রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

দেশ শাসিত হচ্ছে পরিচালিত হচ্ছে না

প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হারুন-আর-রশিদ
বৃটিশ শাসন, মোগল শাসন এবং হিন্দু মহারাজাদের শাসন। তাদের আইনগুলোর নামও ছিল শাসনমুখী আইন। যেমন ভারত শাসন আইন-১৯৩৫, পাকিস্তান আমলে দুটি শাসনমুখী শাসনতন্ত্র ছিল। ১৯৫৬ সালের শাসনমুখী শাসনতন্ত্র যেটা আইয়ুব সরকার বাতিল করে দেয়। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানের জন্য নতুন শাসনতন্ত্র রচনা করে বলে দিয়েছিলেন তিনি কি পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করবেন। তার শাসনতন্ত্রের কাঠামোর পরিচিতি ছিল মৌলিক গণতন্ত্র। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সেই শাসনতন্ত্র বহাল ছিল। আমরা ১৯৭১ এর আগ পর্যন্ত সেভাবে শাসিত হয়েছিলাম। ১৯৭২ সালে শাসনতন্ত্রের পরিবর্তে আমরা বেছে নিলাম সংবিধান শব্দটা। কথা ছিল নির্বাচনে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দল দেশ পরিচালনা করবে। দুঃখজনক যে দেশ এখন শাসন করা হয়, পরিচালনা করা হয় না। শাসন আর পরিচালনা দুটোর অর্থ ভিন্ন। সেই ব্যাখ্যায় যাব না। শুধু এটুকু বলবÑ শাসনটাকে আরো পাকাপোক্ত করতে ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়েছে দেড় ডজনের ওপর। অর্থাৎ সরকারগুলোর নিজেদের সুবিধার্থে আনা হয়েছিল এসব সংশোধনী। তাছাড়া দেশে এখন গুম করা, খুন করা, ধর্ষণ করা, দখল করা, লুটপাট করা, বিনাবিচারে হত্যা করা, এসব ব্যাপারে শক্ত কোনো আইন নেই, আর থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। একজন মানুষ অপরাধী হলেও আইনি প্রক্রিয়ায় অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে খুন করাও অপরাধী বলে সাব্যস্ত। পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনে বহু সূরায় এ ব্যাপারে আল্লাহ কঠোর নির্দেশ জারি করেছেন। বলেছেনÑ কোনো মানুষকে হত্যা করা বিনা বিচারে, গোটা বিশ্বের মানুষকে হত্যা করার শামিল। ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে যাদের খুন করা হচ্ছে সেটাও বেআইনি কর্মকা- বলে সাব্যস্ত। এসব খুনের বিচার দুনিয়াতে না হলেও পরকালে আল্লাহর বিধানে কঠোর শাস্তির কথা কোরআনে বর্ণিত আছে। সোজা কথা অপরাধীর শাস্তি হবে আইনি ধারায়। সে যে অপরাধী তার প্রমাণ আদালতে সাব্যস্ত হবেÑ এটাই বিধান।
আমাদের শাসক শ্রেণি ক্ষমতায় এলে যে কথাটি ভুলে যান সেটি হলো নিরঙ্কুশ ক্ষমতা সমাজে দুর্নীতির প্রসারতা বৃদ্ধি করে। দুর্নীতি রোধের জন্য পাহারাদার প্রয়োজন। তাই ক্ষমতাকে পাহারা দিয়ে রাখতে হয়। এ কাজটি করে থাকে শক্তিশালী বিরোধী দল, শক্তিশালী পক্ষপাতহীন গণমাধ্যম এবং দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ। আইনের অসামঞ্জস্যতা ঘটলে সরকারকে সহজ সরলপথে রাখতে সহযোগিতা করবে স্বাধীন বিচার বিভাগ। শাসক শ্রেণিকে মনে রাখতে হবে অন্ধ ও স্বার্থপর স্তাবকরা কারো বন্ধু নয়। সমালোচকরাই শ্রেষ্ঠ বন্ধু। কেউ যদি ভুল করে তখন সত্যিকারের বন্ধু ভুলটি শোধরিয়ে দেয়।
পৃথিবীর দিকে তাকালে এখন দেখা যাবে ভিন্ন ছবি অর্থাৎ যে দেশে সহিংসতা বেশি সে দেশে শাসকের স্থায়িত্ব তত বেশি। উদাহরণস্বরূপ সিরিয়ার বাশার আল আসাদ বছর দুয়েক আগে তৃতীয়বারের মতো আরও ৭ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ এই সরকারের আমলেই লাখ লাখ মানুষ স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিয়েছে। শুধু জীবনটা রক্ষার জন্য প্রিয় মাতৃভূমি ছাড়তে তারা বাধ্য হচ্ছে।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শুধু গত আগস্ট মাসেই দেশে ক্রসফায়ারে নিহত ১৯ জন, খুন ৯০ জন, ধর্ষণের শিকার ২৯ জন নারী। এ ছাড়াও উক্ত মাসে শিশুধর্ষণ, গণধর্ষণ, পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আহত ও নিহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য।
দুর্নীতির ছোবলে বিধ্বস্ত রাষ্ট্র কাঠামো। দুর্নীতির পুরো বোঝা বইতে হয় দেশের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকেই। চলমান ক্ষমতার রাজনীতিতে দুর্নীতিই যেন বড় উপাদান। ক্ষমতার বাণিজ্যে লাভবান হওয়া যত সহজ অন্য কোনো বাণিজ্যে সেটা সম্ভব নয়। তাই এই সুযোগটা যতদিন আঁকড়ে ধরে রাখা যায় ততদিন বহাল তবিয়তে দিনগুজরান করা সম্ভব। ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হলে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে তো যাবেই, পাশাপাশি জেল-জুলুমসহ বহুবিধ হয়রানি এমনকি গুম, হত্যার সংখ্যাও হয়ত জ্যামিতিক হারে বাড়বে। যেটা ক্ষমতা হারিয়ে বিএনপি এখন হারে হারে উপলব্ধি করছে। আওয়ামী লীগকে যাতে একরম বেকায়দায় পড়তে না হয় সেজন্য প্রতিপক্ষ বিএনপিকে যতটুকু সম্ভব ক্ষমতার বাইরে রাখা যায় সেই চেষ্টায় তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।
আমরা শুধু জঙ্গির কথাই বলি কিন্তু দেশের অর্থ সন্ত্রাসীরা জঙ্গিদের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এরা রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের টাকাও লুট করেছে। পাঁচটি সরকারি ব্যাংকের আর্থিক দুর্দশাÑএরকম খারাপ অবস্থায় অতীতে কখনো ছিল না। পুঁজিবাজারের লুটেরাদের বিচার এখনো হয়নি। ৮০ লাখ কোটি টাকা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে লুট করে নিয়ে গেছে। সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়ন শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ বক্তব্য প্রদান করেন।
পারিবারিক উত্তরাধিকারের সূত্র ধরে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিল দুটি দল। স্বাধীনতার পর গত ৪৬ বছরের মধ্যে প্রায় ৩৪ বছর এই দুটি পরিবার ক্ষমতায় এসেছে বা আসে পালাক্রমে। মাঝখানে ১০ বছর চলেছিল স্বৈরশাসন। দুই বছর সামরিক ছত্রছায়ায় চলেছিল ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দীনের কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট। ৯০ দিনের সময়সীমার তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে দুই বছর সামরিক কায়দায় ক্ষমতায় থাকে যা সংবিধান লঙ্ঘনের পর্যায়ে পরে। এ ব্যাপারে স্বাধীনতার পক্ষের একক দাবিদার বড় দলটি তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলেনি। এর নেপথ্য কারণ মানুষ যে জানে না সেটাও নয়। সেহেতু দেশে স্বৈরশাসনের মেয়াদ আরও দীর্ঘ হয়। এদেশে রাজাকার উপাধিপ্রাপ্ত দল জামায়াতে ইসলাম একদিনের জন্যও এককভাবে ক্ষমতায় আসেনি। জামায়াতকে নিয়ে দেশের দুটো বড় দল ভোটের রাজনীতি করেছে। ৮০ দশক থেকে বড় দুটো দলের কাছে জামায়াত ছিল ক্ষমতার ফেক্টর। বাম দলের চেয়ে জামায়াতের আসন সংখ্যা বেশি। ভোটার সংখ্যা বেশি না হলে আসন সংখ্যা সংসদে বাড়ে না। ’৯১-৯৬ সালেও জামায়াত আওয়ামী লীগের মিত্র দল ছিল। তখন জাতীয় পার্টি ও জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ত্রিদলীয় ব্যানারে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে দেশ কাঁপানো দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলে। নিজামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লার সাথে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতার সাথে বিশেষ করে মরহুম আবদুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের বহু সবাক চিত্র এখনো পত্রপত্রিকা খুললে জাতির লজ্জা পেতে হবে। যারা যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী অপরাধী-যাদের সর্বাঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী ’৭১ এরপর থেকেই ঘৃণিত হওয়া উচিত ছিল। ক্ষমতার স্বার্থে একসময়ের শত্রু আবার যে বড় বন্ধু হয়ে যায় তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেবল উজ্জ্বল দৃষ্টান্তই হয়ে যাচ্ছে। মনে হয় ভবিষ্যতেও থাকবে। কারণ রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। একমাত্র রাজনীতিতে ক্ষমতার স্বার্থে কোন দল চিরকাল বৈরী বা দুশমন থাকে না। বলতে দ্বিধা নেই উল্লিখিত কারণেই বাংলাদেশের ললাটে তেমন উন্নতির লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়নি। অর্থাৎ ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ২০ লাখ ক্ষমতাধর মানুষকে বাদ দিলে ১৫ কোটি ৮০ লাখ মানুষই এখন শোষিত হচ্ছে ২০ লাখ ক্ষমতাধর মানুষ কর্তৃক। বিগত ৪৬ বছরে দেশে বৈদেশিক সাহায্য এসেছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ঐ ২০ লাখ ক্ষমতাদর মানুষরা লুণ্ঠন করেছে ৭৫ শতাংশ। দুষ্টচক্রের কারণে বছরে সৃষ্টি হচ্ছে ৮০ হাজার কোটি কালো টাকা যা জাতীয় আয়ের তিন ভাগের এক ভাগ। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরো ৭০ হাজার কোটি টাকার খেলাপিঋণ। এরাই বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত। সম্প্রতি বিশিষ্ট ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত তার গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করেছেন।
সম্প্রতি ফেসবুকে দেখলাম একজন প্রশ্ন করছে দেশে রাজাকারের সংখ্যা কত। মাঠে-ময়দানে যেভাবে রাজাকার শব্দটি উচ্চারিত হচ্ছে তাতে মনে হয় ’৭১-এর ৫ শতাংশ রাজাকার এখন ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। একটি দলের পক্ষপাতিত্ব না করলে সে মুক্তিযোদ্ধা হলেও রাজাকার। আমরা মনে করি শব্দটি যারা বেশি উচ্চারণ করছে তাদের মধ্যেও রাজাকার আছে। উত্তরাধিকার সূত্রেও এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির মধ্যে রাজাকার নেই এ কথা বলা যাবে না। শুদ্ধি অভিযান চালালে নিজ দলের মধ্য থেকে প্রথম তা শুরু করতে হয়। নিজে না বদলালে অন্যকে বদলানোর নসিহত করাও একটি অন্যায়। পত্রিকায় দেখলাম একটি জেলার এক বয়স্ক জামায়াত নেতা ফুলের তোরা দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। বাংলাদেশে এখন বহু আলোচিত শব্দ জঙ্গি এবং রাজাকার। আলোচনা যত বেশি হয় ততই এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফেসবুকের মন্তব্যটাও ছিল সেরকম। খারাপ শব্দের আলোচনা যত কম হবে ততই মঙ্গল রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য। শব্দ চয়ন না করে আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিলে দুষ্টচক্রের মূলোৎপাটন সহজ হয়। শ্রদ্ধাভাজন গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ সম্প্রতি ‘জঙ্গিবাদ ছাড়াও সমাজের আরও শত্রু আছে’ নিবন্ধে লিখেছেন, অসম্মান করে কথা বলাও এক ধরনের সন্ত্রাস। আগের দিনের রাজনীতিকরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সমালোচনা করতেন কিন্তু অসম্মান করে বক্তব্য দিতেন না। একজনকে প্রকাশ্যে অসম্মান করে কথা বলা তাকে শারীরিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে হত্যা করার শামিল।
আইএস প্রভাবিত জঙ্গিবাদের ভয় সাম্প্রতিক ব্যাপার। তার আগেও আমরা জঙ্গিমুক্ত ছিলাম না। ইসলামিক জঙ্গি যেমন ভীতিকর তেমনি অনৈসলামিক জঙ্গিও সমান ভয়াবহ। দেশের চলমান সময়ে জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির কারণে তা আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রশাসন যন্ত্র যারা জনগণের সেবক তারা আজ রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। সম্প্রতি জাসদের নেতা আসম আবদুর রব বলেছেন রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া আইজিপির কাজ নয়।
ছোটবেলায় বিজ্ঞান বইতে পড়েছি পদার্থের তিন অবস্থা তরল, কঠিন এবং বায়বীয়। বর্তমান রাষ্ট্রের অবস্থাও অনেকটা সেরকম। সম্প্রতি একজন বড়মাপের মন্ত্রী বলেছেন রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রয়োজনে আমরা কঠিন হবো। কঠিন জিনিসই কিন্তু রাষ্ট্রকে ডুবায়। ইরাকের সাদ্দাম হোসেন শাতিল আরব দখল এবং কুয়েত দখল নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে ইরান এবং কুয়েতের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। কঠিন হয়ে শেষ পর্যন্ত নিজে ধ্বংস হলো পরিবারকে ধ্বংস করলো এমনকি সপ্তম আশ্চর্যের দেশ ইরাককে ছারখার করে দিল। কঠিন শব্দটি ভয়ংকর। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া ভুট্টো গংরা কঠিন হয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটিকে ধ্বংস করলো। ভুট্টো পরিবার ধ্বংস হলো। পাকিস্তান রাষ্ট্র ধ্বংসের খলনায়ক ছিল জুলফিকার আলী ভুট্টো ‘লিগ্যাসি অব ব্লাড’ বইটি পড়লে তা অনুধাবন করা সহজ হবে যে কোনো পাঠকের কাছে। ইসলাম মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে বলেছে। উগ্রপন্থা পরিহার করতে বলেছে। ইসলামে এসব কর্মকা- পুরোপুরি নিষিদ্ধ। আল্লাহ নিজেই বলেছেন পবিত্র কোরআনে, তোমরা সীমা অতিক্রম করিও না। আসলে আল্লাহ বলতে চেয়েছেন অতিক্রম নয় সীমারেখার কাছেও যেও না, গেলে নিশ্চিত তোমার পতন। গৌতমবুদ্ধর একটি কথা এখানে তুলে ধরছি- জগতে শত্রুতার দ্বারা কখনো শত্রুতার উপশম হয় না, মিত্রতার দ্বারাই শত্রুতার উপশম হয়। তিনি আরেকটি কথা বলেছেন- অহিংসা পরম ধর্ম, জীব হিংসা মহাপাপ, সর্বজন দয়া প্রদর্শনই মানুষের কর্তব্য। বুদ্ধের এই দুটি বাণী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একেবারেই অনুপস্থিত। আমরা বুঝতে চাই না অন্যকে ঘৃণা করলে নিজেও ঘৃণিত হয়ে যায়। ঘৃণা একটি ভয়ংকর অসুখের নাম। এই অসুখ তাড়াতে হলে একটি মাত্র অঙ্গীকার দরকার- আর ঘৃণা নয় অনেক ঘৃণা করেছি আজ থেকে মানুষকে ভালবাসবো তার ইতিবাচক দিকটি নিয়ে কথা বলবো। তাহলে নিজেকে অন্যের কাছে কখনো ঘৃণিত হতে হবে না।
দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি কথা মনে পড়ে- ২৬ বছর জেল খেটে এসে জোহান্সবার্গে বলেছিলেন শেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বোথাকে লক্ষ্য করে ক্ষমা, ক্ষমা, ক্ষমাÑ শেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা মানুষ। আসুন আমরা মানুষ হয়ে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমরা ভেবেছিলাম এতবড় লজ্জা, জেলজীবন থেকে বেরিয়ে শেতাঙ্গ সরকারকে নাস্তানাবুদ করে দেয়ার সকল প্রচেষ্টা চালাবেন। কিন্তু ঘটনা যা দেখলাম তা বিস্ময়কর। অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত। পৃথিবীতে একজন মানুষকে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সুন্দর মানুষ হিসাবে পরিণত করে একটি গুণ, আর সেটি হলো ক্ষমাশীলতা।
য় লেখক : গ্রন্থকার, গবেষক ও কলামিস্ট
যধৎঁহৎধংযরফধৎ@মসধরষ.পড়স

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন