শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জ্বালানি তেল সঙ্কটে সিলেট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৪ এএম

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সিলেটের পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বলানি তেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সিলেটের গ্যাসফিল্ড খনিগুলো থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন বন্ধ থাকায় ও ঘন ঘন রেলযোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় এই সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। এতে যানবাহনকে প্রয়োজনমত জ্বালানি তেল দিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে পাম্পগুলোকে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে সিলেটের অনেক পেট্রোল পাম্প। এমন শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটের পেট্রোল পাম্পগুলোকে সিলেটের গ্যাসফিল্ড খনি থেকে উৎপাদিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হতো। ফলে চাহিদা পূরণের পরও পাম্পগুলোতে তেলের রিজার্ভ থাকতো। কিন্তু গত ৬ মাস থেকে সেটা বন্ধ করে সিলেটের পাম্প ব্যবসায়ীদেরকে চট্টগ্রাম থেকে ওয়াগনের মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় অনিয়ম। প্রয়োজনমত জ্বালানি সরবরাহ না করা, নিম্নমানের জ্বালানি সরবরাহ, জ্বালানি সরবরাহের প্রধান মাধ্যম রেল যোগাযোগ প্রায় সময় বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে সিলেটের পাম্পে থাকা জ্বালানি তেলের রিজার্ভ শেষ হতে চলেছে। ফলে সিলেটে দিনদিন জ্বালানি তেলের সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সিলেটের পাম্পগুলো বন্ধ করা ছাড়া মালিকদের কিছুই করার থাকবেনা।
পেট্রোল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় পেট্রোল পাম্প রয়েছে ১১৪টি। এরমধ্যে সিলেট নগরীতে ৪৫টিসহ জেলায় রয়েছে ৭০টি পাম্প। এসব পাম্পে প্রতিদিন পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেলের চাহিদা ১০ লাখ লিটারেরও বেশি। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয় অর্ধেকের কম। তাছাড়া নিম্নমানের তেল সরবরাহ করার কারণে ক্রেতাদের ক্ষোভের শিকার হন মালিক কর্তৃপক্ষ। মোবাইল কোর্টে অভিযান পরিচালনার কারণে আর্থিক জরিমানা গুণতে হয় পাম্প মালিকদেরকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগের ১১৪টি পাম্পে জ্বালানি তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে ওয়াগনের মাধ্যমে। কিন্তু ওয়াগন সঙ্কট যেন এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ফলে রিজার্ভ থেকে গ্রাহক চাহিদা পূরণ করতে হয়। এখন রিজার্ভও শেষ হওয়ার পথে। আগে সিলেটের গ্যাস ফিল্ডসমূহের খনি থেকে উত্তোলিত কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে সিলেটের পাম্পে জ্বালানি সরবরাহ করা হতো। তখন সিলেটকে কখনো জ্বালানি তেলের সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়নি। গত ৬ মাস থেকে সিলেটের গ্যাসফিল্ড থেকে পাম্পে জ্বালানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে পরিকল্পিতভাবে সিলেটের পাম্প মালিকদেরকে ওয়াগনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সিলেটের গ্যাসফিল্ড থেকে কার স্বার্থে জ্বালানি তেল উৎপাদন বন্ধ রাখা হচ্ছে এমন প্রশ্নও ছুড়েন অনেক পাম্প মালিক। সিলেটের গ্যাস ফিল্ডস খনি থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন ও সিলেটের পাম্পগুলোর মাঝে তা সরবরাহ না করলে এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয় বলে জানান একাধিক পাম্প মালিক ও জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী।
জানা যায়, তেলের মান ভালো নয় জানিয়ে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সিলেটের গ্যাস ফিল্ডসমূহের খনি থেকে উত্তোলিত কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকে সিলেটের গ্যাসফিল্ড থেকে উৎপাদিত পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিন ক্রয় বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, তেলের মান উন্নয়নে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য করে গড়ে না তুলে পুরো উৎপাদন কার্যক্রমকে বন্ধ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ছেড়ে দেয়ায় পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম উদ্বেগের বিষয়। জ্বালানি তেলের ব্যবসা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান গোলাপগঞ্জের আরপিজিসিএল ও এলপিজি প্লান্ট বেসরকারি পরিচালনায় নিতেই এই অবস্থার সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না-এ নিয়েও শঙ্কা জানিয়েছিলেন তারা।

এ ব্যাপারে বেঙ্গল গ্যাসোলিন পাম্পের স্বত্তাধিকারী ব্যারিস্টার রিয়াশাদ আজিম হক আদনান জানান, সিলেটের জ্বালানি তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রধান মাধ্যম রেলপথ। আর খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ আসে সড়কপথে। কিন্তু বর্তমানে সিলেটের রেলপথ ভয়ঙ্কর হয়ে দাড়িঁয়েছে। যেখানে ২/১দিন পর পর ২০/৩০টা ওয়াগন আসার কথা, সেখানে কখনো কখনো সপ্তাহে আসে ১০ওয়াগন। আর এই অনিয়মিত সরবরাহের কারণে সিলেটের পাম্পগুলোতে জ্বালানি সঙ্কট তীব্র হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগ পেট্রোল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুবায়ের আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটের পেট্রোল পাম্প ব্যবসা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। সিলেটের গ্যাসফিল্ডের পরিবর্তে আমাদেরকে ওয়াগনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। যোগাযোগজনিত ত্রæটির কারণে আমাদের রিজার্ভ শেষ হতে চলেছে। অবিলম্বে রিজার্ভ পূর্ণ করে চাহিদামতো জ্বালানি সরবরাহ করা না গেলে মালিকদের পাম্প বন্ধ করা ছাড়া কোন পথ থাকবেনা। এক্ষেত্রে সিলেটের গ্যাসফিল্ড থেকে সিলেটের পাম্পগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ চালু করার বিকল্প নেই।
এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ডিসেম্বর মাসে সিলেট বিভাগ পেট্রোল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স এসোসিয়েশনের সাথে এক বৈঠকে তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি দাওয়া পেশ করা হয়েছে। আমরা তাদের দাবি দাওয়া সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেছি। তবে পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি তেলে সরবরাহ সঙ্কটের ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই বলে জানান তিনি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন