শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

তিস্তার ভয়াবহ ভাঙ্গনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে চর গাবুড়া গ্রাম

মারাত্মক হুমকির মুখে একমাত্র সর. প্রা. বিদ্যালয়

রংপুর থেকে হালিম আনছারী | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০২১, ২:৫৭ পিএম

সর্বগ্রাসী তিস্তার ভয়াবহ ভাঙ্গনে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের ‘চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। করাল গ্রাসী তিস্তা ইতিমধ্যে চর গাবুড়া গ্রামটির সবকিছুই গিলে ফেলেছে। আর মাত্র ৪টি পরিবারের বসত-ভিটা খেলেই উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এই গ্রামটি। আর তাই শেষ মুহুর্তে এসে কর্তৃপক্ষ মরিয়া হয়ে উঠেছেন একমাত্র বিদ্যালয় ‘চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’টি রক্ষার্থে।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, পীরগাছা উপজেলাও ছাওলা ইউনিয়নের দক্ষিণ চর গাবুড়া গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে রাক্ষসী তিস্তা নদী। আগে গ্রামটিতে ঘনবসতি ছিল, ছিল কোলাহল পূর্ণ শিশুদের কোলাহলে মাতোহারা ছিল গ্রামটি। শিশুর লেখা-পড়ার জন্য ১৯৯০ সালে নির্মাণ করা হয় চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টিতে শিশু শিক্ষার্থীও ছিল বেশ। করাল গ্রাসী তিস্তার ভয়াবহ ভাঙ্গনে আস্তে আস্তে গ্রামটির ঘর-বাড়ি, জমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসতে থাকে কোলাহলপূর্ণ এই গ্রামটি। ভাঙ্গনের ফলে আস্তে আস্তে বিদ্যালয়টিও নদীর কাছাকাছি আসতে থাকে। ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পিইডিপি-৩ প্রকল্পের অর্থায়নে একটি সু-স্বজ্জিত আধুনিক ভবণ গড়ে তোলা হয়। কিন্তু করাল গ্রাসী তিস্তা আস্তে আস্তে গিলে খেতে থাকে কোলাহল মুখর গ্রামটির জমি-জমা, মসজিদ, মক্তবসহ একের পর এক বসতভিটা। এখন অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৪টি বাড়ি আর একমাত্র এই বিদ্যালয়টি। এই ৪টি বসত বাড়ি ও বিদ্যালয়টি তিস্তার গর্ভে গেলেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে কোলাহলপুর্ন এই গ্রামটি।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি থেকে করাল গ্রাসী তিস্তা মাত্র ১৫ মিটার দূরেই চলে এসেছে। এতে করে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়টি। আর তাই বিদ্যালয়টি শেষ রক্ষায় নড়ে চড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ। উপজেলা প্রশাসন, স্কুল কর্তৃপক্ষ, এলাকাবাসী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যালয়টি রক্ষার্থে। দিনে-রাতে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ওই গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ি। ভাঙ্গনের ফলে এসব বাড়ির লোকজন এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসীর দাবি গত বছরেও বিদ্যালয়টি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছিল। তখনই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হলে আজ এই অবস্থা হত না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন জানান, ভাঙতে ভাঙতে নদী একেবারেই স্কুলের কাছে চলে এসেছে। স্কুলটি রক্ষায় দিন-রাত কাজ করা হচ্ছে। জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আরো কমপক্ষে ৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা দরকার। তাহলে হয়তো স্কুলটি রক্ষা করা যাবে।
নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়া খয়বার আলী, তালেব মিয়া, আমজাদ হোসেনসহ স্থানীয় লোকজন জানান, সময় মতো আগে উদ্যোগ নিলে স্কুলটি আশে-পাশের বাড়িঘরও রক্ষা পেত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের উদাসীনতার কারণে আজ আমরা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছি। তারা আরও জানান, গত ৩/৪ বছরে এই গ্রামের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, প্রায় ৫/৬ হাজার পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারা আরও জানান, অ-পরিকল্পিতভাবে দুইটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও বাঁধের পূর্বের গ্রামগুলো রক্ষা পাচ্ছে না।
নদী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হওয়া আঃ গণি জানান, ভাঙন যখন একটু দূরে ছিল তখন উদ্যোগ নিলে হয়তো এ অবস্থা হত না, বিদ্যালয়টিও রক্ষা করা সম্ভব ছিল। এ বিষয়ে বারবার কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এখন ভাঙন কাছে আসার পর জিও ব্যাগ দিয়ে তোড়জোড় চলছে। শেষ রক্ষা হবে কিনা জানিনা। তিনি আরও জানান, ছাওলার ১০নং বোল্ডারের পাড় থেকে আরও ৩ কিলোমিটার বোল্ডার দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে নদী শাসন করলে এ গ্রামগুলো রক্ষা হতো। কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিতভাবে ১নং ও ২নং বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করলেও বাঁধের পূর্ব পাড়ের গ্রামগুলো বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তাই প্রতি বছর নদী ভাঙনের ফলে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।
এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফীন জানিয়েছেন, ‘চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রক্ষায় জোর চেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে আরো জিওব্যাগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিদের্শ দেয়া হয়েছে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন