের অবতরণ ও উড্ডয়ন। দুপুরের পর উত্তাপহীন সূর্য্যরে দেখা মিললেও তাতে উত্তাপ মিলছে না। কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা ক্ষতির মুখে পড়েছে। বীজতলা রক্ষা করতে জমির ওপর পলিথিন ব্যবহার করছে কৃষকরা।
সৈয়দপুরসহ নীলফামারী অঞ্চলে দিনে ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। প্রচন্ড ঠান্ডায় স্বচ্ছলরা বাড়ির বাইরে আসছে কম, তবে খেটে খাওয়া মানুষ জীবিকার সন্ধানে বের হতে হচ্ছে। শীতের কাঁপুনি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে দিন মজুরদের। শহরের নির্মাণ কাজে আসা মধ্যবয়সী আব্দুর রহমান নামের এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, কনকনে ঠান্ডার কারণে নিয়মিত কাজে যেতে পারছি না। তীব্র ঠান্ডা নিবারণের মত গরম কাপড়ের অভাব রয়েছে। ফলে অতিকষ্টে দিন চলছে। অভাবী মানুষজন শীত নিবারনের জন্য খড় কুটো জ্বালিয়ে অব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এ অবস্থায় গরম কাপড়ের অভাবে শীতের কষ্টে কাহিল হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। উপজেলার শহর ও গ্রাম মিলিয়ে কমপক্ষে ২০ হাজার দুস্থ মানুষ শীতের কবলে পড়ে দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। দুস্থ মানুষের মাঝে দুই ধাপে সরকারিভাবে ৪ হাজার ৩০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদার বিপরীতে কম্বল অপ্রতুল হওয়ায় সবার ভাগ্যে তা জুটছে না। ফলে আরও বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসনে তালিকা পাঠিয়েছে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন। অতিতে শীতের প্রকোপ বাড়লে বেসরকারি সংগঠন শীতার্তদের সহায়তায় শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসলেও এবার সে উদ্যোগ তেমন নেই বললেই চলে।
শীতের তীব্রতা বাড়ায় সবচেয়ে বেশী কষ্ট ভোগ করতে শিশু, নারী ও বয়স্করা। প্রতিদিনই সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত সব শ্রেণীর বিপুলসংখ্যক মানুষ হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ভীড় করছে। শীত থেকে বাঁচতে শহরের ফুটপাত ও রেললাইনের পাশে বসা পুরাতন কাপড়ের দোকানে কাপড় কেনার হিড়িক পড়েছে। ফলে গরম কাপড়ের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে দোকানীরা। কয়েক দিন আগে একখন্ড গরম কাপড় ৫০/৬০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন দাম হাঁকা হচ্ছে ১০০ টাকার উপরে।
গতকাল সৈয়দপুর শহরের পুরাতন শীত বস্ত্রের বাজারে গরম কাপড় ক্রয় করতে আসা, আরজিনা বেগম নামের এক শিক্ষক জানান, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেশী গরীব ও অসহায়। সরকার পৃথিবীর উন্নত ধনী দেশ থেকে পুরাতন গরম কাপড় আমদানী শুরু করেন এ দেশে। মধ্য বিত্ত ও নিম্মমধ্যবিত্তসহ সকল শ্রেণীর মানুষই যাতে কম মূল্যে গরম কাপড় ক্রয় করতে পারে । গতদিনে যে সোয়েটারের মূল্য ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, সে সোয়েটার বর্তমানে ক্রয় করতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। পুরুষ মানুষের একটি জ্যাকেট বা একটি ভাল সোয়েটারের মূল্য ছিল ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। কিন্তু তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। ওই শিক্ষক বলেন, শীত বেশি পড়ায় শীতবস্ত্র ব্যবসায়ীরা বর্তমান আমলে লাভ কম হওয়ার কথা বলে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
রেললাইনে বসা পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী এসকে নোমান জানান, শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের ভীড় বেড়ে গেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।
শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে সৈয়দপুরসহ সারা নীলফামারী জেলার সর্ব স্তরের মানুষের একমাত্র অবলম্বন হল ফুটপাতের পুরাতন শীতবস্ত্র। কিন্তু এবারে তুলনামূলক মূল্য বেশি হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনপদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন