সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লকডাউনের মধ্যেই রাজধানীতে যানজট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৪ এএম

লকডাউনের মধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি ও মানুষের চলাচল বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের তুলনায় গতকাল ঢাকায় যানজটে ভোগান্তি বেড়েছে। যানজটের কথা স্বীকার করেছেন স্বয়ং আইজিপি ড. বেনজির আহমেদও। গতকাল রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আজকে (গতকাল) গুলশানে অনেক ট্রাফিক। প্রত্যেকে জরুরি কাজের কথা বলে বের হচ্ছে। প্রত্যেকের জরুরি কাজ। প্রত্যেকে জরুরি কাজের কথা বলে যদি ১৬-১৮ কোটি মানুষ রাস্তায় বের হয়, তাহলে আমরা (পুলিশ) ও রাষ্ট্র অসহায় হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আপনাকে সতর্ক হতে হবে। আমরা সবাই মিলে কিন্তু রাষ্ট্র। দয়া করে কেউ বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবেন না।

জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে কঠোর লকডাউন। গত ১ জুলাই থেকে লকডাউন শুরু হয়। গতকাল কঠোর লকডাউনের অষ্টম দিনে রাজধানীর সড়কে মানুষ ও যান চলাচল বেড়েছে। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তৈরি হয় যানজট। সড়কে রিকশা, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মিনি ট্রাক ভ্যানগাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

ট্রাফিক কন্ট্রোলরুম সূত্র জানায়, গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক, বাড্ডার প্রগতি সরণী, রামপুরা, বাংলামোটর, কল্যাণপুর, গাবতলী ও যাত্রাবাড়ীতে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে কারওয়ানবাজার, বাংলামটর, শ্যামলী, আসাদগেট, ফার্মগেট ঘুরে সড়কের উভয় পাশে গাড়ির বাড়তি চাপ দেখা গেছে। যানজটের কারণে সড়কে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে বিভিন্ন পরিবহনে করে বাইরে বের হওয়া মানুষকে। শুধু তাই নয়, গতকাল রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মূল সড়কই ছিল ব্যস্ত। এরমধ্যে বেশ কিছু সড়কে দীর্ঘ যানজটের চিত্রও দেখা গেছে। নগরীর মিরপুর রোড, প্রগতি সরনি, বিজয় সরনি, উত্তরা এলাকায় গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এসব সড়কের প্রতিটি সিগন্যাল পয়েন্টে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে চলাচল করতে হয়েছে যানবাহনকে।

রিকশাচালক ময়না মিয়া বলেন, লকডাউনের শুরুতে তেমন যাত্রী ছিল না। গত দুই দিন থেকে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়াও রিকশার পাশাপাশি অন্য গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। তাই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিভিন্ন চেকপোস্টে দেখা যায়, ছোট-বড় প্রতিটি গাড়ি চেকিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে যেতে দেয়া হচ্ছে, অন্যথায় মামলা করা হচ্ছে। ফলে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে ওই রাস্তায়। রাজধানীর প্রতিটি চেকপোস্টে একই অবস্থা বলে জানিয়েছেন নগরবাসী।

তবে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চেকপোস্ট অনেকটাই খালি পড়ে আছে। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা কিংবা কনস্টেবলদের আশপাশে বসে গল্প করছেন। চেকপোস্ট দিয়ে অবাধে গাড়ি চলাচল করছে। এছাড়াও ঢাকার প্রবেশমুখে যাত্রাবাড়ীতে গতকাল থেকে যানজট লেগেই ছিল। সকালে গাড়ির চাপ বাড়াতে থাকলে এই যানজট ক্রমে বাড়তে থাকে। সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাওয়ার সময় হানিফ ফ্লাইওভারের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে ওই রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহন আটকে যায়। এতে করে পেছনের দিকে লম্বা গাড়ির সারি তৈরী হয়।

এদিকে, কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা চালু থাকায় কর্মজীবী মানুষগুলোকে প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়। এছাড়াও কর্মীদের অফিস যাতায়াতের জন্য কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে। ভাড়া করা বড় বাসও রয়েছে এ তালিকায়। যাদের অফিসের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই তারা কেউ রিকশা, কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ হেঁটে অফিস যাতায়াত করছেন। অবশ্য বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। আর অনেকটা অবাধেই চলছে এসব ব্যক্তিগত গাড়ি। এর সঙ্গে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল, ব্যাচারিচালিত অটোরিকশায়ও যাত্রী নিয়ে অবাধে চলাচল করতে দেখা গেছে। যেসব এলাকায় বিশেষ অভিযান চলছে না, সেখানে এসব ব্যক্তিগত গাড়ি, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলাচলে কোনো ধরনের বাধা পেতে দেখা যায়নি।

রাজধানীর রামপুরা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কয়েকটি বড় বাস যাত্রী নিয়ে ছুটে চলছে। এ বাসগুলো কোনো না কোনো কোম্পানির ভাড়া করা। বড় বাসের পাশাপাশি প্রচুর ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এমনকি ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলও যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

রামপুরা থেকে মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন, মতিঝিল এলাকায়ও একই দৃশ্য দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গাড়ির চাপ কম থাকলেও এসব অঞ্চলে ট্রাফিকের দায়িত্বপালনকারীদের বেশ তৎপর দেখা যায়। তবে কোনো গাড়িতে তল্লাশি করার দৃশ্য দেখা যায়নি। গাড়ি সিগন্যালে থামা অথবা চলাচলের নির্দেশনা দিতে দেখা যায় ট্রাফিক সিগন্যালে দায়িত্বপালনকারীদের।

মতিঝিলের একটি অফিসে চাকরি করেন সাইদুর রহমান। রামপুরার বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে বের হওয়া সাইদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় মালিবাগ আবুল হোটেল সিগন্যালে। তিনি বলেন, লকডাউনের শুরু থেকেই আমাদের অফিস খোলা। প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়। এখনো পর্যন্ত যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি।

কাকরাইল মোড়ে কথা হয় একটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের আওতায় মোটরসাইকেল চালানো আরিফ বলেন, পার্সেল ও যাত্রী আনা নেয়ার জন্য আমাদের সেবা চালু রয়েছে। যেখানে বিশেষ অভিযান চলে, সেখানে যাত্রী নিয়ে যেত সমস্যা হয়। তাছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে কোনো সমস্যা হয় না। যাত্রীর মাথায় হেলমেট থাকলে ট্রাফিক পুলিশ কোনো বাধা দেয় না। তবে কঠোর বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সরকার করোনার সংক্রমণরোধে চলমান বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে রাজধানীজুড়েই সক্রিয় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারপরও অকারণে ও নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হচ্ছেন মানুষ। তাই বিভিন্ন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে গতকাল ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক ৯৩৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। জরিমানা করা হয় ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন