রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

লকডাউনের নামে প্রহসন নয়

| প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

অপরিকল্পিত লকডাউনের কবলে পড়েছে দেশ। পদে পদে সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার জানানো হয়, দেশজুড়ে সোমবার থেকে সাতদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হবে। শনিবার রাতে সে সিদ্ধান্ত বদলে যায়। জানানো হয়, দেশব্যাপী কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে। সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন থাকবে। এ সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী যান ছাড়া সকল গাড়ি বন্ধ থাকবে। কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। রফতানিমুখী কার্যক্রম সচল রাখতে ব্যাংকিং সেবা চালু থাকবে। সর্বাত্মক লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া বাকী সব বন্ধ হয়ে যাবে। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু যেভাবে বাড়ছে, তাতে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের বিকল্প নেই। করোনা প্রতিরোধে নিরংকুশ লকডাউন অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত। কিন্তু আমাদের দেশে লকডাউনের নামে এক ধরনের প্রহসন হয়ে থাকে। বলা হয়, ‘লকডাউন’ বা ‘কঠোর লকডাউন’; বাস্তবে তার দেখা মেলে না। লকডাউনের মধ্যেই গাড়ি-ঘোড়া সচল, দোকানপাট খোলা থাকে, চালু থাকে বাজারহাট, লোকচলাচলও স্বাভাবিক থাকে। লকডাউনের লক্ষ্য হলো, লোকজনকে ঘরে আটকে রাখা, বাইর হতে না দেয়া। আমাদের লকডাউনে এর ব্যতিক্রমই প্রত্যক্ষ করা যায়। এ কারণে লকডাউনের সুফল লাভ করা সম্ভব হয় না। গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশে লকডাউন চলছে। অত্যন্ত ঢিলেঢালাভাবে তা পালিত হয়ে আসছে। এই লকডাউন করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধে তা তেমন কোনো কাজে আসেনি। আসেনি বলেই লকডাউন কঠোর ও সর্বাত্মক করার তাকিদ এসেছে। এই সময়ে কয়েক দফায় মানুষ শহর থেকে গ্রামে এবং গ্রাম থেকে শহরে ব্যাপকভাবে যাতায়াত করেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধির এটাই অন্যতম বড় কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ সময়ে নতুন উপসর্গ হিসাবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকা ব্যক্ত করেছেন।

এ যাবৎকালের লকডাউন যদি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যেতো, সীমান্ত সিল করা যেতো, তাহলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তো না, তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকা তৈরি হতো না এবং নতুন করে কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণার প্রয়োজন দেখা দিতো না। এখানে আমলাতন্ত্রের অনভিজ্ঞতা, অবিমৃষ্যকারিতা ও অযোগ্যতা বিশেষভাবে দায়ী। কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেয়ার পরপরই শহর থেকে গ্রামে মানুষের সয়লাব শুরু হয়েছে। লকডাউনের একটা নীতি হলো, যে যেখানে আছে, সেখানেই থাকবে। নিজেকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারবে না, প্রশাসন ঘোষণা দিয়েই খালাস; এই জনস্থানান্তর ঠেকানোর কোনো দায় যেন তার নেই। দ্বিতীয়ত: লকডাউনে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে দৈনিক শ্রমিক, রিকশাচালক, পরিবহন ও দোকান শ্রমিক, হকারসহ সবচেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ। এদের টিকে থাকা, বেঁচে থাকার জন্য প্রশাসনের তরফে উচিৎ খাদ্যসহ নগদ কিছু সহায়তা প্রদান করা। লকডাউনে মূলত এরাই বাইরে আসতে বাধ্য হয় জীবনজীবিকার তাকিদে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে তারা সঙ্গতকারণেই বাইরে বেরোবে না। হুট করেই লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়। কয়েকদিন আগে টেকনিক্যাল কমিটি সুপারিশ করে। এর পরপরই বাজারে শুরু হয় উল্লম্ফন। মানুষ আতংকিত হয়ে পণ্যাদি বেশি বেশি কিনতে বাধ্য হয়। এতে বাজারে চরম ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। গরীব মানুষদের পণ্য কেনার সামর্থ্য সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়। পণ্যের মজুদ, সরবরাহ এবং বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ সৃদৃঢ় হলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। এটা নীতিনির্ধারণ কর্তৃপক্ষের আমলে থাকে না। ফলে মানুষ দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় থেকে রেহাই পায় না। কঠোর লকডাউন শুরুর আগে এই বিষয়গুলো প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে। যে কোনো মূল্যে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে। বার বার লকডাউনের নামে ছেলে খেলা চলতে পারে না।

স্বাস্থ্য মহাপরিচালক যে বক্তব্য দিয়েছেন, হু যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে বিচলিত ও উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই। সামনে কঠিন দিন আসছে। তৃতীয় ঢেউ শুরু হলে বিপর্যয়ের সীমা থাকবে না। কাজেই, কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিকদের টিকা দানের ব্যবস্থা করতে হবে। ভারতের টিকা পলিটিক্সের অসহায় শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। সম্পূর্ণ ভারতনির্ভর না হয়ে আমরা যদি শুরুতেই অন্যান্য দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের পদক্ষেপ নিতাম, তবে টিকা নিয়ে এখন যে সমস্যা-সংকট দেখা দিয়েছে, তা দেখা দিতো না। ধারণা করা হচ্ছে, অচিরেই টিকার সংকট কেটে যাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে দেড় কোটি টিকার চুক্তি হয়েছে। কোভ্যাক্স ফেসিলিটির কাছে ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা বুকিং দেয়া হয়েছে। এসবসহ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ১১ কোটি টিকা দেশে আসবে, যাতে ৫ কোটির মতো মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, দুয়েকদিনের মধ্যে সিনোফার্মের ৫০ লাখ টিকা আসছে। কোভ্যাক্সের ২৫ লাখ টিকা আসবে ১০ দিনের মধ্যে। এসব টিকা এসে পৌঁছালে সীমিত পরিসরে হলেও টিকাদান কার্যক্রম ফের শুরু করা যাবে। আশা করা যায়, পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে। বলা বাহুল্য, টিকা আসবে বলে বসে থাকলে চলবে না। চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। চেষ্টা জোরদার রাখতে হবে। আমাদের প্রচুর টিকার প্রয়োজন হবে। দ্রুততম সময়ে তা সংগ্রহ করতে হবে। বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক হতে যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, বিদেশগমনেচ্ছুদের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে। আর যেহেতু টিকা গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে করোনার ঝুঁকি ৮০ শতাংশ কমে যায়, সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশের সকল মানুষের টিকাদান সম্পন্ন করতে হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Sanaullah Sarker ২৮ জুন, ২০২১, ২:০৮ পিএম says : 0
The comment is very positive. I like it.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন