মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হাদীস অস্বীকারকারীদের ফিতনা হতে বাঁচুন-২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে অনেক সাহাবীর নিকট হাদীস লিখিত আকারে সংরক্ষিত ছিল। যেমন হযরত আলী (রা.), হযরত ইবনে আব্বাস (রা.), হযরত জাবির (রা.), হযরত আনাস (রা.), হযরত আমর বিন হিযাম (রা.), হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.), হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.), হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমার (রা.) প্রমুখ সাহাবা (রা.)-এর নিকট লিখিত আকারে হাদীস মওজুদ ছিল। পরবর্তীতে এ হাদীসগুলো জনগণের নিকট খবরে ওয়াহিদের পদ্ধতিতেই হস্তগত হয়েছে। অধিকাংশ সাহাবা (রা.) হাদীস মুখস্ত রাখলেও লিখিতরূপে তখনো হাদীস ছিল। তবে, হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দিতে হাদীস নিয়মিত গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ হতে শুরু হয়েছে। (সহীহ বুখারী : ১/২৮, ১/২৫১); সহীহ মুসলিম : ১/৪৯৫; সুনানু নাসাঈ : ২/২৫২; মুস্তাদরাকে হাকেম : ৩/৫৭৩, ৫৭৪; ত্বাবাকাতে ইবনে সা’দ : ৫/৪৯৩; তাহযীবুত তাহযীব : ৮/৩৫৩)।

মূলত : হাদীস সকল যুগেই সংরক্ষিত ছিল। অবশ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি ছিল ভিন্ন ভিন্ন। প্রথম যুগে (সাহাবীদের আমলে) হাদীস স্মৃতিতে ধারণ করে সংরক্ষণ করা হতো। অতঃপর লিখন পদ্ধতির মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়। ফাতহুলবারী : ১/১৬৮)। গভীর মনোযোগের সাথে হাদীসের গ্রন্থরাজি অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, সহীহ মুসলিম শরীফের একটি বর্ণনায় হাদীস লিখে রাখার নিষেধাজ্ঞা উল্লেখ রয়েছে। আবার অনেক বর্ণনায় হাদীসের বাণী লিখে রাখার নির্দেশ পাওয়া যায়।

সুতরাং মুসলিম শরীফের উক্ত হাদীসটি সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য হলো : (ক) নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত উক্ত হাদীসটি মারফু না মাওকুফ এ ব্যাপারে মতভেদ আছে। কাজেই একাধিক মারফু’ হাদীসের বিপরীতে উক্ত হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয়। (খ) অথবা নিষেধাজ্ঞার অর্থ হলো একই কাগজে বা ফলকে কোরআন ও হাদীস লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা, এর ফলে উভয়টি মিশ্রিত হওয়ার আশংকা আছে।

(গ) অথবা নিষেধাজ্ঞার হুকুম ঐ সকল ব্যক্তির জন্য ছিল, যারা উত্তম রূপে লিখতে জানত না। (ঘ) শেষত : বলা যায়, মুসলিম শরীফের উক্ত হাদীসটি মানসুখ। হাদীস লিখে রাখার নির্দেশ সূচক হাদীসগুলো নাসিখ। সুতরাং মুসলিম শরীফের উক্ত হাদীসটির হুকুম মানসুখ বা রহিত হয়েগেছে।

ইসলামী শরীয়তের প্রথম ও প্রধান দলীল হলো কোরআনুল কারীম। এরপরেই শরীয়তের দ্বিতীয় দলীল হলো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীস। তারপর তৃতীয় দলীল হলো উম্মাতে মোহাম্মাদীয়ার ইজমা-বা ঐক্যমত্য। সর্বশেষ বা চতুর্থ দলীল হলেঅ শরয়ী কিয়াস। (মিযানুল ইতিদাল : ১/১৯)।

বস্তুত : হাদীস শাস্ত্রের আলোচ্য বিষয় ও বিবরণ অতি প্রশস্ত। সে হিসেবে হাদীসের শ্রেণি বিভাগ অনেক। হাদীস শাস্ত্রের বিরাট একটি অংশ জুড়ে আছে বিভিন্ন বিষয়ের উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত। কিছু হাদীসে শরীয়তের বিধি বিধান বর্ণিত। কিছু হাদীসে বিভিন্ন রকম দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসের কিছু অংশ জান্নাত, জাহান্নাম হাশর, নাশর ও আখিরাতের বর্ণনা দখল করে আছে।

কতিপয় হাদীস আছে ফযিলত সম্পর্কে। কিছু হাদীসে কিয়ামতের নিদর্শন, ভবিষ্যতে সংঘটিতব্য ঘটনাবলি, ও ভবিষ্যবাণীর বিবরণ রয়েছে। কিছু হাদীসে পৃথিবীর বিভিন্ন ফিতনা বিপর্যয়ের উল্লেখ আছে। কিছু হাদীসে নিয়ম-কানুন, শিষ্টাচার বর্ণিত হয়েছে। কিছু হাদীসে বারযাখ জীবনের বিবরণ সমূহ স্থান পেয়েছে। কিছু হাদীস মানুষের পারস্পরিক অধিকার, আচার ব্যবহার, বিচার ও দন্ডবিধি আলোচনা করেছে। সার কথা হলো এই যে, হাদীস শাস্ত্রে দ্বীনের যাবতীয় অংশবর্ণিত হয়েছে।

সুতরাং হাদীস অস্বীকৃতির দ্বারা উল্লিখিত সকল বিষয় অস্বীকার করা অবধারিত হয়ে পড়ে। সুতরাং এর ফলে দ্বীন বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। এতদপ্রসঙ্গে আল্লামা হাযেমী (রহ.) ‘আল উজালা’ নামক গ্রন্থে বলেছেন : ইলমে হাদীস অনেক বিষয়কে শামিল করে যার সংখ্যা একশ’তে পৌঁছবে। তার প্রত্যেকটি অংশ একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ ইলম বা বিষয়ের মর্যাদা রাখে। কোনো অনুসন্ধিৎসু সারা জীবন ব্যয় করেও এর শেষ সীমায় পৌঁছতে পারবে না। [তাদরীবুর রাভী : ১/১৯-২০]।

আল কোরআনে ‘রাসূল’ শব্দটি এক বচন, বহু বচন, সম্বন্ধপদ ইত্যাদিরূপে ৪২৪ বার এসেছে। এই শব্দটির ব্যাপক ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য করে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে কেবলমাত্র আল্লাহর রাসূল বা দূত মনে করা সঠিক নয়। বরং এটি ভুল, ভ্রান্ত ও কোরআনী শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। কোরআন মাজীদ সংক্ষিপ্ত ও অল্পকথায় বেশি অর্থ-প্রকাশ করার নীতি অবলম্বন করায়, তার ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য। সে হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সা.) শুধু কেবল রাসূলই নন, বরং তিনি হলেন কোরআন মাজীদের ব্যাখ্যা কারক এবং তার বাণী তথা হাদীস হলো কোরআন মাজীদের ব্যাখ্যা।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Fatema Khanom ১৮ জুন, ২০২১, ৪:১৬ এএম says : 0
বর্তমান সময়ের একটি বড় সমস্যা হলো ইনকারে হাদিস- হাদিস অস্বীকার করা। এই ফেতনা থেকে আল্লাহ রক্ষা করুন।
Total Reply(0)
মেঘদূত পারভেজ ১৮ জুন, ২০২১, ৪:১৭ এএম says : 0
রাসুল [সা.]-এর হাদিস যে শরীআতের প্রমাণ এ কথা কুরআনের আয়াত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট বাণীর দ্বারা প্রমাণিত
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১৮ জুন, ২০২১, ৪:১৭ এএম says : 0
হাদিস শরীয়াতের দলীল সরাসারি এই কথাকে অস্বীকার করা, হাদিসকে শরীয়তের অকাট্য প্রমাণ হিসাবে না মানা এবং তাকে অনুসরণযোগ্য মনে না করে ঠাট্টা, বিদ্রুপ করা- এটা একটা ভয়ানক গোমরাহি এবং ইসলামের বিকৃতির নামান্তর।
Total Reply(1)
Dadhack ১৮ জুন, ২০২১, ৬:৩৪ পিএম says : 0
যারা হাদিস অস্বীকার করে তারা তো কাফের আল্লাহ নবীকে বলেছে যে তোমাদের নবী নিজের থেকে কোন কথা বলতেন না আমি যাওগি করি সে তাহাই বলে. তবে ইসলামের শত্রুরা হাজার হাজার মিথ্যা হাদীস লিখে নবী সাহেবের নামে চালিয়ে দিয়েছিল এই হাদীসগুলো ,,,এই মিথ্যা হাদীসগুলো আলেমগণ খুঁজে খুঁজে বার করে এগুলো মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন
সোয়েব আহমেদ ১৮ জুন, ২০২১, ৪:১৮ এএম says : 0
মোল্লা আলী কারী (র.) খোলাসাতুল ফাতাওয়ার সূত্রে উল্লেখ করেছেন, আমাদের কোনো কোনো শায়েখ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো হাদিসকে প্রত্যাখ্যান করবে তাকে কাফের বলে অভিহিত করা হবে।
Total Reply(0)
নোমান মাহমুদ ১৮ জুন, ২০২১, ৪:১৮ এএম says : 0
আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর একটিও হাদিস যদি প্রমাণিত হয়, আর কেউ যদি সেটাকে অস্বীকার করে তবে সে কাফের হয়ে যাবে। এটা ওলামায়ে কেরামদের ঐকমত্যে সাব্যস্ত হয়েছে।
Total Reply(0)
Dadhack ১৮ জুন, ২০২১, ৬:৪১ পিএম says : 0
মুসলিমদেরকে যদি বলা হয় দাড়ি রাখেন, উনারা বলেন রাখার কোন দরকার নেই. যদি বলা হয় কাপড় কাপড় গোড়ালির উপরে পড়েন, উনারা বলে কোন দরকার নাই আমিতো অহংকার করে পড়ি না. নবী [সাঃ] বলেছেন যারা আমার সুন্নত মানে না তারা জাহান্নামী.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন