বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কলাপাড়ায় লকডাউনের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীনরা এক যুবকের ভালবাসায় সিক্ত

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০২১, ৯:১২ পিএম

কলাপাড়ার নাচনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মিন্টু। একজন ভূমিহীন অসহায় মানুষ। সাপ্লাই এন্ড সোসাইটির জমিতে মাটি ভাড়া দিয়ে একটা টিনসেট ঘর তুলে বসবাস করে। বৃদ্ধ বাবা আজিজুল হক প্রায় শয্যাশায়ী। মা হালিমা খাতুনও বৃদ্ধা খানিক ভাল তো খানিক মন্দ। ছোট বেলা থেকে অভাব-অনটনে কাটে জীবন। যে বয়সে তার স্কুলে কাটানোর কথা সেই সময়টা কাটে মানুষের বাড়িতে গরু-মহিষের রাখাল হিসেবে। সোমবার দুপুরের দিকে কলাপাড়া ফেরিঘাটে এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে ভাত খাইয়ে দিতে দেখা যায় মিন্টুকে। এ সময় তার সাথে ছিল জগন্নাথ আখড়াবাড়ী এলাকার তন্ময় কুন্ডু। নিজেদের দুঃখ কষ্ট উপলব্ধি করে এ কাজে নেমেছেন তারা। ২০২০ সালের লকডাউন চলাকালে মানসিক ভারসাম্যহীনদের দু'বেলা খাবারের ব্যবস্থা চালু করেন তারা। তারই ধারাবাহিকতায় এই সময়ে মানসিক ভারসাম্যহীনদের খাবারের ব্যবস্থা চালু করেন তারা।

মো: মোজাম্মেল হক মিন্টু গণমাধ্যমকে জানান, পাগল-প্রতিবন্ধীরা বিধাতার সৃষ্টি রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ। ওদেরও আছে দু-মুঠো খেয়ে পড়ে বাঁচার অধিকার। লকডাউনে ওদের দিকে তাকানোর সময়ই কারো নেই। তবে ওরা কি খেয়ে বাঁচবে বলে কেঁদে ফেললেন এখন হোটেল বয়ের কাজ করে। ছোট বেলার কষ্টের কথাগুলো মনে পরে। যখন দেখে কেউ রাস্তায় পড়ে থাকে অনাহারে তখন মোজাম্মেলের খুব কষ্ট হয়। তখনই ঠিক করি আমি যে বেতন পাই তার এক ভাগ ব্যয় করবো রাস্তায় যারা মানসিক প্রতিবন্ধী আছে তাদের জন্য। আর অনেক আগ থেকেই আমি সেই অসহায়দের প্রতিদিন এক বেলা খাবার দেই। তারপরও আমার মনে হয় মানুষিক রোগীদের জন্য এটা কম হয়ে যাচ্ছে। তাই ওদেরকে আমি গোসল করাই, চুল সেভ, নখ কাটানো শুরু করি। মানুষের বাসার পুরনো কাপড় চোপড় চেয়ে এনে ওদের পরিয়ে দেই। আর একবেলা খাবার দেই। তিনি বলেন, সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেনো এই কাজটি চালিয়ে যেতে পারি। অনেকে অনেক কথা বলে যা আমাকে চুপ করে হজম করতে হয়। তিনি সমাজের বিত্তবানদের ওদের পাশে থাকার আহবান জানান।

এদিকে মহামারী করোনা পরিস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র। এতে হোটেল-মোটেল সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে সৈকতের আশপাশে অবস্থান করা মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ এবং কুকুর। এই উপলব্ধি থেকে এইসকল অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন "কুয়াকাটা জন্মভূমি" নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতিদিন মানসিক ভারসাম্যহীন এবং কুকুরকে দু'বেলা খাবার দিচ্ছেন তারা।

কুয়াকাটা জন্মভূমি'র সভাপতি কে,এম বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেন, নিজস্ব এবং সংগৃহীত তহবিল থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন ২০/২৫ জনকে প্রতিদিন দু'বেলা খাবার দিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, অভুক্ত এই মানুষ এবং কুকুরগুলোর বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। গত লকডাউন থেকে এই কার্যক্রম করছি বলে জানিয়েছেন তিনি।

ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) সভাপতি ইমতিয়াজ তুষার এ প্রতিবেদককে বলেন, কুয়াকাটা জন্মভূমি ক্লাবের এ কার্যক্রম অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তিনি আরও বলেন, সমাজের বিত্তবানদের এই কাজে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসানাত মো: শহীদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, তারা দুজন মানবতার সেবায় নিয়োজিত। তাদের এই ভালো কাজে ইতিমধ্যেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজে যারা এগিয়ে আসবে তাদের পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন