দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, বর্তমান সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে, দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। কারণ আওয়ামী লীগ গত তিনটা টার্মে এটাকে একটা নির্বাচনী গণতন্ত্র নাম দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং গণতন্ত্রের একটা মুখোশ পড়িয়ে রাখে, আরেক দিকে নির্বাচন মুখোশ দেখিয়ে ক্ষমতাটাকে ধরে রাখে। যেটা অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হাইব্রিড রেজিম বলেছেন। এই হাইব্রিড রেজিমের ফলে জনগণ তার ভোটাধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছে। তার অর্থই হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের কোনো অধিকারই নেই, সম্ভব না, তার এখতিয়ারই নেই যে এখানে তারা সরকারের নির্দেশ ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে।
গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় গত সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সভায় নেয়া সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
উদপাদন না করেও রেন্টাল কেন্দ্রগুলো অর্থ গুনছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১৯ টি বিদ্যুত কেন্দ্র ২/৩ বছর বন্ধ হবার কথা থাকলেও প্রয়োজন ব্যতিরেকে তা এখনো চলমান আছে। বেশি কিছু সংখ্যক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুত ছাড়াই তিন বছর সরকারকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। গত এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গচ্ছা প্রায় ৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুতের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ না করেই চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করে দুর্নীতি পরায়ন ব্যবসায়ীদের লুট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিদ্যুতখাতে রাষ্ট্রীয় দেনা ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশী ঋণের পরিমান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে আগামী ৩০ বছরে সুদসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে যা জনগণের পকেট কেটে করা হবে। সরকার লোডশেডিং শূণ্য কোঠায় নিয়ে আসায় উৎসব করেছে আতশবাজি পুড়িয়ে। এখন শহরে ২/৩ ঘন্টা আর গ্রামাঞ্চেল ৫/৬ ঘন্টা লোডশেডিংয়ে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের নীতি একটাই- তা হচ্ছে জনগনের সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করা এবং বিদেশে সেই সম্পদ পাচার করা। যারা এই ধরনে নীতি অনুসরণ করে দেশের সম্পদ লুট করেছে সেই রকম দেশের নজির আছে। অতি সম্প্রতি শ্রীলংকাতে সেইরকম ঘটনা ঘটেছে। জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে এসে তাদের উত্থানের মধ্য দিয়ে যারা দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সেই প্রেসিডেন্ট ও প্রাইম মিনিস্টারকে তারা সরিয়ে দিতে বাধ্য করেছে। একইভাবে নাইজেরিয়া ও ভেনেজুয়েলাতে একই অবস্থা আমরা দেখেছি।
তিনি বলেন, সরকারের যখন উদ্দেশ্যই হয় জনগনের সম্পদ লুট করে তখন কিন্তু সেই অর্থনীতি টেকসই হয় না। সেকারণে আয়-বৈষ্যম বাড়তে থাকে। আজকে আমাদের দেশে এক শ্রেনীর মানুষ অনেক বড় লোক হয়ে গেছে তাদের সম্পদ পাহাড়ের মতো হয়েছে, আরেক শ্রেনীর মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়েছে- এই শ্রেনীর মানুষের সংখ্যা বেশি। ফলে অতি দ্রুত এই অর্থনীতি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে। বিদ্যুতের এই পরিস্থিতির জন্য ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করার কথা আবারো ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।
বিএসএফের ডিজির বক্তব্যেরে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সীমান্তে গুলি করে হত্যা মানবাধিকার লঙ্ঘন। কেউ অপরাধী হলেও তার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য আমরা দাবি করছি।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অপরাধের সাথে ছাত্রলীগ অভিযুক্তের ঘটনায় ক্ষোভ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এই ধরনের ন্যাক্কারজনক, অসামাজিক কার্যকলাপকে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মদদ দেওয়া হয় বলে এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘট্যেছ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কার্য্কলাপের অভ্যয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আমরা অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি: বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে সারাদেশে তিনদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি করবে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও অন্যান্য মহানগর আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই এবং সকল জেলা পর্যায়ে আগামী ৩১ জুলাই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠানে সিদ্ধান্ত দলের স্থায়ী বৈঠকে গৃহীত হয়েছে। ঢাকায় ২৯ জুলাই মহানগর উত্তর এবং ৩০ জুলাই দক্ষিণ মহানগর বিক্ষোভ করবে।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন