পোশাক খাত সরকারের কাছ থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা পায়, সম্ভাবনায় খাত হওয়া সত্ত্বেও চামড়াশিল্প খাত কেন সমান সুবিধা পায় না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ী, গবেষকসহ সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক। তাঁরা বলেছেন, চামড়া খাত যদি পোশাক খাতের মতো সমান সুবিধা পায়, তাহলে এই খাত থেকে বছরে এক হাজার কোটি ডলারের বেশি রফতানি করা সম্ভব। সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে এখনো কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু না হওয়ায় কঠোর সমালোচনা করেন বক্তারা।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), রিসার্চ পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (আরএপিআইডি) এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘করোনার বিরূপ প্রভাবের মধ্যে চামড়া খাতকে পুনরুজ্জীবিত করা’ শীর্ষক শিরোনামের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরসহ অন্যরা।
সালমান এফ রহমান বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে পোশাক খাত বাংলাদেশে একটি সফল খাত। সরকার পোশাক খাতকে যে যে সুবিধা দিয়েছে, একই সুবিধা চামড়া খাতকে দিলে তারাও সফল হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি বোঝার জন্য তো কমন রকেট সায়েন্স লাগে না। এটা কমনসেন্সের বিষয়। আমি বাণিজ্য সচিবকে অনুরোধে করে বলছি, চামড়া খাতকে সমান সুবিধা দেয়ার জন্য। যেটা এখন পোশাক খাতকে দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংক বলেছে, সমান সুবিধা পেলে চামড়া খাত থেকে বছরে এক হাজার ডলার পণ্য রফতানি হবে। আমি মনে করি পণ্য রফতানি এক হাজার ডলারের বেশি হবে।
সালমান এফ রহমান বলেন, এটা সত্য, সাভারে চামড়া শিল্পনগরে আমরা এখনো কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে পারিনি। কারণ, যে ঠিকাদারকে কাজটা দেয়া হয়েছিল, তাদের ভুল ছিল। আমি মনে করি তার চেয়ে বড় দোষ হলো পরামর্শক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। পরামর্শক তার কাজটা করতে পারেনি। সাংঘাতিক ক্ষতি করেছে বুয়েটের পরামর্শক।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে সিইটিপি বসানো নিয়ে দুই দশক ধরে কথা শুনে আসছি। এটা নিয়ে কত সেমিনার, কত কথা হয়েছে। অতীতে যেসব ভুল হয়েছে, তা নিয়ে আর কথা না বলি। চামড়া খাত নিয়ে একটা রোডম্যাপ করা জরুরি। একই সঙ্গে সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কেন কাজটি আপনি করতে পারলেন না, তার জবাব দিতে হবে।
বাণিজ্যসচিব বলেন, দেশে চামড়াশিল্পের যথেষ্ট কাঁচামাল থাকলেও এই খাত এখনো বিকশিত হতে পারেনি। সিইটিপি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনো চালু হয়নি। কাঁচামাল থাকলেই হবে না, এর গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে প্রচুর রাসায়নিক ব্যবহার হয়। শ্রমিকের অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে। এসব কাজ করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই চামড়া খাতের রফতানি বাড়বে।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, হাজারীবাগে আমাদের রেখে যাওয়া জমি রাজউক ‘রেড জোন’ করে রেখেছে। এটিকে সবুজ জোন করতে দিনের পর দিন বলে আসছি। ১৫ মাস হতে চলল। এখন পর্যন্ত রাজউক হাজারীবাগের জমিকে সবুজ জোন ঘোষণা করেনি। ওই জমিকে সবুজ জোন ঘোষণা করলে সে জমি বিক্রি করে আমরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারতাম। কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তার কারণে চামড়া খাত পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সরকারের কাছ থেকে নীতিসহায়তা পেলে চামড়া খাতের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। পোশাকের সঙ্গে চামড়া খাতের বৈষম্য বিরাজমান থাকায় চামড়া খাত পিছিয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, সাভারে সিইটিপি তৈরি না করেই আমাদের সেখানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকেও চাহিদামাফিক ঋণ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, পোশাক খাতের মতো চামড়া খাতকে সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দিতে হবে। তাহলে এই খাতে রফতানি বাড়বে।
অনুষ্ঠানে মোট তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। অন্য দুটি করেন যথাক্রমে আরএপিআইডির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ও আবু ইউসুফ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন