সারাদেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বোগতি থাকায় জনসমাগম এড়াতে এবার কোরবানির পশু অনলাইনে কেনাকাটার ওপর জোর দিয়েছে সরকার। এজন্য দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ১ হাজার ৮৪৩ টি অনলাইন শপের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের ২৪১টি হাটকে একটি প্লাটফর্মে যুক্ত করা হয়েছে। এসব হাটে ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯২টি কোরবানির পশুর বিস্তারিত বর্ণনাসহ ছবি আপলোড করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ১৩ লাখ ১০ হাজার ৭৩টি ও ছাগল ২ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৯টি। এসব পশুর মধ্যে গত ২ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ১৩ দিনে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮টি বিক্রি হয়েছে। যা অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড। বিক্রি হওয়া এসব পশুর মূল্য এক হাজার ৬৬৫ কোটি ৫ লাখ ১ হাজার ৬৭২ টাকা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশে কোরবানি হয়েছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার পশু। এর মধ্যে কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত অনলাইনে মাত্র ৭০ হাজার গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এবার কোরবানির এক সপ্তাহ আগেই তার তিনগুণ বেশি বিক্রি হয়েছে। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি, সরকারি উদ্যোগে পশু কেনাকাটা সহজ করা, প্রন্তিক কৃষকের সাথে ক্রেতাদের সংযোগ স্থাপন এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে আস্থা তৈরি করার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামী কয়েকদিন বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (খামার) জিনাত সুলতানা। তিনি বলেন, গত বছর ৯৪ লাখ ৫০ হাজারের মতো পশু কোরবানি হয়েছে। তার মধ্যে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। এবার এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮টি পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার করোনা পরিস্থিতি খারাপ। তাই অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির সম্ভাবনাও বেশি। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ জুলাই পর্যন্ত অনলাইনে পশু বিক্রির দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এই বিভাগে এক লাখ ৭ হাজার ৪৬৮টি গরু-মহিষ এবং ২৪ হাজার ৩০টি ছাগল-ভেড়া অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রাজশাহী বিভাগ। রাজশাহীতে ২০ হাজার ৩৮৪টি গরু ও ১৪ হাজার ৬৩৬টি ছাগল-ভেড়া অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। তৃতীয় স্থানে ঢাকা বিভাগ। ঢাকা বিভাগে মোট ২৭ হাজার ৪৩২টি গরু এবং ২ হাজার ৪২২টি ছাগল-ভেড়া বিক্রি অনলাইনে হয়েছে। চতুর্থ স্থানে রংপুর বিভাগ। এই বিভাগে অনলাইন মাধ্যমে গরু বিক্রি হয়েছে ১৯ হাজার ৩৮৪টি ও ছাগল-ভেড়া ৬ হাজার ৭৮০টি। অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রিতে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ। বিভাগটিতে বুধবার পর্যন্ত মাত্র ৯১৭টি গরু ও ৫৯টি ছাগল-ভেড়া অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।
জানা যায়, চলতি বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৯ লাখ। তার মধ্যে গরু-মহিষ ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার, ছাগল-ভেড়া ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার এবং অন্যান্য ৪ হাজার ৭৬৫টি। কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মধ্যে গৃহপালিত গবাদিপশুর সংখ্যা ৫৬ লাখ ৮০ হাজার ৪৫২টি। খামারে পালন ৬২ লাখ ৩৬ হাজার। এসব কোরবানিযোগ্য পশু উৎপাদনের খামারির সংখ্যা ৬ লাখ ৯৮ হাজার। কোরবানির পশু বিক্রির ক্ষেত্রে এবার ২৫ শতাংশ অনলাইনে বিক্রির টার্গেট নির্ধারণ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) ডা. দেবাশীষ দাশ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে জনসমাগম এড়াতে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাকাটার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। মোট পশুর ২৫ শতাংশ ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস থেকে বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন