রাত পোহালে ফেনী পৌরসভার কাঙ্খিত নির্বাচন। সকাল ৮ টা থেকে ৪টা পর্যন্ত গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ফেনী পৌরসভার সাধারন ভোটাররা তাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। কিন্তু নির্বাচনকে ঘিরে পৌরসভার সাধারন ভোটারদের মনে উদ্বেগ,উৎকন্ঠা ও শঙ্কা বিরাজ করছে, তারা কেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা, নির্বিঘ্নে তাদের ভোট দিতে পারবে কিনা। অতিতে ফেনীর বিভিন্ন নির্বাচন গুলোতে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি, সংঘাত সহিংসতা হওয়ায় সর্বত্র ফেনীর নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। এ কারনে ফেনীকে “নির্বাচনের ফেনী ষ্টাইল”নামের অপবাদ দেয়া হয় । ফেনী পৌরসভার সাধারন ভোটারদের মাঝে প্রশ্ন থেকে যায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও ফেনী কলঙ্কের খাতায় নাম লেখাবে কিনা এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফেনী পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯১ হাজার ৬শ ৬২ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৮৭ হাজার ৩শ ৭ জন,মহিলা ভোটার ৪৪ হাজার ৩শ ৫৫ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৫টি,ভোট কক্ষের সংখ্যা রয়েছে ২৪১টি। পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী (নৌকা) নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী,বিএনপি মনোনীত প্রার্থী (ধানের শীষ) আলাল উদ্দিন আলাল,জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী (লাঙ্গল)ইয়ামিন হাছান ইমন,চরমোনাই মনোনীত ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী (হাতপাখা) গোলামুর রহমান আযম ও এনডিএম মনোনীত প্রার্থী (সিংহ) তারিকুল ইসলাম। তারা যার যার দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। পৌরসভার ১৮টি সাধারন ওয়ার্ড ও ৬টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ২৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৫ জন কাউন্সিলর ভোটের আগেই কোন প্রতিদ্বন্ধি না থাকায় জয়ের পথে রয়েছেন। বাকী ৮টি সাধারন ওয়ার্ড ও ১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ করা হবে। গত ১৯ দিন আগে দলীয় প্রতিক পেয়ে প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণায় সরব ছিলেন। নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের মাঠে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় ফেনীর পৌর শহরে ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পুরো পৌর শহরে প্রার্থীদের ব্যানার,পোস্টার,পেষ্টুনে ছেয়ে গেছে। আলোক স্বজ্জার বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে ফেনী শহরকে। প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচারণায় মুখরিত ছিল ফেনী শহর। প্রার্থীরা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে-ঘাটে,পাড়া মহল্লায়,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাধারন ভোটারদের ধারে ধায়ে গিয়েছেন। তাদেরকে বিভিন্ন উন্নয়ন কমকান্ডের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দোয়া নিয়ে ভোট চাইতে দেখা গেছে।
নির্বাচনে গত বৃহস্পতিবার আ’লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে এসছেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। পথসভায় তিনি বলেন, উন্নয়ন শান্তির জন্য স্বপন মিয়াজীকে ভোট দিন, তাহলে ফেনীর সাথে শেখ হাসিনার সেতুবন্ধন তৈরি হবে। একইদিন বিএনপির মেয়র প্রার্থী আলালের পক্ষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ভোট চাইতে দেখা গেছে। গণসংযোগকালে তিনি বলেন,এ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কোনটাই অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি। এ সরকারের কাজ হচ্ছে মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া। বিএনপি জনগণের দল। বিএনপি চায় দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসুক। সুষ্টু নির্বাচন হলে ফেনী পৌরসভায় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। এদিকে আ’লীগ মেয়র প্রার্থী স্বপন মিয়াজী আধুনিক পৌরসভা গঠনে ২৩ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন আর বিএনপির মেয়র প্রার্থী আলাল সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত নান্দনিক পৌরসভা গঠনে ১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন। কথা হয় আ’লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজীর সাথে, তিনি ইনকিলাবকে বলেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রচার-প্রচারণায় ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। প্রচারণাকালে জনগণের যে সাড়া পেয়েছি তা দেখে মনে হয় নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। তিনি বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। কারণ নির্বাচনের সুষ্টু পরিবেশ ফেনীতে বিরাজ করছে। কোন ধরনের সংঘাত সহিংসতা, হানাহানি কাটাকাটি কিছুই নেই। আমার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা স্বতঃষ্ফুর্তভাবে তাদের গণসংযোগ চালিয়ে গেছেন। এই শহর একসময় প্রাচ্যের লেবানন ছিল এখন আর সে পরিস্থিতি নেই। ফেনী-২ আসনের সাংস নিজাম উদ্দিন হাজারী ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটৌকল অফিসার আলাউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী নাসিমের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে আজ ফেনীবাসী শান্তিতে আছে। আমরা সন্ত্রাসের রাজনীতি পছন্দ করিনা। আমরা চাই সবাই এই শহরে সুন্দরভাবে বসবাস করুক। কে কি বলল সেগুলো আমার দেখার বিষয় নয়। আমি চাই একটি সুষ্টু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হলে ফেনী পৌরসভাকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে রুপান্তরিত করবেন। জনগণের সুখে দু:খে পাশে থাকবেন।
বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলাল উদ্দিন আলাল ইনকিলাবকে বলেন,ফেনীতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। কিন্তু জনগণের যে আশা আখাঙ্কা ভোট দেয়ার তার একটি সুষ্ঠু পরিবেশ যদি প্রশাসন তৈরি করে দিতে পারে তাহলে বিএনপির ভোটের বিপ্লব ঘটবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে আমার গণসংযোগে কোন বাধাবিপত্তি ছিলনা। তবে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে আমার প্রায় ৫ হাজার পোষ্টার ছিড়ে ফেলা হয়েছে ও আমাদের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের হুমকি .ধমকি দিচ্ছে, তাদের পোষ্টার,ফেষ্টুন, ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়েছে এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে সিসি ক্যামেরা খুলে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা। তিনি আরো বলেন, ফেনী পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন কেন্দ্রে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অবস্থান নিচ্ছেন। এধরনে পরিস্তিতিতে বড় ধরনের সংঘাত, সহিংসতা হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। তিনি এসব বিষয়ে জেলা রিটানিং কর্মকর্তা ও প্রশাসনে চিঠি দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। আলাল বলেন, প্রশাসন যদি ভোটের মাঠে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার নিরাপত্তা না দিতে পারে তাহলে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে ভোটারদেরকে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো। সুষ্টু ভোট হলে বিএনপির ঘাঁটি ফেনীতে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত।
সূত্র জানায়, পৌরসভার সবকটি কেন্দ্রকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র গুলোতে ১ জন এসআইয়ের নেতৃত্বে প্রতিকেন্দ্রে ৭ জন পুলিশ ও ৯ জন আনসার থাকবে। প্রতিটি ম্যাজিষ্ট্রেটের সাথে ৪ জন পুলিশ থাকবে। এছাড়াও নির্বাচনী মাঠে পুলিশের ১৫টি মোবাইল টিম থাকবে। ৮টি স্ট্রাইকিং ফোর্স,জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ৭টি টিম ও পলিশের স্ট্যান্ডবাই টিম মাঠে থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সহ মাঠে মোতায়েন থাকবে ৩ প্লাটুন বিজিবি।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ফেনী পৌর নির্বাচন সফল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী,র্যাব,পুলিশ,বিজিবি ও আনসার সদস্যরা যার যার অবস্থান থেকে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের এখনো পর্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। তিনি আশা করেন একটি অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ফেনীবাসীকে উপহার দিতে পারবেন। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন