উপজেলা পর্যায়ের একজন সরকারী কর্মকর্তা। স্ত্রী ও সন্তানকে বানিয়েছেন টাকার কুমির। গৃহিনী স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছেলের নামে চা বাগানের দশ কোটি টাকার বেশী শেয়ার কিনে নিয়েছেন। ঢাকায় একাধিক ফ্লাট, দামী গাড়ী কোটি টাকার জমি’র মালিকও হয়েছেন। সরকারী কর্মকর্তা হয়ে এক চেকে এক কোটি টাকা তুলে নিয়ে চকম সৃষ্টি করেছেন। সরকারী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের নাজেহাল করার অভিযোগ বিস্তর। সরকারী নিয়মে নয় তিনি তার নিয়মেই যখন ইচ্ছে তখন অফিসে আসেন। ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগতো রয়েছেই। অজ্ঞাত কারনে স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছে না। কোন কুল কিরানা না পেয়ে ভুক্তভোগী এক শিক্ষক দূর্ণীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেছে। যার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ তিনি হলেন দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বোরহান উদ্দিন।
দূর্ণীতি দমন কমিশনে লিখিতভাবে দায়ের করা অভিযোগ পত্রের সুত্র অনুযায়ী, দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বোরহান উদ্দিন এর দূর্ণীতির কারনে উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। মাসের অধিকাংশ সময়ে সে অফিস না করে ঢাকা ও পঞ্চগড়ে অবস্থান করেন। এর আগে পঞ্চগড় সদরে শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ঘুষ বানিজ্যের পাশাপাশি অবৈধ অর্থ উপার্জনের সা¤্রাজ্য গড়ে তোলে। টাকা দাও কাজ নাও এই নীতিতে চলা শিক্ষা কর্মকর্তা’র বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেই সাহস পেতো। অবহেলিত উত্তরের জনপদ পঞ্চগড় নুতনভাবে গড়ে উঠতে থাকে। নূড়ী পাথরের শহর হিসাবে পরিচিত পঞ্চগড়ে চা আবাদের সম্ভাবনা উজ্জল হয়ে উঠে। বাড়তে থাকে জমির মুল্য। পঞ্চগড়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় বোরহান উদ্দিন নামে বেনামে জমি কিনতে থাকে। গড়ে তুলেছেন গরু ও মৎস খামার। চা বাগানের জন্য ক্রয় করা জমি উচ্চ দামে বিক্রি করতে থাকেন। চা শিল্পের সফল উদ্যোক্তা জনৈক আবদুর রাজ্জাকসহ অপরাপর দুই সহযোগী’র কাছে মোটা অংকের বিনিময়ে জমি বিক্রি করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত বোরহান উদ্দিন। প্রাথমিকভাবে ৬৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা থাকায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে কাজী এ, এন, এম আমিনুল হক অপর দুই সদস্য আবদুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম এর যৌথ মালিকানায় উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ড্রাষ্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যাংক ঋনে চা বাগানটি’র কলোবর বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে দ্রুত বর্ধনশীল চা বাগানটির ৫৫ শতাংশ কিনে নেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ বোরহান উদ্দিন সন্তান ও স্ত্রীর বড়বোনের স্বামীর (ভায়রাভাই) নামে। তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছেলে মোঃ শাইয়ান সাদিক এর নামে ৩৫ শতাংশ, স্ত্রী আইরিন পারভিন এর ১০ শতাংশ এবং ভায়রাভাই মোঃ শাহ আলমের নামে ১০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়ে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী এ, এন এম আমিনুল হক এর স্বাক্ষর সম্বিলিত একটি পত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরন করা হয়। যদিও শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে ছলচাতুরী’র আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ রয়েছে বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া কেউ কারো শেয়ার ইচেছ করলেই এককভাবে নিজ ইচ্ছে মত বিক্রি করতে পারেন না বলে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান। তার মতে কোম্পানী আইনে কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা পথনির্দেশিকা রয়েছে। এর বাহিরে কেউ সে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হউক আর পরিচালক হউক যেয়ে কিছু করতে পারবে না।
এছাড়া একজন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছেলে, স্ত্রী (গৃহীনি) কিভাবে ১০ কোটি টাকার মালিক হলেন এটাও দেখার বিষয় রয়েছে। সন্তান, স্ত্রী ও ভায়রাভাইয়ের নামে সর্বসাকুল্যে ১১ কোটি টাকারও বেশী শেয়ার কিনা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার কালো টাকা লুকানোর পাশাপাশি চা বাগানের মালিক বনে গেছেন। আরও আশ্চর্যজনক হলেও উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে নেয়া এক কোটি ১৩ লক্ষ টাকার একটি চেক দিয়ে টাকা তুলে নেন। গত ১৮-০৯-২০১৯ তারিখে সিডিসি চেক নং ৭৩২৫৬২৮ রুপালী ব্যাংক লিঃ ঢাকার দিলকুশা লোকাল অফিস শাখা থেকে উত্তোলিত এই টাকা দেয়া এবং নেয়া দুটোই অবৈধ। কেননা বোরহান উদ্দিন নামে কেউ উত্তরা গ্রীন টি ইন্ড্রাষ্ট্রিজ এর সাথে কোন ব্যবসায়ীক লেন-দেন নাই। এছাড়া বোরহান উদ্দিনতো একজন সরকারী কর্মকর্তা ? দ্বিতীয়ত কোন কোম্পানীর চেয়ারম্যান এককভাবে এত বড় চেকও পর্ষদের স্বিদ্ধান্ত ছাড়া দিতে পারেন না। প্রকৃতক্ষেত্রে ঐ টাকা’র কোন বৈধতা নাই। যা ইতিমধ্যেই আরেক পরিচালক লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে। সহজ সরল সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামকে ঢাকা’র বাড়ী বিক্রি করে টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উক্ত চেকটি হাতিয়ে নিয়েছিলেন। চা বাগান করার জন্য জমি ক্রয়ের সময়ে বোরহানের প্রতি আমিনুলের কৃতজ্ঞতাবোধের কারনেই এই চেক দিয়েছিলেন তার ঢাকার বাড়ী উদ্ধারের জন্য। পরবর্তীতে বোরহানের জাল জ্বালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সর্বশান্ত হওয়া আমিনুল ইসলাম মৃত্যুর মুখে পতিত হোন।
অভিযোগ মতে উপজেলা পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা হয়ে চা বাগানের পাশাপাশি গরুর খামার ঢাকায় একাধিক ফ্লাট (অভিযোগে ফ্লাট নম্বর ও ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে), দামী গাড়ী এবং কয়েকটি ব্যাংকে কয়েক কোটি জমা থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা তার ছেলে, স্ত্রী ও ভায়রা’র নামে কেনা শেয়ারের সুত্রে পঞ্চগড়ের উত্তরা গ্রীণ টি কোম্পানী দখলের চেষ্টা চালায় বলে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগের খবর পাওয়া গেছে। উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন সবকিছুই অবহিত আছেন। কিন্তু উপরের কোন একটি মহলের চাপে কিছু করতে পারছেন না। তবে এবার দূর্ণীতি দমন কমিশন বরাবরে তথ্যভিক্তিক অভিযোগ তদন্ত হলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন