মহিউদ্দিন খান মোহন
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কথা কারো অজানা নয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর দিশেহারা, নেতৃত্বহারা উদ্বিগ্ন জাতিকে যিনি অভয়বাণী শুনিয়ে উদ্দীপ্ত করেছিলেন তাঁর নাম জিয়াউর রহমান। সেদিন তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাতিকে মুক্তিপথের দিশা দিয়েছিলেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ সেদিন পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শুরু হয়েছিল দেশ-মাতৃকার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার মরণপণ লড়াইয়ে। ১৯৭১ এর ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে দেয়া মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য সাধারণ এক অবস্থান দিয়েছে, দিয়েছে অমরত্ব। সেদিন তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন মেজর।
আবার ১৯৭৫-এর রক্তাক্ত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান পুনরায় দেশমাতৃকার চরম দুঃসময়ে কা-ারীর ভূমিকায় আবির্ভূত হলেন। আধিপত্যবাদী শক্তির দোসররা যখন আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিনাশী তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছিল, তখন দেশের বীর সিপাহী-জনতা ঐক্যবদ্ধ যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তার মধ্য দিয়েই এদেশের রাজনীতির দৃশ্যপটে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব। তারপর রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতি, অনিয়ম অব্যবস্থার কারণে ভেঙেপড়া বাংলাদেশকে পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। শুধু তাই নয়, গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তিনি দেশে উন্নয়ন-উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করেন। তাঁর রাজনীতি নিছক রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া বা টিকে থাকার রাজনীতি ছিল না। তাঁর রাজনীতি ছিল বাংলাদেশের গণমানুষের ভাগ্যোন্নয়নের রাজনীতি।
তিনি যেন হ্যামিলনের সে বাঁশিওয়ালা। তাঁর উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির আহ্বান বাংলাদেশে এক অভূতপূর্ব সুর ঝঙ্কার সৃষ্টি করেছিল, যার আকর্ষণে গোটা দেশের মানুষ তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হয়েছিল। প্রিয় মাতৃভূমিকে তারা ভালোবাসে, সে সাথে ভালোবাসল দেশমাতৃকার এক অতন্দ্র সিপাহীসন্তান জিয়াউর রহমানকে। এর প্রমাণ মিলেছে ১৯৮১ সালের তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর মানিক মিয়া এভিনিউর নামাজে জানাজায়।
একথা স্বীকার করতেই হবে যে, বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ এবং জিয়াউর রহমান একই গ্রন্থিতে গাথা। একটি থেকে অপরটি আলাদা করা যাবে না। জিয়াউর রহমানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পূর্ণ হবে না। যদি কেউ তা করে তা হবে বিকলাঙ্গ ইতিহাস। কারণ তিনি এদেশের ইতিহাস এবং মানুষের হৃদয়ে যে স্থায়ী আসন গেড়ে বসে আছেন, তা থেকে তাঁকে সরানোর শক্তি কারো নেই।
অথচ সে অপচেষ্টাই বর্তমানে প্রকটভাবে দৃশ্যমান। জিয়াউর রহমানের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করা, তাকে ছোট করা, অহেতুক এবং অনাবশ্যক সমালোচনা করা, কটাক্ষ-কটূক্তি করা বেশ আগে থেকেই মহলবিশেষ করে আসছে। তবে ইদানীং তারা মৃত এই মানুষটির ওপর একেবারে হামলে পড়ছে। এর সর্বশেষ প্রমাণ রাষ্ট্র কর্তৃক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে দেয়া মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পদক’ ছিনিয়ে নেয়া। গত ৮ সেপ্টেম্বরের পত্রিকার খবরে বলা হয়েছেÑ জাতীয় জাদুঘর থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক ফেরত নেয়া হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, ৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে এ পদক ফেরত দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি জাতীয় জাদুঘর থেকে ওই পুরস্কারের মেডেল ও সম্মাননাপত্র সরিয়ে ফেলারও সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে জাতীয় জাদুঘরকে একটি চিঠিও দেয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে এই পদক ফেরত দেয়া হয়েছে বলে পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়। সে সময় পুরস্কারের মেডেল ও সম্মাননাপত্র জাতীয় জাদুঘরের একটি কর্নারে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয় এবং তদানুযায়ী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজে জাদুঘরে এসে এটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন।
জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার ও জাতীয় জাদুঘর থেকে তা সরিয়ে নেয়ার খবরে দেশবাসী বিস্মিত হয়েছে সন্দেহ নেই। মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর সিপাহসালারকে রাষ্ট্রকতৃক প্রদত্ত সম্মাননা পদক কোনো সরকার এভাবে ছিনিয়ে নিতে পারে তা কারোরই ধারণায় ছিল না। বর্তমান সরকার বিরোধী দলকে নিষ্পেষণের পাশাপাশি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার জন্য এক রকম কোমর বেঁধে নেমেছে তা বিভিন্ন ঘটনায় ইতোমধ্যেই প্রতিভাত হয়ে উঠেছে। বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারের মন্ত্রী ও সরকারদলীয় কতিপয় নেতা জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক ছিনিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের মতে, জিয়াউর রহমান নাকি এ পদকের যোগ্য নন। কেউ কেউ তো বলেনÑ জিয়া মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, কিংবা তিনি পাকিস্তানের চর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এসব কথা এমনসব ব্যক্তিরা বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া তো দূরের কথা, তার ধারে-পাশেও ছিলেন না। কেউ পালিয়ে ভারতে গিয়ে আরাম-আয়েশে নয় মাস পার করেছেন, কেউ নানা কায়দা-কানুনে পাক হানাদার কবলিত বাংলাদেশে গা বাঁচিয়ে বহাল তবিয়তে ছিলেন।
জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী লীগের অন্তর্জ্বালা বা গাত্রদাহের অন্তর্নিহিত কারণ কারো অজানা থাকার কথা নয়। ১৯৭১ সালের সে বিভীষিকাময় সময়ে জিয়া স্বনামেই দেশের স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তবে পরে ঘোষণাটি তিনি বঙ্গবন্ধুর নামেই দিয়েছিলেন সে কথা মিথ্যা নয়। তিনি নিজেও সে কথা কখনো অস্বীকার করেননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও এ নিয়ে কোনো বিতর্ক তোলেননি বা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়ার অবদানকে অস্বীকার করেননি। বরং মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা ও নেতৃত্বের জন্য তাঁর সরকারই জিয়াউর রহমানকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করেছিল। আজ আওয়ামী লীগ নেতারা স্বাধীনতার ক্ষেত্রে জিয়ার অবদানকে ‘ইরেজার’ দিয়ে মুছে ফেলতে চান। অথচ তাদেরই নেতা জিয়াকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এখন প্রশ্নÑ জিয়া যদি মুক্তিযুদ্ধই না করে থাকেন বা মুক্তিযোদ্ধা না হন, তাহলে বঙ্গবন্ধু সরকার কেন তাকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মানজনক উপাধিÑ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করেছিল? নাকি মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস অনুপস্থিত থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারেননি যুদ্ধে কার কী অবদান ছিল?
এখানেই শেষ নয়। পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমগুলোতে বেশ কিছুদিন ধরে খবর বেরুচ্ছে যে, জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন জিয়া উদ্যান থেকে শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজার অন্যত্র সরিয়ে নেবে সরকার। বলা হচ্ছেÑ জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশায় কোনো কবরের স্থান চিহ্নিত করা ছিল না। এজন্য সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত জাতীয় কবরস্থানের কবরগুলোও সরিয়ে দেয়া হবে। স্থপতি লুই কানের নকশায় নাকি এসব কবরের স্থান ছিল না। তাই মাজার এবং অন্যান্য কবরগুলো উচ্ছেদ অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। যারা এসব যুক্তি দেখাচ্ছেন, তারা যে নিজেদের অজান্তেই পাকিস্তানের স্মৃতি সংরক্ষণের চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন তা বোধহয় খেয়াল করেননি। জাতীয় সংসদ ভবনের চৌহদ্দি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে যে, এটা পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার আদলে করা। দক্ষিণের সবুজ চত্বরের মাঝখানে জাতীয় সংসদ ভবন ‘তারকা’ আকৃতির এবং ঠিক তার পেছনেই ‘চাঁদের’ প্রতিকৃতি ক্রিসেন্ট লেক, যা পাকিস্তানের ‘চাঁদ-তারা’ খচিত জাতীয় পতাকারই প্রতিচ্ছবি। প্রবীণদের কাছ থেকে যতদূর জানা যায়, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খানের নির্দেশনা অনুযায়ী সংসদ ভবন ও তৎসংলগ্ন এলাকার নকশা তৈরি করা হয়েছিল পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার প্রতিকৃতি হিসেবে। এখন যদি জিয়ার মাজার এবং অন্যান্যদের কবর উচ্ছেদ করা হয় তাহলে কী এলাকাটি আবার পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার রূপ ধারণ করবে না? রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে যে পাকিস্তানের নকশা আমরা বদলে দিয়েছি, আজ স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের ‘মূল নকশায়’ ফিরে যাবার নামে সেই পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার স্মৃতি সংরক্ষণের এ উন্মাদনা কেন? বোধকরি একেই বলে ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ’ করা।
প্রসঙ্গত আরেকটি কথা না বলে পারছি না। ধরে নেয়া যাক লুই কানের নকশায় কবরের জন্য কোনো জায়গা চিহ্নিত করা ছিল না। তাহলে জাতীয় প্রয়োজনে কিংবা অনিবার্য কারণে সে নকশার পরিবর্তন কি করা যাবে না? লুই কানের নকশা নিশ্চয়ই ঐশী বাণী নয় যে প্রয়োজনে তার পরিবর্তন পরিবর্ধন করা যাবে না। লুই কানও বোধ করি সে রকম কোনো ‘অসিয়ত’ বা ‘নসিহত’ করে যাননি।
এখন দেখা যাক জিয়াকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার সরকারি তৎপরতার বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল কী করছে। জাদুঘর থেকে জিয়ার স্বাধীনতা পদক সরিয়ে ফেলার পর বিএনপির পক্ষ থেকে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে, তাকে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ বললেও কম বলা হয়। সরকারের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিএনপি ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর বিএনপির একটি প্রতিবাদ সভা করে এবং ১০ সেপ্টেম্বর মহানগরীর থানাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিল। জাতীয় প্রেসক্লাবের ‘প্রতিবাদ সভাটি’ কয়েকশ’ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সম্পন্ন হলেও মহানগরীর থানায় থানায় এবং সারা দেশে কোনো বিক্ষোভ মিছিল দৃশ্যমান হয়নি। লক্ষণীয় বিষয় হলোÑ জাতীয় নির্বাহী কমিটির উদ্যোগে বিএনপি ঢাকা মহানগরীতে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করতে পারেনি, প্রকাশ্য স্থানে একটি সমাবেশ করার সাহস পায়নি। প্রেসক্লাব মিলনায়তনের চার দেয়ালের ভেতরে বিএনপি নেতারা গলা ফাটিয়ে প্রতিবাদ করছেন, সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তবে তাদের সে গলা ফাটানো চিৎকার মিলনায়তনের চার দেয়ালে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে গুমরে গুমরে কেঁদেছে শুধু। জনমনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
ওই ঘরোয়া প্রতিবাদ সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলছেন, ‘শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজার যারা সরিয়ে ফেলতে চায়, তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে। তাকে এখান থেকে সরাতে হলে তাদেরকে (সরকার) অনেক মূল্য দিতে হবে এটা আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই।’ বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সরকার ইচ্ছে করলেই জিয়ার মাজার সরিয়ে ফেলতে পারবে, তবে তার জন্য ‘অনেক মূল্য’ দিতে হবে। অবশ্য সে ‘অনেক মূল্যে’র স্বরূপটা কারো কাছেই স্পষ্ট নয়। মির্জা আলমগীরের বক্তব্য শুনে অনেকেই বলছেন যে, সরকারের একটি হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধেও তিনি কঠোর প্রতিবাদ করতে পারেননি, প্রতিরোধে উদ্দীপ্ত হতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাতে পারেননি। এখন ওই কথিতÑ ‘অনেক মূল্য’ পরিশোধ করেই যদি সরকার জিয়ার মাজার অন্যত্র সরিয়ে নেয়, তাহলে কী করবেন মির্জা সাহেবরা? অবশ্য সরকারের ওরকম পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তারা যে কী রকম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন তার অনেক দৃষ্টান্ত ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে!
সবারই স্মরণ থাকার কথা ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে বেগম জিয়াকে যখন উচ্ছেদের চক্রান্ত চলছিল তখন বিএনপির নেতারা হুংকার দিয়ে বলেছিলেনÑ ‘প্রয়োজনে দশ লক্ষ লোক নিয়ে পুরো ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করা হবে।’ কিন্তু বাস্তবে কী দেখা গেল! বিএনপি নেতাদের সে বায়বীয় আষ্ফালন শেষপর্যন্ত বেগম জিয়ার চোখের পানি মুছতে কোনো কাজে আসেনি।
একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার তখনই অধিকতর বেপরোয়া হয়ে উঠে, যখন তার সামনে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের কোনো ব্যারিকেড না থাকে। আজ আওয়ামী লীগ সরকার যা ইচ্ছে তাই করছে, কাউকে তোয়াক্কা করছে না। এর জন্য কী বিএনপিও দায়ী নয়? তারা জনগণকে মাঠে নামানো তো দূরের কথা, স্ব-দলের নেতাকর্মীদেরও একত্রিত করে একটি বড়সড় মিছিল-সমাবেশ করতে পারছে না। বিএনপির মিছিল-সমাবেশ তখনই একটু বড়ো আকার ধারণ করে, যখন পুলিশ আশ্বস্ত করে যে, তারা বাধা দেবে না। এভাবে কোনো রাজনৈতিক দল তার কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যেতে পেরেছেÑ ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত নেই। যে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ান, বোরকা পরে জামিন নিতে আদালতে যান, সে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা রাজপথে নামবেন কোন সাহসে?
আর এরই সুযোগ নিচ্ছে সরকার। তারা বাধাহীনভাবে তাদের এজেন্ডা একের পর এক বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। জাতীয় জাদুঘর থেকে জিয়ার স্বাধীনতা পদক সরিয়েছে এখন হয়তো হাত দেবে জিয়ার মাজারে। আর সরকার যদি সত্যি সত্যি সে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে বিএনপি কোনো জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেÑ এমনটি কেউ মনে করছেন না। বড় জোর দলীয় কার্যালয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং আর জাতীয় প্রেসক্লাবের চার দেয়ালের মধ্যে ‘প্রতিবাদ সভা’য়ই সীমাবদ্ধ থাকবে তাদের তৎপরতা! হায়রে বিএনপি! তুই এত হীনবল হলি কী করে!
য় লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সড়যড়হ৯১@ুধযড়ড়.পড়স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন