আশানুরুপ হয়নি বলে হতাশ হয়ে বসে থাকবেন না ডিম আহরণকারীরা। যা পেয়েছেন তাই নিয়ে ব্যস্ত তারা। ডিম থেকে ফুটেছে রেণু। চেষ্টা করছে যেন শতভাগ রেণুগুলোকে বাঁচাতে পারেন। যদিও সংগৃহীত ডিম থেকে গড়ে এক চতুর্থাংশ রেণু নষ্ট হয়ে যায়।
এবারের প্রজনন মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পর্যাপ্ত মূষলধারে বজ্রসহ বৃষ্টি না হওয়াসহ উজানের পানি না নামায় পুরোদমে ডিম ছাড়েনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদার কার্প জাতীয় মা মাছ। গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাত বারোটা থেকে ভোররাত ৩টা পর্যন্ত দুই দফা ডিম ছাড়ে মা মাছ। প্রথম দফার ডিম কে নমুনা ডিম বললেও দ্বিতীয় দফার ডিম কে ডিম হিসেবে আখ্যায়িত করলেও পর্যাপ্ত ডিম না পাওয়ায় অনেক ডিম আহরণকারী নমুনা ডিম হিসেবে ধরে নেয়। তবে অধিকাংশ আহরণকারী নমুনা ডিম বলতে নারাজ। পুরোদমে না ছাড়লেও মোটামোটি ছেড়ে দিয়েছিল কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
গতকাল মাছুয়াঘোনা, শাহমাদারি হ্যাচারিতে দেখা গেছে, ডিম আহরণকারীরা রেণু ফোটাতে ব্যস্ত। খালি পড়ে আছে অনেক কুয়া। যেখানে গত বছর কুয়া সঙ্কট পড়েছিল। তবে কুয়া খালি থাকায় যারা রেণু ফোটাচ্ছেন তাদের সুবিধে হয়েছে। সহজেই কুয়া পরিবর্তন করতে পারছেন রেণু ফোটাতে। ডিম আহরণকারী গড়দুয়ারা এলাকার হাছন তালুকদার বাড়ির মৃত ফুল মিয়া পুত্র মো. সওকত আলি। এবার ৭ নৌকায় ১৮ বালতি ডিম পেয়েছেন। তিনদিন বয়সী রেণু পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত আছেন। ১৮ বালতি ডিম থেকে ৪ থেকে ৫ কেজি রেণু টিকাতে পারবেন বলে আশা করছেন। গতবার রেণু ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার রেণু বিক্রি করলেও এবার কম হওয়ায় রেণু বিক্রি করবেন না। এলাকায় ৫টি পুকুর প্রস্তুত করে রেখেছেন যাতে পোনা বিক্রি করতে পারেন। গ্যারান্টি দিয়ে শতভাগ হালদার পোনা বিক্রি করবেন বলে প্রতিবেদককে জানান। এ জন্য গ্যারান্টি কার্ডও তৈরি করেছেন তিনি। ভেজাল প্রমাণিত করতে পারলে টাকা ফেরত দেয়ার কথাও বলেন সওকত আলি মাছুয়াঘোনার হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট বলেও জানান। এভাবে আরো কয়েকজন আহরণকারীও রেণু নয় পোণা বিক্রির কথা জানান।
এদিকে এবার পর্যাপ্ত ডিম না ছাড়ায় রেণু ফোটানোর একদিনের মধ্যেই ক্রেতারা যোগাযোগ করছেন হ্যাচারিগুলোতে। দু’একজন ক্রেতা রেণু কিনতে অগ্রিম টাকাও দিয়েছেন বলে জানান, ডিম আহরণকারী শফি ও জামসেদ। যার মূল্য রাখা হচ্ছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যন্ত।
মাছুয়াঘোনা হ্যাচারীতে রেণু ফোটার জন্য প্রয়োজনীয় পুকুর, ডিপ কলসহ যাবতীয় সব কিছু থাকায় রেণু নষ্টের পরিমাণ কম হলেও শাহমাদারিতে ডিম নেই বললেই চলে। পানি পরিবর্তন, ডিপ কল বা মোটর না থাকায় অধিকাংশ ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। ডিম আহরণকারী মো. ইলিয়াছ জানান, এবার আমরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি। শাহমাদারি হ্যাচারীতে আমরা আশা করেছিলাম ২০ কেজি রেণু পাব সেখানে মাত্র ২ কেজি। এ হ্যাচারিতে সুযোগ সুবিধা কম থাকায় রেণু বাঁচাতে পারছি না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন