মীর আব্দুল আলীম : দুর্নীতি এতই বিস্তৃত হয়েছে যে, সরকারের আবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজেদের পেনশনের ফাইল ছাড়াতেও একসময়ের সহকর্মীদের ঘুষ দিতে হয়। আর এমন ঘুষ নেয়ার সময় চট্টগ্রামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাংলাদেশ টেলি-কমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর তিন কর্মকর্তাকে হাতেনাতে আটক করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে কয়েক লাখ নগদ টাকা, সঞ্চয়পত্র ও জমির কাগজ জব্দ করা হয়। ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের নন্দনকাননে অবস্থিত বিটিসিএলের কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন বিটিসিএলের নন্দনকানন কার্যালয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী (অভ্যন্তরীণ) প্রদীপ দাশ, প্রধান সহকারী কাম ক্যাশিয়ার মো. গিয়াস উদ্দিন ও টেলিফোন অপারেটর কাম স্টেনোগ্রাফার মো. হুমায়ুন কবির। সাত মাস আগে অবসরে যান আবুল কাশেম ভুঁইয়া। কিন্তু তারই এক সময়ের সহকর্মী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা পেনশনের টাকা তোলার জন্য তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে আসছিলেন। উপায়ন্ত না দেখে, তিনি তাদের ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। কিন্তু এক সময় কর্মরত নিজ অফিসের সহকর্মীদের ঘুষ দেয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি অবসরে যাওয়া ঐ সরকারি চাকুরে। তিনি প্রতিবাদী হন। দুদকে অভিযোগ করে ঘুষ দাবিকারীদের ধরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। আমরা সৎসাহসের জন্য ওই ব্যক্তিটিকে অভিনন্দন জানাই। ঘুষখোরদের শায়েস্তা করার জন্য এমন সাহস আবশ্যক বটে। তার এমন সাহস দেশে উদাহরণ হয়ে থাকবে। অনেকে অনুপ্রেরণাও পাবেন। আতঙ্কে থাকবেন ঘুষখোরগণ। তারা এমন অসৎসাহস দেখানোর আগে ভাববেন- ‘ঘুষ নিতে গিয়ে ফেঁসে যাবো না তো?’ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘুষ খাওয়ার পরিণাম যদি এদের মতো হতো তাহলে অসৎ অধিকাংশ ব্যক্তি ঘুষ না খাওয়ার বিষয়টিই শিখতেন। তবে হয়তো তা হবে না। ঘুষ খেয়ে ঘুষ হজম করার ব্যাপারে আরও কৌশলী হবেন তারা।
ঘুষখোরদের কত না দুঃসাহস! ঘুষের চর্চা এতই সহজাত হয়ে গিয়েছিল যে ঘুষের অর্থ নিজ দপ্তরেই রেখে দিতে দ্বিধা করেননি তারা। চট্টগ্রামে বিটিসিএলের নন্দনকানন কার্যালয়ের প্রধান সহকারী ও বিভাগীয় প্রকৌশলীর (অভ্যন্তরীণ) কক্ষের আলমারি থেকে বের হয় ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও ৮৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। এ আর কি প্রকাশ্যেই অনেক দফতরে ঘুষ লেনদেন করতে দেখা যায়। এক বন্ধু সেদিন এক আড্ডায়, সস্ত্রীক ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ভোগান্তির কথা বর্ণনা করলেন এভাবে। তিনি ও তার স্ত্রী ইমিগ্রেশনের জন্য বিশাল লাইনে দাঁড়িয়েছেন। লাইন একটুও এগোয় না। পরে দেখেন ইমিগ্রেশন অফিসারের পাশে দালালরা হাত ডুকিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়াই পাসপোর্টে সিল মেরে নিচ্ছেন। বন্ধুটি লক্ষ করলেন ঐ কর্মকর্তা পাসপোর্টের ভেতরে থাকা ১শ’ টাকার নোট সরিয়ে ড্রয়ারে রাখছেন। এসব দালাল ইমিগ্রেশনের পক্ষ থেকে নিয়োজিত বলে জানা যায়। দেশের সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং ভ‚মি অফিসগুলোতে কাজের ধরন অনুসারে নাকি ঘুষের পরিমাণ নির্ধারিত থাকে। এটাই প্রচলিত সত্য। পুুলিশ ঘুষ খায় পথে ঘাটে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের বড়বাবুদের ঘুষের কথাতো চট্টগ্রামের মেয়র নাসির প্রকাশ্যেই ফাঁস করে দিলেন। বস্তা ভর্তি ঘুষের টাকা ধরা পড়ায় ফেঁসে গিয়েছিলেন সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। পিয়ন থেকে মন্ত্রী, আমলা, মুন্সি, মাওলানা সবাই ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছেন। সরকারের ছোট-বড় এমন কোনো অফিস খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে ঘুষ লেনদেন হয় না। কিন্তু এভাবে হাতেনাতে ধরা পড়েন ক’জন কর্মকর্তা-কর্মচারী? একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী কতটা বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন চট্টগ্রামের বিটিসিএল অফিসের ঘটনা তার একটি উল্লেখযোগ্য নজির। আমরা যারা ঘুষ দেই তাঁরা সাহসী হলে ঘুষখোরদের দিন একদিন ফুরাবে। তবে যারা ঘুষ দেন, তারা যদি অনৈতিক কোন কাজের জন্য ঘুষ দেন তাহলেতো আর কথা নেই। চুপিসারে হবে সব। দুদকতো দূরের কথা কাকপক্ষীও জানবে এমন সাধ্য কি আছে? মোদ্দা কথা হলো যারা ঘুষ দেন আর যারা ঘুষ নেন সবাইকে এক যোগে ঘুষ না নেয়ার, না দেয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
দেশে দুর্নীতি যে বাড়ছে সাদা চোখেই তা দৃশ্যমান। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি কমিয়ে আনার প্রয়াস থেকেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সদইচ্ছার কমতি নেই। তবে যারা দুর্নীতি বন্ধ করবেন তারা এ ব্যাপারে সচেষ্ট নন। বেতন বৃদ্ধির পর সেবা খাতের কোথাও দুর্নীতি কমেছে এমন কথা শোনা যায়নি। বরং ভুক্তভোগীদের মুখে সেবা খাতের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাশাপাশি জোর করে ঘুষ আদায় করার অভিযোগও কমেনি। সেবা খাতের ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন, ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। দুর্নীতির এই চিত্র যে কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তার উদাহরণ উঠে এসেছে টিআইবির এক প্রতিবেদনে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘সেবা খাতে দুর্নীতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপ বছর ২০১৫ সালে সেবা খাতে মোট ঘুষের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা যা ২০১২ সালের চেয়ে ১ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা বেশি। ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি ঘুষ লেনদেন হয় ভূমি প্রশাসন খাতে, প্রায় ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় ঘুষ লেনদেন হয় ১ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে ১ হাজার ৬১৩ কোটি, বিচারিক সেবা খাতে ৮০৮ কোটি টাকা। ঘুষ ছাড়া সেবা প্রাপ্তি এখন প্রায় দুরূহ।
পৃথিবীর সবদেশেই কমবেশি দুর্নীতি আছে, এই কথাটির আপেক্ষিক সত্যতা মেনে নিয়েও, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় দুর্নীতির ব্যাপকতাকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, এই দুর্নীতি জনগণের মনে ব্যাপক হতাশাবোধের জন্ম দিয়েছে। এই হতাশাবোধের মূল কারণ হচ্ছে যে, দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যকর ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারছে না। একটি গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থার প্রধানতম ভিত্তি হওয়ার কথা এসব প্রতিষ্ঠানের। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অগ্রগণ্য হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, সংবাদ মাধ্যম, সরকারি ও বেসরকারি আমলাতন্ত্র, জাতীয় সংসদ, সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তিখাত। আমরা বিগত কয়েক দশক ধরে এসব প্রতিষ্ঠানকে ক্রমে ধ্বংস বা অকার্যকর করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চালিত করেছি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে যে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দুর্নীতি।
১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার রচিত ‘মুচিরাম গুড়’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘বাঙ্গালা দেশে মনুষ্যত্ব বেতনের ওজনে নির্ণীত হয়। কে কত বড় বাঁদর তার লেজ মাপিয়া ঠিক করিতে হয়।’ তখনকার কেরানী আর চাপরাশিদের চুরিচামারি করে সামান্য ঘুষ গ্রহণের নমুনা দেখেই তিনি লিখেছেন ‘এমন অধঃপতন আর কোনো দেশের হয় নাই।’ ভাগ্যিস বেঁচে নেই সেই সুপ্রসিদ্ধ ঔপন্যাসিক। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এদেশের দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে তার লেখনীতে মহাপ্রলয় ঘটিয়ে ছাড়তেন। হালে দেশে দুর্নীতির আর ঘুষের অবাধ স্বাধীনতায় সাধারণ মানুষ হতাশ। আমরা ভাগ্যাহত এ কারণে এ দেশের জ্ঞানপাপিরা শিক্ষার পাহাড় মাথায় নিয়ে নির্বিচারে নির্লজ্জ ঘুষ গ্রহণ করে চলেছে। আরো হতবাক হই যখন দেশের নীতিনির্ধারক রাজনৈতিক, আমলা, মন্ত্রী, এমপিদের হরেদরে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ পত্র-পত্রিকায় দেখি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি বিখ্যাত কবিতার দুটি চরণ মনে পড়ছে, ‘তিনভাগ গ্রাসিয়াছো একভাগ বাকী/সুরা নাই পাত্র হাতে কাঁপিতেছে সাকী।’ দেশের যা অবস্থা তাতে অবশিষ্ট বোধ করি ১ ভাগও নেই। পদ্মা সেতুর তদন্তাধীন দুর্নীতি প্রমাণ হোক আর নাই হোক সারা বিশ্বের দরবারে আমাদের ইজ্জত যা নষ্ট হওয়ার তাতো হয়েই গেছে। কালো বিড়ালের কাহিনীতেও জাতির পিতার গড়া আওয়ামী লীগের ইজ্জত যথেষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন বছর আগ পর্যন্ত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তাদের বাৎসরিক প্রতিবেদনে পাঁচ বছর এক নাগাড়ে বাংলাদেশকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে অভিহিত করেছে। এমনিতেই দেশের সব মানুষ সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির দৌরাত্ম্যের সাথে কমবেশি পরিচিত, কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতির দায়ে অপদস্থ হওয়ায় দেশের সব সচেতন মানুষের মনে এক ব্যাপক গøানিবোধ সঞ্চারিত হয়। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাংলাদেশের কিংবা ওইসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশিদের কেমন যেন পালিয়ে থাকার মতো অবস্থা। পরিস্থিতি এতই নৈরাশ্যজনক যে, রাষ্ট্র এবং সুশীল সমাজ দুর্নীতির এই বিস্তার প্রতিরোধে ক্রমাগত উদ্যমহীন হয়ে পড়েছে। পরিবারগুলোও তার বাইরে নয়। স্ত্রী প্রশ্ন করছে না, স্বামীর হঠাৎ টাকা প্রাপ্তির উৎস কী? প্রশ্ন করছেন না পিতা-মাতা বা সন্তানরাও।
দুর্নীতির এই সর্বগ্রাসী থাবা থেকে কীভাবে মুক্ত হওয়া যায়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে যে কেন দুর্নীতি হয় বা দুর্নীতি বিস্তারের প্রক্রিয়া কীভাবে বৃদ্ধি পায়। সার্বিকভাবে দেখলে দুর্নীতির ব্যাপকতার সাথে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের একটি সম্পর্ক আছে। একথার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে বলতে হয় যে, কেবল মূল্যবোধের অবক্ষয় বাংলাদেশের দুর্নীতির ব্যাপক প্রসারের প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। কেননা দুর্নীতি পৃথিবীর সবদেশেই কম বেশি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা জনগণের মনে যে পরিমাণ হতাশার সৃষ্টি করে তা তুলনাহীন। দুর্নীতি কেবল ওপর মহলে হয় তাই নয় বরং দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণকে দুর্নীতির প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। এই অংশগ্রহণের কারণ সব ক্ষেত্রেই শুধু লোভ নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই হচ্ছে ন্যূনতম জীবনযাপনের প্রচেষ্টা। এই অসহায়ত্বের সাথে যুক্ত হয়েছে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দৃষ্টান্তের, যেখানে দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির সুযোগ নেই বরং জনগণকে মূল্য দিতে হয় সৎ থাকার জন্য। জনগণের কাছে এই ধারণা ক্রমেই দৃঢ় হয়েছে যে, সমাজে নীতিবান হয়ে থাকার মাঝে কোনো গৌরব নেই বরং আছে বহু ভোগান্তি। সমাজের সুশীল অংশেও ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞা পরিষ্কার নয়। অন্যদিকে বেআইনি পথে থাকার সুবিধা রয়েছে অনেক। জনগণের মনে এই ধারণা যত ক্রমবিকাশমান হচ্ছে, হতাশা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে বিরূপতা তত বেশি বেড়ে যাচ্ছে। এই হতাশার ফল ধরে আমরা হয়ে যাচ্ছি বছরের পর বছর দুর্নীতিতে শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ।
বাংলাদেশ একটি প্রধান দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ- এই ধারণাটি সৃষ্টি হয়েছে দেশের আমজনতার মনে, কারণ বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালনের অবকাশ রাখেনি। সমাজ ও রাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা দেশের জনগণের মনে তীব্র হতাশার সৃষ্টি করেছে, দুর্নীতির পথে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে সৃষ্টি করেছে বাধা। যতদিন এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ভূমিকা কার্যকরভাবে পালন করতে পারবে না, সমাজে দুর্নীতির ব্যাপক দৌরাত্ম্যের প্রতাপ আমাদের দেখে যেতে হবে। দুর্নীতির যে ধারণা আমরা সৃষ্টি করেছি, সেই ধারণাকে বদলাতে হবে আমাদেরই। আর তা করতে হবে কথাকে কাজে পরিণত করার মাধ্যমে। বাংলাদেশ নামের এদেশ আমাদের সবার, তাই আমাদের সবার মিলিত প্রতিরোধে সমাজের সব অনাচার দূর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও সঠিক ভূমিকা থাকতে হবে। আর এসব বিষয়ে সরকার জনতার ন্যায্য সমর্থন পাবে বলেই আমার বিশ্বাস।
সমাজের প্রতিটি স্তরে ঘুষ, দুর্নীতি ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাধি থেকে নিস্তার পাওয়ার পথ হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের বেশকিছু ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার সাধন করা এবং উন্নয়ন ঘটানো। এ জন্য আমাদের রাজনীতিক, মন্ত্রী, আমলা আর দেশের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তনেরও কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতি কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সেবা খাতের এই দুর্নীতিই সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে বাধ্যিগ্রস্ত করে তুলছে। আজ দুর্নীতি যেভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে ছেয়ে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ যার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে তার পেছনে রয়েছে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া। বেশিরভাগ সময়েই যারা দুর্নীতি করেন তারা পার পেয়ে যান। দুর্নীতির অভিযোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমলে নেওয়া হয় না, দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শাস্তি পায় না, ফলে দুর্নীতি রোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতি রোধে আইনের কঠোরতা বাড়াতে হবে সর্বোপরি এ জাতীয় অপরাধে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
newsstore13@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন