শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দুর্দশায় কয়েক লাখ মানুষ

অব্যাহত বন্যা ও ভাঙন আশ্বাসেই দায়িত্ব শেষ করছেন কর্তাব্যক্তিরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল গুলোতে বন্যা ও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। রংপুরে তিস্তা, ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া উপজেলার প্রায় ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীর উভয় তীরে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বড় ধরণের বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষ। গাইবান্ধায় যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার ৮ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ঝিনাইগাতীর মহারশী নদীর দিঘির পাড়ে শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৬ দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে ১৫-২০ গ্রামের হাজারো মানুষ। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হরিনাপাটি, গ্রামের শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি বসত ভিটা ভাঙনে চলে গেছে। বন্যা ও ভাঙনে কয়েকলাখ মানুষ দুর্দশার মুখে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন বন্যা ও ভাঙনের সর্বশেষ তথ্য :
রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান: তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কয়েক সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পাশাপাশি কুড়িগ্রামের ধরলা, দুধকুমার, রংপুরের করোতোয়া ও যমুনেশ্বরী নদীর পানিও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বানের পানি ঢুকে পড়ায় বিভিন্ন প্রকার রবিশস্য হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এলাকায় চাষ করা কাঁচা মরিচ, পটল, ঢেঁড়শ, করলা, পেঁপে ও বেগুনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকে পড়ায় সেগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। কারন এসব ফসলের ক্ষেতে ৫/৬ দিন পানি থাকলে সেগুলো মরে যায়।
তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, পাটিকা পাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নসহ রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ, ছোট রূপাই, লক্ষিটারী, নেহালী, কচুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি, শঙ্করদহ, বাগেরহাট আশ্রয়ন, পূর্ব ইচলির ১ হাজার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, মটুকপুর, চিলাখাল, খলাইরচরসহ নিম্ন এলাকার ১ হাজার ৫শ’, নোহালীর মিনার বাজার, কচুয়াচর, বৈরাতী বাঁধের ধার, চর নোহালী, বাগডহরা চরের ৫শ’, মর্নেয়া ইউনিয়নের মর্নেয়াচর, তালপট্টি, আলাল চর, নরসিং চরের ৫শ’, গজঘন্টা ইউনিয়নের কালির চর, ছালাপাক, গাউছিয়া বাজার, জয়দেব, মইশাসুর, রামদেব চরে ৫শ’সহ আলমবিদিতর ও গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের নিম্ন এলাকার ৫-৬শ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম জানিয়েছেন, পানিবন্দি এসব পরিবারের জন্য ইতোমধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানের অনুক‚লে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।
স্টাফ রির্পোটার, গাইবান্ধা থেকে জানান : ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালা ও আবাদি জমি। ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির কারণে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা, ভুষিরভিটা, রতনপুর, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী, গলনা ও জিয়াডাঙ্গা গ্রামে সবচেয়ে বেশী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ফুলছড়ি সদর, ফজলুপুর ও এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা এলাকায় ভাঙনের গতি বেড়েই চলছে। বাড়ি-ঘর, গাছপালা কেটে নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন নদী পাড়ের মানুষ। আশ্রয় নিচ্ছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা থেকে ভুষিরভিটা পর্যন্ত ৬৫০ মিটার এলাকা ভাঙনরোধের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ওই এলাকায় ৬৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এছাড়া সাঘাটায় ভাঙন কবলিত এলাকায় ঠিকাদারের মাধ্যমে ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
ঝিনাইগাতী (শেরপুর ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : পাহাড়ী ঢলে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ চত্বর, উপজেলা সদর বাজার সহ পুরো ঝিনাইগাতী উপজেলা ডুবে যায়। মহারশী নদীর দিঘির পাড়ে শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে ঢলের পানি গ্রামাঞ্চলে ঢুকে পড়ে। এতে বহু গ্রাম পানির নীচে তলিয়ে যায়। ইউনিয়নসমূহের ১৫-২০ গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যাকবলিত এলাকাসমূহে খাদ্য-জ্বালানি ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এ দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ ও সহকারী কমিশনার ( ভূমি ) জয়নাল আবেদীন বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি আরো জানান, দিঘির পাড় ভেঙে যাওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর দিয়ে একটি কাঠের সেতু নির্মাণের জন্য ২ লাখ টাকা রাজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান : সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হরিনাপাটি গ্রামের শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি বসত ভিটা সুরমা নদীর ভাঙনে চলে গেছে। এলাকাবাসি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাপ দাদার বসত বাড়ি ফসলি জমি আর কত নদী পেটে গেলে আমরা স্থায়ী বাঁধ পাবো। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন ঠেকাতে প্রতিশ্রæতি দিলেও পরে কোন স্থায়ী ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহনান বলেন, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধী হুইপ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিছবাহ এবং পাউবো কর্মকতাসহ উপজেলার হরিনাপাটি গ্রামের নদীর ভাঙন স্থান সরেজমিনে গিয়ে দেখেছেন। আমরা নদী ভাঙন রোধে উদ্যোগ নিয়েছি।
নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : দীর্ঘদিন আগে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও অনেক স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পেলে নদী সংলগ্ন এলাকার ফসলী জমির মাঠে পানি প্রবেশ করে কৃষি ফসল তছনছ করে। এছাড়াও ওই এলাকাগুলোতে দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজও বন্যা নিয়ন্ত্রণ আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন হয়নি।
ফরিদপুর জেলা সংবাদাতা জানান : ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ও ডিক্রীরচর এলাকা, সিএন্ডবি ঘাট, মান্দারতলা ও ভূঁয়াবাড়ীরঘাট, চরভদ্রাসন উপজেলার চরহাজীগঞ্জ, সদরপুর উপজেলার চরনাসীরপুর, দিয়ারার, ও চরমানাইর ইউনিয়নের পদ্মারচর সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
বিগত ৫ বছরে এই তিনটি ইউনিয়নের একাধিক গ্রাম সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে কমপক্ষে ২-৩ হাজার মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। এছাড়াও ফরিদপুর সদর থানার ডিক্রীর ও নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন দুটির সীমান্তর্তী এলাকা গোলডাঙ্গী। এখানেও নদীভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে পাউবো চেষ্টা করলেও কোন কাজে আসছে না।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান : সদর উপজেলার ধরলা নদী তীরবর্তী পৌরসভা, হালোখানা, ভোগডাঙ্গা ও পাঁছগাছী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নিম্নাঞ্চলের সবজি ক্ষেতগুলো জলমগ্ন হয়েছে। রবিবার দুপুরে পাঁছগাছী ইউনিয়নের শুলকুর বাজার এলাকার সবজী চাষীরা নিমজ্জ্বিত ক্ষেত থেকে সবজি উত্তোলন করছিলেন। এই এলাকার উত্তর নওয়াবশ, দক্ষিণ নওয়াবশ ও ছড়ার পাড়ের অধিবাসী কাশেম, খলিল ও নুরুজ্জামান জানান, গতবার জুনের প্রথম সপ্তাহে বন্যার পানি এসে সব ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। এবার বন্যা না হলেও বৃষ্টির জলাবদ্ধতায় নীচু জমির ক্ষেতগুলো তলিয়ে গেছে। এতে শেষের দিকের ফসলগুলো প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, কুড়িগ্রাম জেলার ১৬টি নদনদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন