বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমানদের বিশাল একটি সংখ্যা বিদ্যমান। সংখ্যার বিচারে, রাষ্ট্রীয় শক্তির বিচারে, অর্থ ও সামর্থের বিচারে মুসলমানগণ দুর্বল এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। মুসলমানদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধিও পাচ্ছে। পাশ্চাত্যে মুসলমানদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছে না যে জিনিসটি সেটা হলো, উম্মাহকেন্দ্রিক বিশ্বভ্রাতৃত্ব।
আজ কোটি কোটি মুসলমান আছে যাদের অন্তরে উম্মাহকেন্দ্রিক ভালোবাসা নেই। দরদ নেই। ঈমানের ভিত্তিতে যে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর পরিচয়, পরিচিতি, অথচ সেই ঈমানের ভিত্তিতে মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক আজ সুদৃঢ় নয়। বড় দুর্বল। বিশেষত: মুসলমানদের যারা শাসক, মুসলমানদের মধ্যে বর্তমানে যারা অর্থ-বিত্তে সমৃদ্ধ, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ঈমানের ভিত্তিতে নয়, বরং ক্ষমতা, দুর্বৃত্তায়ন, লুটপাটের নীতিতে পরস্পরের সাথে সম্পর্কের গভীরতা তৈরি হয়।
যে কারণে সংখ্যার বিচারে মুসলমানরা এত বেশি হওয়া সত্তে¡ও তাদেরকে বর্তমান পৃথিবীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তিগুলো যথাযথ মূল্যায়ন করে না। বিশ্বপরিচালনার রঙ্গমঞ্চে মুসলমানদের উপস্থিতি নেই। পৃথিবীর অনেক দুর্বল শক্তিও মুসলমানদের নসিহত করে। জ্ঞান দেয়। মুসলমানদের মানবাধিকার শিক্ষা দেয়। বড়ই পরিতাপের বিষয়। অথচ বিশ্বের অন্যান্য শক্তিগুলোর মধ্যে বর্বরতার কোন শেষ নেই। অনৈতিকতা, গুন্ডামীপনা, চৌর্যবৃত্তি, দুর্বৃত্তায়ণ সবকিছুতেই তারা সেরা। কিন্তু এসব নিয়ে তাদের সম্পর্কে আলোচনা হয় কম।
মুসলমানদের বিশ্বভ্রাতৃত্ব আল্লাহর তায়ালার অনেক বড় নেয়ামত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেই নিয়ামত থেকে আজ বঞ্চিত। পবিত্র কালামুল্লাহ এর ভাষায়, পৃথিবীর সমস্ত কিছু দিয়েও এই ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব না, যদি না তিনি মেহেরবাণী করে মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক এই সুসম্পর্ক তৈরি করে দেন।
সুরা আনফালের ৬৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : ‘আর তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রীতি ও ঐক্য স্থাপন করেছেন, তুমি যদি পৃথিবীর সমুদয় সম্পদও ব্যয় করতে তবুও তাদের অন্তরে প্রীতি, সদ্ভাব ও ঐক্য স্থাপন করতে পারতে না, কিন্তু আল্লাহই ওদের পরস্পরের মধ্যে প্রীতি ও সদ্ভাব স্থাপন করে দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে তিনি মহাশক্তিমান ও মহাকৌশলী।’
এই আয়াতে এটা খুব পরিস্কার যে, মুসলমানদের মধ্যে আন্তরিক ঐক্য আল্লাহ তায়ালার বড় একটি নেয়ামত। পবিত্র কুরআনে সুরা আল ইমরানের ১০৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেন : ‘আর তোমরা একযোগে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়রূপে ধারণ কর ও বিভক্ত হয়ে যেয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর যে নেয়ামত রয়েছে তা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনিই তোমাদের অন্তঃকরণে প্রীতি স্থাপন করেছিলেন, অতঃপর তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ হলে এবং তোমরা অনলকুন্ডের ধারে ছিলে অনন্তর তিনিই তোমাদের ওটা হতে উদ্ধার করেছেন, এরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করেন যেন তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হও।’
আজো আমরা মনের দিক দিয়ে হাজারো প্রকারে বিভক্ত। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই পারেন এই উম্মাহর মাঝে আবারো সেই ঈমানী ভ্রাতৃত্ব তৈরি করে দিতে। তিনিই পারেন অনৈক্যের সকল বীজ উপড়ে ফেলতে। যাদের মধ্যে সামান্য ঐক্যের চেতনা আছে তাদের উচিত মহান আল্লাহর কাছে উম্মতের ঐক্যের জন্য মনেপ্রাণে দোয়া করা। নিজেদের মধ্যকার সকল অনৈক্যের উৎসগুলো সরিয়ে ফেলা।
আজ মুসলিম উম্মাহ এর মধ্যে ঈমানী ঐক্য গড়ে উঠা সময়ের দাবি। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, আমরা পারছি না। দিন দিন আমরা দুর্বল হচ্ছি। আর শত্রুরা আমাদের এই অনৈক্যের সুযোগ নিচ্ছে। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তোমার রহমত ও করুণার ছায়ায় আশ্রয় দাও। আমাদের মাঝে দ্বীনি মহব্বত ও ঈমানী ঐক্য দান করে দাও- আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন