শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় দিনাজপুরে আমের বাজারে ধ্বস

পানির দামে দু-মাস পরে টাকা দেয়ার শর্তে ক্রেতা পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা

মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০২১, ৬:৩২ পিএম

দিনাজপুর সদর উপজেলার চেড়াডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা প্রসিদ্ধ ফল ব্যবসায়ী রশিদুল ইসলাম বললেন ভাই আম লাগলে বলবেন-দাম যাই দিবেন তাই নিবো। যদি মনে করেন তাহলে যা দাম দিবেন সেই টাকাও দু’মাস পরে দিয়েন। কিন্ত হঠাৎ কি হলো যে একপ্রকার বিনে টাকাতেই দিতে চাচ্ছেন। কেননা কয়েকদিন আমের দাম যা চেয়েছিলেন তাতে ৫ কেজি আম নিয়েই শখ মিটিয়েছিলাম। মাত্র ১৫/২০ দিন আগে লিচুর সময়তো বলেছিলেন ভাই টাকাটা আগে দিতে হবে। আজ অবস্থা। সে বললো যা পাবো তাই লাভ কেননা ১৫ জুন থেকে দিনাজপুরে কঠোর লকডাউনের পর থেকে আম কেনার লোক নেই। যে যেভাবে পারছে আম বিক্রি করে যতটুকু পারছে টাকা উঠানোর চেষ্টা করছে। যা বিক্রি হচ্ছে তা দিয়ে গাছ থেকে আম পারা, পরিবহনসহ দোকান ভাড়াই উঠছে না। সামনে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের খবরে আরো খারাপ অবস্থা। বলতে পারেন আমের বাজারে ধ্বস নেমে গেছে। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি আমের ৭০ শতাংশ কমে গেছে। দিনাজপুরের বিখ্যাত মিশ্রিভোগ, গোপালভোগ, ছাতাপড়া, বৃন্দাবনি জাতের অতি উন্নতমানের আম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চার দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য আম বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা কেজি হিসাবে।

দিনাজপুরের মিশ্রিভোগ-গোপালভোগ, ল্যাংড়া ঠাকুরগাঁওয়ের বৃন্দাবনি আম ও বেদেনা লিচুর সুনাম গত কয়েকযুগের। হালে গত এক দশকে বেদেনার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে চায়না-থ্রি লিচু। আম ও লিচুর কারণে দিনাজপুরে গড়ে আন্তর্জাতিক মানের জুস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণের কারখানা। মিষ্টি আর রসালো ফলের জন্য প্রতিবছরই কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। দিনাজপুর অঞ্চলে সকল ফসলই লেট ভ্যারাইটি হিসাবে পরিচিত। ফলে সাতক্ষিরা, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা রাজশাহীর অনেক পরেই দিনাজপুরে সকল ফসল দেরীতে বাজারে আসে। গত বছর দেশে করোনা মহামারি ও রমজান মাসে লিচুতে পাক ধরায় ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ধ্বস নামেনি। অনাবৃষ্টির কারণে এবার ফলন কম হওয়ার পরও করোনাকালীন সময়ে সরকারের বাজার ও পরিবহন ব্যবস্থাকে বিশেষ সুযোগ দেয়ায় লিচুর দাম অনেক ভাল পাওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমিত হওয়ায় সীমান্তবর্তী দিনাজপুর জেলা গত ১৫ জুন বিশেষ কঠোর লোক ডাউন ঘোষণা করে দিনাজপুর করোনা প্রতিরোধ সমন্বিত কমিটি। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় সাধারণ দোকানপাট ও গণ পরিবহন। স্বাভাবিকভাবেই জনসমাগম কমে আসে। যার প্রভাব পড়ে আমের বাজারে। আমের দাম কমতে থাকে। কিন্তু দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় একেবারে মাথায় হাত পড়েছে আম ব্যবসায়ীদের। এখনও দিনাজপুরের বাগানগুলিতে বৃন্দাবনি, ছাতাপরা আম পুরোটা হয়নি। এরপরেও রয়েছে সুরমাই ফজলি ও কদুয়া ফজলি।

দিনাজপুর ও ঠাকুরগাও জেলায় এখনও বাগানগুলিতে প্রচুর আম রয়েছে। রাতভর পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু গত কয়েকদিনে আমের বাজারে ধ্বস নামায় বাহির থেকে আসা ফড়েয়ারা বাগান মালিক ও পাহারাদারদের হাতে গাছের ফল ছেড়ে পালিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাজারে আম নিয়ে আসছে। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় পানির দামে আম বিক্রি করে বাড়ী ফিরছে। যেহেতু ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন শুরু হতে যাচ্ছে তাই জেলার বাহিরে আম যাচ্ছে না বললেই চলে। কোচ ও কুরিয়ার আগে ভাগেই সাবধানতা অবলম্বন করেছে। বুকিং নেয়া কমিয়ে দিয়েছে। কঠোর লকডাউনের এক দিন আগে থেকেই আম বুকিং নেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ফল ব্যবসায়ী রশিদুল জানালো তার ৩৬ টি বাগানের ফল রয়েছে। সে এখন গাছ থেকে আম পারার সাহস পাচ্ছে না। প্রয়োজনে আম ঝড়ে পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে কিন্তু তারপরও কোন উপায় নেই। এ অবস্থায় সরকারী পদক্ষেপের দিকেই অনেকে তাকিয়ে আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন