শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সাংবাদিকদের শিক্ষা দিতে চায় সরকার

জাতীয় প্রেসক্লাবে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

রোজিনাকে কারাগারে পাঠিয়ে সরকার সাংবাদিকদের শিক্ষা দিতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য রোজিনাকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, তার জামিন হচ্ছে না। নিপুণ রায় চৌধুরীর জামিন হয় না কেনো? প্রধানত কারণ হচ্ছে সে একজন প্রতিবাদী মেয়ে। তুমি এতো প্রতিবাদী হবে কেনো? তারা শিক্ষা দিতে চায়। রোজিনাকেও শিক্ষা দিতে চায়, তাকে দেখিয়ে সব সাংবাদিক ভাইয়েদের দেখাতে চায়- দেখো বেশি নাচানাচি করো না। এটাই হচ্ছে ফ্যাসিস্টের চরিত্র। গোটা মানুষকে ভয় দেখিয়ে তাদের স্তব্ধ করে দিতে চায়।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, রুহুল আমিন গাজী, বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরীসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের বিভক্তি ছেড়ে একাট্টা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিকদের মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। আমি অনুরোধ করবো বিভক্তি রাখবেন না। একটা-দুইটা-তিনটা-চারটা ইউনিয়ন, অ্যাসোসিয়েশন। তাহলে কী হচ্ছে? এতে যে বক্তব্য, কথা বলা হয় সেটা জোর পাচ্ছে না। আজকে সবাই মিলে একজোট হয়ে বলেন যে, সাংবাদিক নির্যাতন চলবে না, নির্যাতন চলবে না। তাহলে দেখবেন যে আস্তে আস্তে সম্মান বাড়ে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধু একটা অনুরোধ থাকবে, আপনারা অন্যায়কে অন্যায় বলবেন, কালোকে কালো বলেন, সাদাকে সাদা বলেন। আসুন নিজের দেশটাকে বাঁচানোর জন্য আমরা সবাই মাথা তুলে দাঁড়াই, অন্তত একবার দাঁড়াই। তাহলে দেখবেন অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী ৭-৮ মাস হচ্ছে জেলে। কেনো জেলে? ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অপরাধে। এই আইনটি করার সময়ে সাংবাদিক ভাইয়েরা আন্দোলন করেছিলেন, দাবি জানিয়েছিলো যেন এই আইন না করা হয়। দেখা গেলো সেটাই ভেঙ্গে গেলো, বেহেস্তে গেলো। লোভের কাছে মাথা নত করা যাবে না, নিজের কাছে মাথানত করা যাবে না। নিজেকে বাঁচানোর জন্যে, নিজে ভালো থাকব, নিজে ভালো গাড়ি চড়ব, নিজের এপার্টমেন্ট ভালো পাব এই করে যদি চিন্তা করি তাহলে সাংবাদিক কমিউনিটিকে বাঁচানো যাবে না, গণমাধ্যমকে বাঁচানো যাবে না।
করোনা ও আওয়ামী লীগ সরকারকে দানবের সাথে তুলনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুইটি দানব আমাদের আক্রমণ করেছে। একটি হচ্ছে করোনাভাইরাস, আরেকটি হচ্ছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। কোবিভ দানব তো আসলে গোটা বিশ্বকে একদম তছনছ করে দিয়েছে। এখন বর্তমান সরকার এই দানবের মতোই বাংলাদেশের ৫০ বছরের যত অর্জন, তারও আগের থেকে স্বাধীনতার জন্য আমাদের আন্দোলন-যুদ্ধের যে অর্জন সব কিছুকেই এই আওয়ামী লীগ সরকারের দানব একদম লণ্ডভণ্ড-ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।
গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, দলের নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরীকে একটা মিথ্যা অডিও ক্লিফ তৈরি করে আমাদেরই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করিয়ে তাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলো। সে নাকী নাশকতায় উস্কানি দিচ্ছিলো। এরকম মামলা তো আমাদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৫০টার বেশি। ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একই মামলা, একই সময়ে ৭টি স্থানে বোমা মারা- এটা জোক নয়। এদেশের রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে এরকম মামলা হয়, সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর বিরুদ্ধে এই ধরণের মামলা হয়। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আমাদের সংবাদ মাধ্যম কিন্তু সে বিষয়ে খুব জোরে-শোরে কথা বলেন না, দুর্ভাগ্য আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে মিথ্যা মামলা চললো, সেই মিথ্যা মামলাকে সেইভাবে মিরিট-টেরিট নিয়ে সেই নামী-দামী পত্রিকাগুলোতে কোনো ফিচার লেখতে আমি দেখিনি। এটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। মানুষ জেগে উঠবে, এই সরকারের পতন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রোজিনা ইসলামকে যে কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সাগর-রুনির হত্যার মনে হয় এর সাথে যোগসূত্র-সামঞ্জস্য আছে। এটা সাধারণ মানুষ মনে করে। রাষ্ট্রীয় সিক্রেট ডকুমেন্ট রোজিনা চুরি করেছে। কিন্তু যে ডকুমেন্টটা চুরি করলো সেটা কী আপনারা মামলার নথিতে আলামত হিসেবে দিয়েছেন। দেন নাই। সেই রাষ্ট্রীয় সিক্রেসীটা কী? যেটা জানলে দেশে-বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এমন কাজ করেন কেনো? যে কাজ করলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়-এটা তো অপরাধ।
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, বর্তমান সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, মহিলা দলের নেত্রী নাজমুন নাহার বেবী, নেওয়াজ হালিমা আরলী, নিলোফার চৌধুরী মনি প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন