শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল
১৯৩২ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর বাদশাহ আব্দুল আযীয বিন আব্দুর রহমান আলে সাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক সউদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই আধুনিক সউদি আরবের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকেই ২৩ সেপ্টেম্বর সউদি আরবের জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে সউদি আরবের ৮৬তম জাতীয় দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদি আরবের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ বিন হজাজ আল-মুতাইরি হাফিযাহুল্লাহ-এর মাধ্যমে সউদি আরবের বাদশাহ খাদিমুল হারামাইন আশ-শারীফাইন সালমান বিন আব্দুল আযীয আলে সাউদ হাফিযাহুল্লাহ-কে ও সউদি আরবের জনগণকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
সউদি আরব মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রভূমি এবং সে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক শহর মক্কা মুর্কারামায় পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ঘর ও মুসলিমদের কিবলা-কা’বা অবস্থিত। প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলিম ইসলামের পঞ্চ মৌলভিত্তির অন্যতম ভিত্তি হাজ পালনের উদ্দেশ্যে সউদি আরব সফর করেন। উল্লেখ্য যে, সউদি আরবের জেনারেল অথোরিটি ফর স্ট্যাটিসটিকস্-এর হিসাব মতে, ১৪৩৭ হিজরি মোতাবেক ২০১৬ সালে সারা বিশ্ব থেকে ১৮,৬২,৯০৯ জন হাজি হজ পালন করেছেন, যার মধ্যে ৫,৩৭,৫৩৭ জন সউদি আরবের অভ্যন্তরীণ হাজি আর বাকি ১৩,২৫,৩৭২ জন হাজি সউদি আরবের বাহির থেকে এসে হজ পালন করেছেন। শুধু বাংলাদেশ থেকেই মোট ১,০১,৭৯৭ হাজি হজ পালন করেছেন। এই বিশাল সংখ্যক আল্লাহ্র মেহমানদের মেহমানদারির ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় বাদশাহ সালমানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
এছাড়াও প্রায় সারাবছরই পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে কয়েক কোটি মুসলিম উমরাহ্ পালনার্থে মক্কায় গমন করেন। হজ এবং উমরাহ পালন ছাড়াও মদিনা মুনাওয়ারায় অবস্থিত মসজিদে নববীতে সলাত আদয়ের ও নবী (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করার উদ্দেশ্যেও বহু মুসলিম মদিনা সফর করেন। মক্কা-মদিনা ছাড়াও সউদি আরবে অবস্থিত কুরআনে বর্ণিত ও রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত অসংখ্য ইসলামী নিদর্শন দেখতেও মুসলিমরা সউদি আরব যান। কিন্তু এসব ধর্মীয় উদ্দেশ্যের বাইরেও যে উদ্দেশ্যে মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা সেখানে যান তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কর্মসংস্থান। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সাথে সউদি আরবের রয়েছে বহুমাত্রিক সম্পর্ক। একদিকে যেমন রয়েছে ধর্মীয় সম্পর্ক তেমনি রয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক সম্পর্ক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই সউদি আরব স্বাধীন ও সার্বভৌম ভূখ- হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ওআইসি’র দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনে তৎকালীন সউদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল বিন আব্দুল আযীয (রহ.)-এর সাথে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎ এবং বাংলাদেশের ওআইসির সদস্য হওয়ার মাধ্যমে সউদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের গভীরতা বাড়তে থাকে। পরবর্তী বছর ১৯৭৫ সালে সউদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এরপর থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে সউদি আরবের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে এই সম্পর্ক বহুমাত্রিকতা লাভ করে। সউদি আরবের সাথে সম্পর্কে মূলভিত্তি ধর্মীয় হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী গত ৪৫ বছরে দুই দেশের সম্পর্কে আরও কিছু শক্তিশালী উপাদান যুক্ত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জনশক্তি রপ্তানি বা সউদি শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের প্রবেশ ও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা।
১৯৭৬ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে ২১৭ জন শ্রমিক পাঠানোর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সউদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়। এসব শ্রমিকের সাথে ৬৪ টন কাদামাটি এবং ৫০ কেজি নিমের বীজও পাঠানো হয়েছিল। এসব শ্রমিক পাঠানোর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের সাথে সউদি আরবের সম্পর্কের যাত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এরপর থেকে সউদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে দৃঢ় হতে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে ১০ আগস্ট ২০১৬ পর্যন্ত ৪০ বছরে মোট ২৭,৫৯,৯৯৮ জন বাংলাদেশি কর্মী সউদি আরব গেছেন। তবে গবেষকদের মতে, বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ২৫ লক্ষের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক সউদি আরবের বিভিন্ন খাতে কর্মরত রয়েছেন। সউদি আরবের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অধ্যাপনাসহ বিভিন্ন উচ্চপদে বাংলাদেশিরা সম্মানের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ৬০ হাজারেরও বেশি নারী গৃহকর্মী সউদি আরবে পৌঁছেছেন। এ হিসাবে সউদি আরবই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। তাছাড়া প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশি ভিজিট ভিসায় সউদি আরব চলে গেছে এবং আরও লক্ষাধিক যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
২০০৮ সালে সউদি আরবের এক অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ অনেকাংশে কমে যায়। ২০০৯ সাল থেকে দেশটির যে কোন খাতে সর্বোচ্চ ২০ ভাগ বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার নিয়ম চালু করা হয়। ফলে গত সাত-আট বছর যাবত বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সউদি আরবের দুয়ার সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। যদিও এ বছরগুলোতে সউদি আরবে গৃহকর্মী হিসাবে নারী শ্রমিকদের নিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী অনেক নারী গৃহকর্মী কাজের সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবের অভিযোগ করে দেশে ফেরত চলে এসেছেন। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক কূটনৈতিক যোগাযোগ ও সর্বশেষ চলতি বছর জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সউদি আরব সফরের ফলে দীর্ঘ সাত বছর পর সউদি আরবের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের কর্মী নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশের জন্য বহুল প্রত্যাশিত এ ঘোষণার ফলে সউদি আরবের চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকছে না। এখন থেকে আবারও দক্ষ ও অদক্ষÑ সব ধরনের বাংলাদেশি কর্মী সউদি আরবে কাজের জন্য ভিসার আবেদন করতে পারবেন।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সউদি আরবের সরকারি ও বেসরকারি অবদান অন্য যে কোন দাতা দেশের তুলনায় কম নয়, বরং কোন কোন ক্ষেত্রে সউদি আরবের অবদান অনেকাংশে বেশি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এবং বিভিন্ন সময়ে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সউদি আরবের আর্থিক সহযোগিতার কথা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত ও শিক্ষাগত উন্নয়নে সউদি আরবের অবদান বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই জানে না। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ্য, সাবেক সউদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি বাংলাদেশের সিডর আক্রান্ত উপকূলীয় এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে গোপনে দান করেছিলেন। আর এই দানের কথা তার মৃত্যুর পূর্বে কেউ জানতো না। তিনি আইডিবি প্রেসিডেন্ট আহমাদ মুহাম্মাদ আলীকে অনুরোধ করেছিলেন যে, তার মৃত্যুর পূর্বে যেন দাতা হিসেবে তার নাম প্রকাশ করা না হয়। সেই শর্ত মোতাবেক বাদশাহ আব্দুল্লাহ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মৃত্যুবরণ করার পর তিনি তা প্রকাশ করেন এবং সমগ্র বিশ্ব জানতে পারে যে, তিনি কতবড় দাতা ছিলেন। বাদশাহ আব্দুল্লাহ্’র দেয়া সেই অর্থের মধ্যে ১১০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ১৭৩টি স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। যার মধ্য থেকে নির্মাণ শেষ হওয়া কিছু সেন্টার ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে কিং আব্দুল্লাহ্ বিন আব্দুল আযীয আলে সাউদ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকটিভিটিজ (কেএআইএফএইচএ)-এর প্রধান নির্বাহী ও বাদশাহ আব্দুল্লাহর পুত্র প্রিন্স তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ উদ্বোধন করে যান। বাকি ২০ মিলিয়ন ডলার ওয়াক্ফ করা হয়েছে যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে সউদি আরবের অবদান এখন আর কারও অজানা নয়।
সউদিগণ আত্মপ্রচার বিমুখ। তাই তারা অন্যদের মতো কিছু করেই তা প্রচারে নেমে পড়েন না। অথচ তারা সারা বিশ্বে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবিক প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি ডলার দান করে যাচ্ছেন। সউদি আরবের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নরত রয়েছে অসংখ্য বাংলাদেশি। এসব ছাত্র তাদের পড়াশুনা শেষ করলে সউদি সরকারের মাধ্যমে এবং নিজস্ব উদ্যোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। তাছাড়া সউদি আরবের রাজধানী রিয়াদ, জিদ্দাহ, দাম্মাম, মক্কায় বাংলাদেশিদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্য স্কুল চালু রয়েছে। এছাড়াও সউদি আরব প্রতি বছর প্রচুর কুরআন, ইসলামী বইপুস্তক, খেজুর, কোরবানির পশুসহ বিভিন্ন আইটেমের উপহারসামগ্রী বাংলাদেশে পাঠায়। সউদি আরব প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সউদি বাদশাহর বিশেষ মেহমান হিসেবে হজ করার সুযোগ প্রদান করে থাকে।
সম্প্রতি দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ও প্রসারের অভিযোগে সউদি আরবকে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ এসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সউদি আরব আন্তর্জাতিকভাবে ও আঞ্চলিকভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় হারামাইন শরীফাইনের সম্মানিত খাদিম, সউদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আযীয আলে সাউদ-এর উদ্যোগে এবং সউদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমানের নেতৃত্বে গত ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ বাংলাদেশসহ ৩৪টি মুসলিম দেশের সমন্বয়ে ইতিহাসে সর্বপ্রথম ইসলামী সামরিক জোট গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবেলায় গঠিত এই জোটের কাছে মুসলিম বিশ্বের প্রত্যাশা অনেক।
আমরা আশা করি, সউদি আরবের নেতৃত্বে মুসলিম বিশ্ব একতাবদ্ধ হয়ে একদিকে যেমন সন্ত্রাসবাদকে মোকাবেলা করে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে, তেমনি মুসলিম জনগণ, তাদের ভূখ- ও সম্পদ সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। উল্লেখ্য যে, সউদি আরব সবসময়ই মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণে সাধ্যানুযায়ী অবদান রেখে গেছে এবং বর্তমানেও তা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে তারা সিরিয়া যুদ্ধের ফলে উদ্বাস্তু হওয়া ২৫ লক্ষ সিরিয়ানকে আশ্রয় দিয়েছে। অথচ বিশ্ব মিডিয়ায় এর প্রচার নেই। কিন্তু সমগ্র ইউরোপ কয়েক লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার খবর মিডিয়ায় এমনভাবে প্রতিনিয়ত প্রচার করছে যেন মুসলিম দেশগুলো কিছুই করছে না। সবই মিডিয়ার কারসাজি। তাই মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ সংরক্ষণে দরকার আন্তর্জাতিক শক্তিশালী মিডিয়া।
বাংলাদেশের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের সাথে সউদি আরবের কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্কের অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও এ দেশের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়াই সউদি আরব, ওয়াহাবী, সালাফী, আহলেহাদীসদেরকে সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত করছেন, যা সউদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। তাই এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর যে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়েছে তা যেন কারও অনভিপ্রেত ও অসত্য মন্তব্য, বক্তব্য ও বিবৃতির কারণে হুমকির মুখে না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখা। সউদি আরবের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতে আগামীতে দুই দেশের মধ্যে যেমন কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক, ধর্মীয় সম্পর্ক জোরদার করা জরুরি, তেমনি দেশদুটির মধ্যে সুসম্পর্ক নষ্ট করতে পারে এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকাও রাখা।
সউদি আরবের বর্তমান বাদশাহ খাদিমুল হারামাইন আশ-শরীফাইন সালমান বিন আব্দুল আযীয আলে সাউদ, ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন নায়েফ এবং ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুহাম্মাদ বিন সালমান-এর নেতৃত্বে সউদি আরব আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এক নতুন শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে। আমরা আশা করছি, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সউদি আরব আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। সিরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন, মায়ানমারসহ বিশ্বের যেখানেই মুসলিমরা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সমস্যা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে আশা করছি, মুসলিমদের ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় এবং সন্ত্রাস, দারিদ্র্যসহ অন্যান্য সমস্যা দূরীকরণে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব প্রদান করবে। যেহেতু সউদি আরব কুরআন অবতরণের স্থান, নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর কর্মক্ষেত্র এবং যেহেতু তাদেরকে আল্লাহতায়ালা প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ হাজিদের মেহমানদারি করার ও ইসলামের প্রধান দুটি কেন্দ্র মক্কা ও মদিনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছেন সেহেতু তাদের দায়িত্ব ও তাদের প্রতি সারা বিশ্বের প্রতিটি মুসলিমের আশা-আকাক্সক্ষার মাত্রাও বেশি। আগামী বছরগুলোতে সউদি আরব তাদের দায়িত্ব পালনে আরও সচেষ্ট হবে বলে আমরা আশা করছি। সউদি আরবের ৮৬তম জাতীয় দিবস উদ্যাপনের প্রাক্কালে আমরা আরও আশা করছি, বন্ধুপ্রতীম দুটি মুসলিম দেশ হিসেবে ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের ভিত্তিতে আগামী দিনগুলোতে সউদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে ও ঘনিষ্ঠ হবে।
য় লেখক : চেয়ারম্যান, খাদিমুল হারামাইন আশ-শারীফাইন অ্যারাবিক সেন্টার, ঢাকা
shahadatfaysal@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন