শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

বাংলাদেশের বাজারের ৮০ ভাগ দেশীয় ব্রান্ডের দখলে

ফ্রিজ নিয়ে ঢাবি মার্কিটিং বিভাগের গবেষণা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশের বর্তমান ফ্রিজ মার্কেটের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মার্কেট শেয়ার দেশীয় ব্র্যন্ডের দখলে। এর মধ্যে এককভাবে দেশী ব্র্যান্ড ওয়ালটনের দখলে ৬৬%। বাকিগুলো মার্সেল, সিঙ্গার ভিশন, মিনিস্টারসহ অন্যান্যদের দখলে। ১১% বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সিঙ্গার, স্যামসাং, শার্প, এলজি উল্লেখযোগ্য। ‘মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ (এমডব্লিউবি) এর এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল সোমাবার দুপুরে ‘বাংলাদেশের ফ্রিজ শিল্পের উপর গবেষণা প্রতিবেদন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন মার্কেটিং বিভাগের এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও এমডব্লিউবি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ড. মো. নাজমুল হোসাইন।

গবেষণাটি করেন মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ও (এমডবিøউবি) সহপ্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, বিভাগের এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. মো. নাজমুল হোসাইন ও ড. রাফিউদ্দীন আহমদ এবং গবেষক সাখাওয়াত হোসেন। গবেষণায় ২ হাজার ৪৪০ জন ফ্রিজ ব্যবহারকারীর উপর মাঠ পর্যায় এবং অনলাইজন জরিপ (মাঠপর্যায় ১৭৭৮, অনলাইন ৬৬২জন), ১০টি ফোকাস দল আলোচনা, ১০টি রিটেইল ষ্টোর অডিট, ১০জন বিশেষজ্ঞের সমীক্ষা, ৩ হাজার ৮৬০টি অনলাইন ক্রেতার প্রতিক্রিয়া, ইলেকট্রনিক প্রডাক্ট রিভিউয়ের মাধ্যমে ১৯৬টি পাবলিক পোস্ট বিশ্লেষণ এবং ৮টি প্রতিষ্ঠানের ৯টি টিভিসি বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষণাটি করা হয়
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রায় দুই দশক ধরে ফ্রিজের বাজার দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এর ব্যবহারের হার শহরের চেয়ে গ্রাম ও উপ-শহরগুলোতে অতি বেশি হারে বাড়ছে। ফ্রিজ মার্কেট প্রবৃদ্ধির জন্য মধ্য ও উচ্চ বিত্তের দ্রুত বিকাশ, ছোট পরিবার ও মহিলা কর্মজীবির সংখ্যা বৃদ্ধি, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে উপ-শহরীকরণ প্রক্রিয়া, কম খরচে দেশীয় ফ্রিজ কেনার সক্ষমতা এবং ফিজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতা বান্ধব শর্তাবলীর (যেমন:কিস্তিতে ক্রয়, ওয়ারেন্টি, ইত্যাদি) কথা উল্লেখ করা হয়।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ২০১০ সাল পর্যন্ত ফ্রিজের বাজার বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো দ্বারা এককভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল এবং দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর মার্কেট শেয়ার ছিল খুবই নগণ্য। ২০১০ সাল থেকে ক্রমবর্ধমানহারে বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো তাদের মার্কেট শেয়ার দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর নিকট হারাতে থাকে। এরফলে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশী ব্র্যান্ড কিনতে হয়নি। একই সঙ্গে শিল্পের বিকাশে বাংলাদেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান বেড়ে চলেছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ২০১৫-২০১৯ এ পাঁচ বছরে ফ্রিজ শিল্প গড়ে ১৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়, দেশীয় ব্র্যান্ডের এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার পেছনে রয়েছে নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, যেমন: স্বয়ংক্রিয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, বিদ্যুত সাশ্রয়ী ইনভার্টার টেকনোলজি, রিয়েল-টাইম টেম্পারেচার ডিসপ্লে, হলিডে মোড, টার্বো মোড, সুপারকুল মোড ইত্যাদি। এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ওয়ালটন, মার্সেল এবং যমুনা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। গবেষণায় অধিকাংশ ক্রেতা দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর উপর সন্তুষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। ক্রেতারা ফ্রিজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিজের সাশ্রয়ী মূল্য, স্থায়িত্ব, বিদ্যুত সাশ্রয়, ডিজাইন, কম্প্রেসার, ওয়ারেন্টি, বিক্রয়োত্তর সেবা এবং অভিনব প্রযুক্তির ব্যবহারকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে ব্যবহারকারীদের ফ্রিজের স্বল্প শীতলীকরণ ক্ষমতা, ওয়াটার লিকেজ ,কম্প্রেসারের উচ্চ শব্দ, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ, বেশি বরফ জমা, নির্দিষ্ট সময় পর পর কম্প্রেসারের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদন থেকে অনলাইনভিত্তিক মার্কেটিং কার্যক্রম বৃদ্ধি করা, ক্রেতা সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করা, বিক্রয়োত্তর সেবার মান বৃদ্ধি করা, নির্দিষ্ট সময় পর কোম্পানির উদ্যোগে ফ্রিজ চেক করার বিষয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে সুপারিশ করা হয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ফ্রিজ কোম্পানিগুলো তা সমাধানের চেষ্টা করলে ব্যবহারকারীদের মধ্যে সন্তুষ্টির মাত্রা আরো বাড়বে বলে উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বলা হয়, দেশীয় কোম্পানীগুলো যে ধরনের বড় বিনিয়োগ করেছে এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে ফ্রিজের চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং এক পর্যায়ে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে সক্ষম হবে। দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো যেন আরো ভাল করতে পারে তার জন্য সকল ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, প্রয়োজনে সরকার বিশেষ পলিসি গ্রহণ করে এই শিল্পের বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে যেমন অনেক বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় সাশ্রয় হবে, তেমনি দেশীয় কোম্পানিগুলো উপকৃত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন