দেশে শুরু হওয়া সাত দিনব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের (বিধিনিষেধ) তৃতীয় দিন চলছে। আজ (শনিবার) রাজধানীর সড়কে মানুষ ও যানবাহনের পাশাপাশি রিকশার তুলনামূলক উপস্থিতি বেড়েছে। তবে সেই সংখ্যা লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নগণ্যই আছে। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট।
শনিবার (৩ জুলাই) রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাকাড়ী, কমলাপুর, মতিঝিল, শাজাহানপুর, মালিবাগ, মগবাজার, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, ফার্মগেইট, বিজয় সরণী, আগারগাঁও, তালতলা এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, আগের দুইদিনের মতো আজও সড়কে তেমন একটা মানুষ বের হননি। তবে গত দুই দিনের তুলনায় কিছুটা মানুষ বেড়েছে। সেই সঙ্গে কিছু প্রাইভেট যানবাহন, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ছাড়া অন্য যানবাহন চলতে দেখে যায়নি। কিছু কিছু অফিস খোলা থাকায় সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অফিসের গাড়ি অথবা রিকশাযোগে চলাচল করছেন। অনেকে যানবাহন না পেয়ে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। সড়কে আজ রিকশার সংখ্যাও কিছুটা বেড়েছে।
মোত্তালেব হোসেন নামের একজন অফিসগামী বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কিন্তু জরুরি সেবার কারণে আমাদের অফিস খোলা। অফিস নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে তাদের কর্মীদের আনা-নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই অফিসের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি বলেন, গত দুদিনের তুলনায় আজ সড়কে বেশি মানুষ চোখে পড়ছে।
সকাল পৌনে ৯টার দিকে সোনারগাঁও মোড়ে ডিউটিরত ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে। তবে কাউকে বিনা জিজ্ঞাসাবাদে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে না। উপযুক্ত কারণ দর্শাতে না পারলে গাড়ি আটকে রাখছে পুলিশ।
ফার্মগেইটে মকবুল হোসেন নামে এক পিকাপ চালক বলেন, গত দুই দিনের তুলনায় আজ সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে মানুষও বের হয়েছে তুলনামূলক বেশি। তবে অন্যান্য বারের লকডাউন বা বিধিনিষেধের সময়ের চেয়ে এবারের লকডাউনে বাইরে মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম।
একই রকমের মন্তব্য জানালেন আগারগাঁওয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক সদু মিয়া। তিনি বলেন, গত দুই দিনের চেয়ে আজ রাস্তায় মানুষ এবং যানবাহন কিছুটা বেশি। যে কারণে আগের দুই দিনের তুলনায় আজ সকাল সকাল ট্রিপ বেশি পেয়েছি। গত দুই দিন তো তেমন একটা ট্রিপই পাইনি, আজ তাও পাচ্ছি। আজ সড়কে রিকশাও বেশি নেমেছে। তবে অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের লকডাউনে মানুষ কম বের হচ্ছে। এবারের লকডাউনকে সফল করতে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি।
এদিকে প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সর্বাত্মক লকডাউন চলাকালে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবেন। এছাড়া বিদেশ থেকে আসা এবং বিদেশগামী আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীরা অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটে চলাচল করতে পারবেন।
বিধিনিষেধ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র বহন করে যাতায়াত করতে পারবেন।
প্রজ্ঞাপন অনুসারে, পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র ও স্থল) এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিস এই নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।শিল্প কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন