সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

লড়াইটা ‘পাগলাটে’ সমর্থকদেরও

ইংলিশদের কোয়ারেন্টিন বাধা ডেনিশদের কাছে ৪৭ লাখ টাকাও তুচ্ছ্ব!

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইংলিশদের কোয়ারেন্টিন বাধা

ইউরো জ্বরে কাঁপছে পুরো ইংল্যান্ড। সেই উত্তাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে চীরপ্রতিদ্বন্দ্বী জার্মানির বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয়ে। সেদিন শুধু ২ গোলে জয় বলেই নয়, গোটা ম্যাচে দাপট ছিল ইংল্যান্ডেরই। নিজেদের প্রিয় প্রাঙ্গন ওয়েম্বলিতে ঘরের দর্শকদের সামনে এমন জয় উচ্ছ্বাসে এনে দিয়েছে বাড়তি রঙ। জয়টি আরও বিশেষ কিছু হয়ে উঠেছে ইতিহাসের দায় মেটানোর জন্যও। সেই ১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এই প্রথম বড় কোনো আসরের নকআউট পর্বে জার্মানিকে হারাতে পারে ইংল্যান্ড। সেই সঙ্গে একটি দায়ও মেটানো হলো।
১৯৯৬ ইউরোর সেমি-ফাইনালে ওয়েম্বলিতে জার্মানির কাছে ইংল্যান্ড হেরেছিল টাইব্রেকারে শেষ শটে সাউথগেট গোল করতে ব্যর্থ হওয়ায়। ২৫ বছর পর সেই একই মাঠে একরকম প্রায়শ্চিত্ত হলো তার কোচ হিসেবে। উচ্ছ¡সিত সাউথগেট এখন কোয়ার্টার-ফাইনাল জিতে ওয়েম্বলিতে ফিরতে চান ট্রফির স্বপ্ন পূরণে, ‘যে কোনো দলই এখন আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখবে আমরা বিপজ্জনক। প্রত্যাশা যখন আকাশছোঁয়া থাকে, সেটি পূরণ করতে পারার চেয়ে বড় কিছু আর নেই। কাজেই আমরা গর্ব করতেই পারি। তবে এখানে থামতে চাই না। আশা করি সেমি-ফাইনাল ও ফাইনাল খেলতে ফিরব এখানেই।’
এত দিন নিজের দেশের সব ম্যাচই ওয়েম্বলিতে বসে উপভোগ করেছিলেন ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে ইউক্রেনের বিপক্ষে হ্যারি কেইনদের আজ রাতের ম্যাচটি হবে রোমে। আর সেখানেই যত বিপত্তি। চাইলেও রোমে গিয়ে খেলা দেখতে পারবেন না ইংল্যান্ডের দর্শকেরা! উয়েফা ইতালির করোনার কোয়ারেন্টিন নিয়মকানুন মানতে ইংল্যান্ড থেকে আসা দর্শকদের কাছে কোনো টিকিট বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইন অনুযায়ী যুক্তরাজ্য থেকে রোমে গেলে ভ্রমণকারীদের পাঁচ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তবে যেসব ইংলিশ দর্শক বেশ কিছুদিন ধরে এই ম্যাচ দেখার জন্য ইতালিতে আছেন, তাঁদের বেলায় এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। এই নিয়মের অপব্যবহার এড়াতে নির্দিষ্ট টিকিট বিক্রির নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এই ম্যাচের জন্য। উয়েফার ইতালিয়ান কর্তৃপক্ষ গতপরশু রাত থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাঁরা যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা, তাদের কাছে কোনো টিকিট বিক্রি করা হবে না। যেসব নম্বরের টিকিট বাতিল করা হয়েছে, সেগুলো কাউকে দেওয়াও হবে না।
স্তাদিও অলিম্পিকোয় ১৬ হাজার দর্শকের খেলা দেখার অনুমতি আছে। সেখান থেকে শতকরা ১৬ ভাগ টিকিট ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন চেয়েছে। এর মানে ২৬৫০টি টিকিট ইংল্যান্ডের দর্শকের জন্য বরাদ্দ।
তবে এই সমস্যা সমাধানের জন্য উয়েফা ও রোমের ব্রিটিশ দূতাবাসের সঙ্গে যতটা সম্ভব আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু দূতাবাস বার্তা সংস্থা এএফপিকে এক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে, এই ম্যাচের জন্য কোনো টিকিট বিক্রি ও বিতরণ করা হবে না। শেষ পর্যন্ত যদি ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা কোনো টিকিট না পান, তাহলে হয়তো বাড়িতে বসে টেলিভিশনে অথবা কোনো বড় পর্দায় তাঁদের খেলা দেখতে হবে। আর শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড জিতলে বড় উৎসবটা ওয়েম্বলির জন্যই তুলে রাখতে হবে। সেখানেই যে অনুষ্ঠিত হবে সেমিফাইনাল আর শিরোপা নিষ্পত্তির ফাইনাল!

ডেনিশদের কাছে ৪৭ লাখ টাকাও তুচ্ছ্ব!

ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে আজ ডেনমার্কের মুখোমুখি হবে চেক প্রজাতন্ত্র। ম্যাচটি হবে আজারবাইজানের বাকুতে। উত্তরের দেশটি থেকে ডেনিশ সমর্থকদের পূর্ব ইউরোপে খেলা দেখতে যাওয়া যেমন খরচ তেমনি ঝামেলারও। প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটারের মতো দূরত্ব। স্বাভাবিকভাবেই টাকাপয়সা খরচ করে সেখান থেকে ঘুরে আসার মতো সামর্থ্যবান ডেনিশ ফুটবলপ্রেমীরাই কেবল খেলা দেখতে যাবেন। এই সুযোগটাই নিয়েছে ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান হার্নিং হেলিকপ্টারস। দেশের জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ সামনে রেখে তারা একটি ভিআইপি প্যাকেজ ছেড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। তিন দিন আগে নিজেদের ফেসবুক পেজে এই প্যাকেজের বিজ্ঞাপন দেয় হার্নিং হেলিকপ্টারস। এরই মধ্যে ছয়জনের কাছে ‘রাউন্ডট্রিপ’ (যাওয়া-আসা) বিক্রিও করেছে তারা।
ব্যক্তিগত বিমানে এসব সমর্থকদের আনা-নেওয়া করা হবে। সেই বিমানে থাকবে পানশালা, ক্যাভিয়ার, তিন বেলা খাবার (বিমানেই) এবং ম্যাচের টিকিট। এ জন্য খরচ করতে হবে ৪৭ হাজার ইউরো (৪৭ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রায়)। হার্নিং হেলিকপ্টারসের মালিক স্টেফান এরলানডেসেন ডেনিশ মিডিয়াকে বলেন, ‘বিষয়টি আসলে পথ বের করে মানুষকে চমকে দেওয়ার। ডেনিশরা এখন প্রেরণাদায়ী মেজাজে আছে। এমনকি আমি- যে কিনা সব সময় কাজ করি, কখনো ফুটবল দেখি না, তবু খেলা নিয়ে উৎসাহী।’
যেদিন এই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় সেদিনই ট্রিপগুলো বিক্রি হয়ে যায়। শুক্রবার (গতকাল) কোপেনহেগেন থেকে আজারবাইজানের উদ্দেশে রওনা হবে তারা। ডেনিশ ফুটবলের এই ছয় ভক্ত নিয়ে এরলানডেসেনের মন্তব্য, ‘তারা সবাই মধ্যবয়সী। দেখে বিরক্তিকর মনে হয় না। যাওয়ার পথে তারা যে ভীষণ চাঙা মেজাজে থাকবে সেটা বলা বাহুল্য।’
ইউরোয় এবার ’৯২-এর স্মৃতি ফিরিয়ে আনার পথে রয়েছে ডেনমার্ক। সেবার সবাইকে অবাক করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। এবার ‘বি’ গ্রুপ থেকে লড়াকু পারফরম্যান্স দেখিয়ে তারা উঠে আসে শেষ ষোলোয়।
ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই তারা হার্ট অ্যাটাকের কারণে হারায় মূল তারকা ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনকে। মাঠেই পড়ে যান তিনি। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলেও আর কখনো ফুটবল খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচে ১-০ গোলে হারে ডেনমার্ক। বেলজিয়ামের বিপক্ষে পরের ম্যাচেও হারলে সমীকরণ ভীষণ কঠিন হয়ে যায় ডেনমার্কের জন্য। কিন্তু শেষ ম্যাচে রাশিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে শেষ ষোলোয় উঠে আসে ডেনমার্ক। শেষ ষোলোয় ওয়েলসকে ৪-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে তারা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন