নিউ মার্কেট এলাকায় দোকানকর্মীদের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বন্ধে পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সংঘর্ষে একজনের প্রাণ গেছে এবং কয়েকজন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেছেন যে, “স্ট্রাটেজিক কারণে আমরা (পুলিশ) নিষ্ক্রিয় ছিলাম।” কোন স্ট্রাটেজিক কারণে আপনারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন?
গতকাল বুধবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে দলের গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের ঈদ সহযোগিতা দিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাঁচ পরিবারের সদস্যদের তারেক রহমানের ঈদ শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন মির্জা ফখরুল।
এসময় তিনি বলেন, এই কথা বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না যে, এই সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, এই ব্যর্থ সরকার এখন রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করেছে। এটা একটা ফেল্ড স্টেট। কোথাও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের স্ট্রাটেজি ছিল মানুষ নিহত হবে, সমস্যা তৈরি হবে, সেটা নিয়ে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করবে।
তিনি বলেন, কোন স্ট্রাটেজিক কারণে যখন বিএনপির ছোট-খাটো কর্মসূচি থাকে তা প্রতিরোধ করার জন্য শত শত হাজার হাজার পুলিশ মুহুর্তের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়। কোন স্ট্রাটেজিক কারণে গুলি করে বিএনপির মিছিলগুলো স্তব্ধ করে, মানুষ হত্যা করে বিরোধী দলের যে বৈধ আন্দোলন সেটাতে ব্যাহত করে দেয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে পুলিশকে জবাবদিহি করতে হয় না, অন্যান্য ডিপার্টমেন্টগুলোকে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না, চুরি করে, দুর্নীতি করে সেখানে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। এই যে এতোগুলো দুর্নীতির খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হলো, আমরা বললাম তারপরেও সেগুলোর বিষয়ে কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি দুদক।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে খবর বেরিয়েছে কুষ্টিয়ার স্কুল শিক্ষিকা শত কোটি টাকার উপরে তার সম্পদ, তার স্বামী উপজেলা চেয়ারম্যান তার হাজার কোটি টাকার উপরে সম্পদ এবং তিনি একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। প্রত্যেকটি জেলা, প্রত্যেকটি উপজেলায় এবংকি ইউনিয়নের পর্যন্ত দুর্নীতি করছে ওরা। প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা ও আইনমন্ত্রীর ফাঁস হওয়া কথোপকথনের বিষয়ে তদন্ত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে দুর্নীতির দমন কমিশনের চিঠি দেয়ার কথাও জানিয়ে তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। যেটা কোনো মতেই কোনো মামলা হতে পারে না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা আবার শুরু করতে যাচ্ছে। অথচ সরকারের দুর্নীতির কোনো তদন্ত দুদক করছে না। এই দুদকে পুরোপুরিভাবে দলীয়করণের মধ্যে আছে। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে, সমগ্র প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে ছন্মবেশী একদলীয় ব্যবস্থা চলছে। এখন তাদের লক্ষ্য আগামী নির্বাচনকে কি করে আগের মতো তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবে, আবার তারা ক্ষমতায় আসবে সেটাই তারা করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘রুখে দাঁড়ানোর’ আহবান জানান তিনি।
১৫ বছরের পুরনো মামলার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৫ বছর আগে দুদকের একটা মামলা রিভাইব করা হয়েছে, এখন পুরোপুরি ডাইভারশন করার চেষ্টা করা হচ্ছে যখন তাদের দুর্নীতির বিষয়গুলো প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আতিকুর রহমান রুমন, নিহত ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুর স্ত্রী সুমি আখতার বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির মীর হেলাল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নাজমুল হাসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আব্দুল বারী ড্যানি, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, ওবায়দুর রহমান চন্দন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান ও আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এবিএম আবদুস সাত্তার, জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন