বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, যখন এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছিল এবং হিসেব দেয়া হয়েছিল তাতে দেখা যায় যে, প্রয়োজনের অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশ তৈরি করেছে। কিন্তু আজকে লোড শেডিং কেনো? কারণ হচ্ছে-দুর্নীতি-চুরি, মেগা চুরি। প্রতারণা করে জনগণের পকেট কেটে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদ জানাতে মহানগর দক্ষিণের নারী কর্মীরা হারিকেন নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, তারা (সরকার) কুইক রেন্টার পাওয়া প্ল্যান্ট ও অন্যান্য বিদ্যুৎ প্ল্যাটের চুক্তি করেছে-যে চুক্তিতে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও তাদেরকে টাকা দিতে হবে। সেই টাকার হিসাব হচ্ছে- সামিট গ্রুপ- এটা আজিজ খানের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খানের বড় ভাই তিনি- এই গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। এগ্রিকো ইন্টার ন্যাশনাল ৬ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, এরদা পাওয়ার হোল্ডিং ৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ ৪ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা, কেপিসিএল ৩ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, বাংলাক্যাট ৩ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা, ওরিয়ন গ্রুপ ৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা- এরকম ১০টা গ্রুপ হাজার হাজার কোটি টাকা আপনাদের (জনগণ) পকেট থেকে বের করে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, শুধু তাই না, আমাদের সমুদ্র থেকে বা আমাদের দেশের মাটি থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য আমরা একটা সারজার্চ দেই, পয়সা দেই। তা দিয়ে একটা ফান্ড তৈরি করেছিলো। সেটার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা এই সরকার নিয়ে গিয়ে গ্যাস কেনার জন্য নিয়ে গেছে। এটা আরেক বাটপারি, আরেকটা ডাকাতি। আরেকদিকে জ্বালানি হিসেবে এলএনজি-এলপিজি গ্যাস আমদানি করছে। কারা আমদানি করেছে? এরা সব আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীরা। এভাবে তারা দেশের অর্থনীতিকে ধবংস করে দিচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুরো অবকাঠামো তৈরির আগে শিক্ষার্থী ভর্তির কাজ শুরু হয়ে গেছে। চাঁদপুরের বিশ্ববিদ্যালয় (বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়) এর জন্য ভূমি অধিগ্রহনে দুর্নীতি হয়েছে। এই জমি অধিগ্রহনের বিষয়ে সেখানকার ডিসি নিজে চিঠি দিয়েছিলেন শিক্ষা ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে যে, শিক্ষা মন্ত্রীর আত্বীয়-স্বজনরা তারা ৩৬৪ কোটি টাকা লুট করে গেছে। এটা সব খানে সর্বক্ষেত্রে। আজকে তারা চুরি-ডাকাতি-রাহাজানির সব কিছুর সঙ্গে জড়িত। তাদের একমাত্র লক্ষ্য যে, বাংলাদেশের মাটিতে একটা তারা পোঁড়ামাটির নীতি গ্রহন করেছে- সব কিছু তারা এখানে ধবংস করে দেবে। তারা (সরকার) অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের নামে একটা ভাওতাবাজী জনগণের সামনে, বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। আবার তারা বলে? উন্নয়নের রোল মডেল, উন্নয়নের মিথ। বিশ্বকে ভুল বুঝাতে থাকে যে, মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। চতুর্দিকে টানেল, চ্যানেল, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল- এসব দেখাচ্ছে, এতে দেশের কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা অর্থনীতিবিদরা বুঝেন।
দলের নেতা-কর্মী প্রতি আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদেরকে আজ শপথ নিতে হবে যে আমরা সবাই এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য এক দফা, এক দাবি। বাংলা সাহিত্যে একটা খনার বচন আছে- ‘রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা কষ্ট পায়’। এই যে আমরা কষ্ট পাচ্ছি এর জন্য দায়ী হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার, এর দায়ী হচ্ছে এই সরকার। হীরক রাজার দেশে’ ছবিটি দেখেছেন। সেখানে কী বলেছে? ওই অত্যাচারি ফ্যাসিস্ট সরকারকে নামাতে হলে কী করতে হবে-‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান’। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই দড়ি ধরে মারি টান,মারি ধাক্কা, শেখ হাসিনার পতন হবে, এই সরকারের পতন হবে।
দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মীর নেওয়াজ আলী, সাইফুল আলম নিরব, মহানগর দক্ষিণের হাবিবুর রশীদ হাবিব, ইশরাক হোসেন, নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, যুব দলের মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, সুমন ভুঁইয়া, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন